ঝোপঝাঁড় পরিস্কারের নামে মেহেরপুর-চুয়াডাঙ্গা সড়কের পশু হাট সংলগ্ন জেলার একমাত্র সরকারি মৎস্য খামারে (আট পুকুর) গত ১ সপ্তাহ ধরে চলছে বৃক্ষ নিধনের মহোৎসব। এ নিধনের সাথে খামার ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তাসহ খামারের কর্মচারীরা জড়িত রয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। তবে খামার কর্তৃপক্ষের দাবি খামারের ঝোপঝাঁড় পরিস্কার করতে ওই বৃক্ষ নিধন।
মেহেরপুর মৎস্য খামারের ভিতর থাকা বিভিন্ন জাতের ১৫-২০ ব্ছরের পুরাতন বৃক্ষ কেটে পাওয়ার ট্রলিতে (শ্যাল ইঞ্জিন চালিত যান) করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, কয়েক জন শ্রমিক বিভিন্ন সাইজের কাঠ পাওয়ার ট্রলিতে উঠাচ্ছেন। যার মধ্যে কড়ই, কুল, শিশু, নিম ও বাবলা গাছের কাঠ রয়েছে। কাঠগুলোর অধিকাংশের সর্ব নিম্ন ব্যাস হবে ৩ ফুট। ৩ ফুট ব্যাসের ওই কাঠগুলো বিভিন্ন ফার্নিচার তৈরির কাজেও ব্যবহার করা যাবে বলে স্থানীয় কাঠ ব্যবসায়ীরা জানিয়েছে। এছাড়া আরো অনেক গাছ কেটে ফেলে রাখা হয়েছে সেখানে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন শ্রমিক জানান, কুল, বাবলা, কড়ই, নিম ও শিশুসহ প্রায় অর্ধ শত নতুন-পুরাতন গাছ কেটে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। প্রায় সপ্তাহখানেক ধরে এ কাজ চলছে বলে তিনি জানান। সেখানে কয়েক বছর আগে কাটা অনেক পুরাতন গাছের কাঠও নিয়ে যাওয়া হয়েছে বলেও জানান। এ শ্রমিক আরও জানান, এ গাছগুলির আনুমানিক মূল্য ৪-৫ লক্ষ টাকা।
এদিকে গাছ বিক্রির সাথে জড়িত অফিস সহকারির সাথে কথা বলতে গেলে তিনি সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেন। এক পর্যায়ে জেলা মৎস্য কর্মকর্তার কার্যালয়ে গিয়ে সাংবাদিকদের উপর চড়াও হন তিনি।
এসময় জেলা মৎস্য কর্মকর্তা শেখ মেছবাহুল হকের কাছে বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ঝোপঝাঁড় পরিস্কার করা হচ্ছে এমন খবর জানি। সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের মুখে পরে তিনি সাংবাদিকদের নিয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে বিষ্ময় প্রকাশ করেন। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, খামারের ঝোপঝাঁড় পরিস্কার করার কথা শুনেছিলাম। তবে ঝোপঝাঁড়ের নামে গাছ কাটা মোটেও ঠিক হয়নি। এ বিষয়ে খামার ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তার কাছে জবাব চাওয়া হবে। এছাড়া বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলেও তিনি জানান।
স্থানীয়রা জানান, গত বিশ বছরে এভাবেই বিভিন্ন অযুহাতে শতশত বৃক্ষ নিধন করা হয়েছে ওই মৎস্য খামার থেকে। নিধনের ফলে খামারটি প্রায় বৃক্ষ শুন্য হয়ে পড়ার উপক্রম হয়েছে।
এ ব্যাপারে খামার ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা ড. আসাদুজ্জামান মুঠোফোনে বলেন, খামারের ঝোঁপঝাড় পরিস্কার করা হচ্ছে। সেখানে ওই গাছের ডালপালাগুলো কেটে শ্রমিকদের মজুরি দেওয়ার জন্য জিয়ারুল ইসলাম নামের এক ব্যবসায়ীকে বলা হয়। তিনি শ্রমিক দিয়ে খামারের চারপাশের ঝোপঝাড় পরিস্কার করিয়েছেন। সেই শ্রমিকদের মজুরি দেওয়ার জন্য গাছের ডালপালা কেটে বিক্রি করছেন। তবে গাছ কাটা হয়নি বলে তিনি দাবি করেন।
তবে এক্ষেত্রে দাপ্তরিক কোনো আদেশ বা উর্ধতন কারো নির্দেশ নিয়েছেন কিনা জানতে চাইলে তিনি কোনো কথা বলেননি। এদিকে, সংবাদ পেয়ে জেলা মৎস্য অফিসে ছুটে আসেন ওই কাঠ বিক্রেতা জিয়ারুল ইসলাম। জিয়ারুল ইসলাম সাংবাদিকদের জানায়, কোনো দাপ্তরিক আদেশে না মৌখিকভাবে চুক্তির মাধ্যমে তিনি কাঠ নিয়ে যাচ্ছেন। তিনি বলেন, এ পর্যন্ত দুই দফায় ৭ ট্রলি কাঠ নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তবে ওই কাঠ বিক্রি করে যে টাকা পেয়েছেন তা দিয়েও শ্রমিকের মজুরিই পরিশোধ হবে না বলে তিনি দাবি করেন। এদিকে বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন মাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ না করার জন্য অনুরোধ করা হয়।
বিডি প্রতিদিন/৪ জানুয়ারি ২০১৭/হিমেল