নাটোরের দুইটি সরকারি বিদ্যালয়ে তৃতীয় শ্রেণির ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র তৈরি ও ভর্তি পরীক্ষায় খামখেয়ালীপনার অভিযোগ এনে ভর্তি পরীক্ষা বাতিল ও লটারির মাধ্যমে ভর্তি চালুর দাবি জানিয়েছেন অভিভাবকরা।
তাদের অভিযোগ, ভর্তি পরীক্ষার নামে যা করা হয়েছে, তা প্রহসন মাত্র। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সাথে সঙ্গতি রেখে তৃতীয় শ্রেণির পরিবর্তে ষষ্ঠ শ্রেণি থেকে সরকারি বিদ্যালয়ে ভর্তির দাবিও করেছেন অভিভাবকরা।
রবিবার দুপুরে নাটোর প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, গত ২৩ শে ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত নাটোর সরকারি বালক ও বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে তৃতীয় শ্রেণির ভর্তি পরীক্ষায় গণিত বিষয়ের জন্য নির্ধারিত ২০ নম্বরের বিপরীতে ৪০ টি প্রশ্ন করা হয়। মাত্র ১ ঘন্টায় ৪০ টি গণিত প্রশ্নের উত্তর দিয়ে অনান্য বিষয়গুলোর উত্তর দিতে গিয়ে কোমলমতি পরীক্ষার্থীরা বিভ্রান্ত হয়েছে।
ভর্তি পরীক্ষার জন্য ৩ সেট প্রশ্নপত্র তৈরী করে একটির শুরুতে বাংলা, একটির ইংরেজি ও অপরটিতে গণিত প্রশ্নের উত্তর দেয়ার জন্য দায়িত্বরত পরিদর্শকরা পরীক্ষার্থীদের বাধ্য করে। এতে করে যারা শুরুতেই প্রথমে বাংলা ও ইংরেজির প্রশ্ন সংবলিত প্রশ্নপত্র পেয়েছে তারা নির্ধারিত ৩০ নম্বরের উত্তর আগে করতে পেরেছে। আর যারা গণিত বিষয় দ্বারা শুরু করা প্রশ্নপত্রে পরীক্ষা দিয়েছে, তারা অধিক প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে অন্যদুটি বিষয়ের উত্তর দিতে পারেনি। এতে করে তারা ২০ নম্বরের উত্তর দিতে গিয়ে বাকী ৩০ নম্বরের উত্তর দিতে পারেনি। অপরদিকে, বাংলা ও ইংরেজি প্রশ্নের উত্তর আগে দেয়া পরীক্ষার্থীরা ৩০ নম্বরের উত্তর আগে দেয়ার পর বাকী ২০ নম্বরের উত্তর পরে দিয়েছে। এতে করে ৩ সেট প্রশ্নপত্রের মধ্যে ১টি সেটের পরীক্ষার্থীরা তুলনামূলকভাবে অন্যদের চেয়ে নম্বরের দিক দিয়ে পিছিয়ে গেছে। ৩ সেট প্রশ্নপত্র তৈরিতে খামখেয়ালীপনার কারণে অনেক মেধাবী শিক্ষার্থী ভর্তি পরীক্ষায় কৃতকার্য হয়নি।
জেলা প্রশাসন যদি গণিতে ২০ নম্বরের বিপরীতে ৪০টি প্রশ্ন না করতেন এবং পরীক্ষার হল পরিদর্শকরা যদি গণিতের উত্তর আগে করতে বাধ্য না করতেন, তবে এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হত না। প্রশ্নপত্র প্রণয়নকারী ও পরীক্ষা হলের পরিদর্শকদের কারণে অনেক শিক্ষার্থীকে সরকারী বিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ হারাতে হল বলে সংবাদ সম্মেলনে দাবি করা হয়।
সেলিনা আক্তার নামের এক অভিভাবক বলেন, নাটোর সরকারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে তার মেয়েকে গণিত প্রশ্নের উত্তর দিতে বাধ্য করা হয়। তা না হলে উত্তরপত্র বাতিল করার হুমকি দেন দায়িত্বরত এক শিক্ষক।
মনোয়ারা বেগম নামে অপর এক অভিভাবক বলেন, তার মেয়ে যে কক্ষে পরীক্ষা দিচ্ছিলো, সে কক্ষের ঘড়ি বন্ধ করে দেয়া হয়। আর গণিতের উত্তর যাদের আগে দিতে হয়েছে তারা অনেকেই কাঁদতে কাঁদতে পরীক্ষা কেন্দ্র থেকে বের হয়েছেন।
সংবাদ সম্মেলনে জেলা অভিভাবক ফোরামের আহ্বায় কমিটির সদস্য সাজেদুর রহমান বলেন, ভর্তিযুদ্ধ নামের মানসিক যুদ্ধে যেভাবে কোমলমতি শিশুদের নামানো হচ্ছে, তাতে শিক্ষাজীবনের প্রথমদিক থেকেই ভীতির সঞ্চার হচ্ছে তাদের মনে। তার উপর যখন ভর্তি পরীক্ষাটিই প্রশ্নবিদ্ধ হয় নানা কারণে, তখন আস্থা হারায় অভিভাবকরা।
এদিকে ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র প্রণয়নের দায়িত্বে থাকা নাটোরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) ড. চিত্রলেখা নাজনীন একটি অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের বলেন, সর্বোচ্চ সতর্কতা ও স্বচ্ছতার সাথে প্রশ্নপত্র প্রণয়ন করা হয়েছে। সকল প্রকার সুপারিশ অগ্রাহ্য করে ফলাফল দেয়া হয়েছে।
বিডিপ্রতিদিন/ ২৪ ডিসেম্বর, ২০১৭/ ই জাহান