ফুল চাষের নতুন সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে উত্তরের হিমালয় কন্যা খ্যাত জেলা পঞ্চগড়ে। অর্থনৈতিক অগ্রতির সাথে সাথে ফুলের চাহিদা যেমন বেড়েছে তেমনি ফুল চাষে আগ্রহ বাড়ছে এই জেলার ফুল চাষীদের।
মাত্র কয়েকবছর আগেও সীমান্ত পাড়ের জেলা পঞ্চগড়ে ফুলের এত চাহিদা চোখে পড়েনি। যে দুএকটি প্রতিষ্ঠান ফুলের ব্যবসা করতো । এসব প্রতিষ্ঠান যশোর বা দেশের অন্যান্য প্রান্ত থেকে ফুল কিনে এনে ব্যবসা করতো। ফলে সীমিত লাভ আর লোকসান নিয়েই ব্যবসা চালাতে হতো তাদের কিন্তু বর্তমানে পঞ্চগড়েই ফুল চাষ শুরু হয়েছে।
আর ফুল চাষ করে জেলার কয়েকজন কৃষক লাভবান হয়েছেন। ফুল চাষিরা জানিয়েছেন ফুল চাষ করে যেমন আনন্দ আছে তেমনি অন্যান্য ফসলের থেকে আয়ও বেশি করা যায়। প্রতি একর ফুল চাষে খরচের দ্বিগুণ লাভ পাওয়া যায়। অন্যান্য ফসলে ব্যয় বেশী কিন্তু আয় কম হওয়ায় এই চাষিরা ফুল চাষের দিকে ঝুঁকে পড়েছেন।
পঞ্চগড়ে নানা ধরনের ফুলের চাষ হচ্ছে । শুরুতে গাঁদা ফুল দিয়ে ফুল চাষ শুরু করেন এই এলাকার চাষিরা। আর বর্তমানে গোলাপ, রজনীগন্ধা,গ্লাডিওলাস সহ নানা জাতের ফুল চাষ করছেন ফুল চাষিরা। অনেকে ফুল ও নার্সারী ব্যবসার পাশাপাশি করছেন ফুল চাষ । ফলে এখন দেশের অন্য জেলা থেকে খুব বেশী ফুল আমদানি করতে হয়না তাদের। নিজেদের ফুল বাগানে উৎপাদিত ফুল দিয়ে নিজেদের ব্যবসার পাশাপাশি অন্য জেলায় রপ্তানী করছেন তারা। ফুলের চারা একবার লাগালে আর চারাও কিনতে হয়না তাদের। নিজেরাই চারা উৎপাদন করেন তারা।
সদর উপজেলার জগদল এলাকার ফুল চাষি কামরুজ্জামান জাহাঙ্গীর জানান, গত পাঁচ বছর আগে তার বড় ভাইয়ের পরামর্শে ফুল চাষ শুরু করেন তিনি। প্রথমে আধাবিঘা জমিতে গাঁদা ফুলের চাষ শুরু করেন। এরপর আর থেমে থাকতে হয়নি তাকে। বর্তমানে তিনি ১০ বিঘা জমিতে বিভিন্ন ফুলের চাষ করেছেন। এই দশ বিঘা জমিতে তার ব্যায় হয়েছে তিন লক্ষ টাকা। খরচ বাদ দিয়ে তিনি আয় করবেন ৫ লক্ষ টাকা। তিনি বলেন, অন্যান্য আবাদে এতো লাভ নেই। ফুল চাষে আনন্দ আছে। অনেক লোকজন দেখতে আসে।
নার্সারী ও ফুল ব্যবসায়ী আবুল কালাম গত তিন বছর থেকে ফুলের চাষ করছেন । তিনি বলেন, যশোর সহ দেশের নানা জেলা থেকে ফুল এনে ব্যবসা করতে হয়। এতে ফুল নষ্ট হয়ে যায়। অনেকসময় বড় ধরনের লোকশান হয়। তাই গ্রামে জমি বর্গা নিয়ে ফুল চাষ করছি । ফলে ব্যবসায় মার খাওয়ার সম্ভাবনা কম। তাছাড়া এখন আমি আশে পাশের জেলাগুলোতে ফুল রপ্তানী করছি।
এদিকে লেখা পড়ার পাশাপাশি এসব ফুল বাগানে কাজ করে বাড়তি আয় করছে নারী শ্রমিকরা। লেখা পড়ার খরচ জোগানের পাশাপাশি তারা সংসারের হালও ধরেছেন। মরিয়ম নার্সারীর ফুল বাগানে করেন সোনিয়া । সে স্থানীয় একটি উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়ে নবম শ্রেণীতে পড়ে। সোনিয়া জানায় সে সহ আরও কয়েকজন,ফুলবাগান পরিচর্যা, ফুল তোলা সহ নানা ধরনের কাজ করে প্রতিদিন ৩’শ থেকে ৪’শ টাকা আয় করে। এতে তাদের লেখা পড়ার খরচ হয়ে যায়। পাশাপাশি সংসারেও কিছু দিতে পারে।
ফুল চাষিরা জানান,নিজেদের ফুল বাগান থাকলে যখন ইচ্ছে চাহিদা মাফিক ফুল তোলা যায়। ফুল নষ্ট হয়না। এই চাষিদের মধ্যে অনেকেই ফুল চাষ করে শুন্য অবস্থা থেকে উঠে এসেছেন । এখন তাদের বাগানে নিজেদের পাশাপাশি কর্ম সংস্থানেরও ব্যবস্থা হয়েছে আরও অনেক শ্রমিকের । তবে চাষিরা জানিয়েছেন সরকার এগিয়ে এলে আরও সম্প্রসারিত হবে ফুল চাষ।
পঞ্চগড় সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল মতিন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, পঞ্চগড়ের মাটি উঁচু হওয়ায় এখানে ফুল চাষের ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। কয়েকজন চাষি ফুল চাষ করে লাভবান হয়েছেন । অর্থনৈতিক ভাবে এগিয়ে যাওয়া এই জেলায় ফুলের চাহিদাও বাড়ছে।
বিডিপ্রতিদিন/ ২৫ ডিসেম্বর, ২০১৭/ ই জাহান