মাদারীপুরের বিভিন্ন উপজেলায় জাল সনদ ব্যবহার করে গ্রাম পুলিশ নিয়োগের অভিযোগ উঠেছে। সম্প্রতি সদর উপজেলায় ১২ জন গ্রাম পুলিশ নিয়োগের ক্ষেত্রে এই জালিয়াতির ঘটনা ঘটেছে বলে একাধিক সূত্রে জানা গেছে।
জালিয়াতির বিষয়ে এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে মাদারীপুরের জেলা প্রশাসক, স্থানীয় সরকার বিভাগ ও দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) বরাবর অভিযোগ প্রদান করা হয়েছে।
প্রশাসন ও স্থানীয় একাধিক সূত্রে জানা যায়, মাদারীপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সাইফুদ্দিন গিয়াস গত ২১ জুন উপজেলার ৮টি ইউনিয়নে ১২ জন গ্রাম পুলিশ নিয়োগ প্রদান করেন। তবে তারা জাল সনদ ব্যবহারের মাধ্যমে আবেদন করে নিয়োগ পেয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। ভোটার তালিকা অনুযায়ী তাদের কয়েকজনের বিরুদ্ধে ভুয়া জন্ম তারিখ ব্যবহারের সত্যতা পাওয়া গেছে।
যাদের বিরুদ্ধে জাল সনদ ব্যবহারের অভিযোগ উঠেছে, তারা হলেন-মস্তফাপুর ইউনিয়নের আবুল কাসেম মাতুব্বরের ছেলে মো. জুয়েল মাতুব্বর ওরফে মো. জুয়েল হোসেন মাতুব্বর, ছিলারচর ইউনিয়নের ফজলুল হক হাওলাদারের ছেলে মিলন হাওলাদার, দুধখালী ইউনিয়নের আ. মান্নান খানের ছেলে ফেরদাউস খান জন্ম সনদসহ অন্যান্য সনদ জালিয়াতি করেছে।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, জুয়েল মাতুব্বর বড় অঙ্কের টাকার বিনিময়ে মস্তফাপুর ইউনিয়ন পরিষদের সচিব এস এম আনিসুর রহমানের সহযোগিতায় ও যোগসাজশে জালিয়াতির মাধ্যমে জাল নাগরিক সনদ, জন্ম সনদ ও শিক্ষাগত সনদ ব্যবহার করে চাকরির জন্য আবেদনপত্র দাখিল করে নিয়োগ প্রাপ্ত হন।
ভোটার নিবন্ধন তালিকা অনুযায়ী তার নাম মো. জুয়েল হোসেন মাতুব্বর এবং তার জন্ম তারিখ ১৭ অক্টোবর ১৯৮৫। আবেদনে সর্বোচ্চ বয়সসীমা নির্ধারিত ছিল ৩০ বছর। আবেদনপত্রে তার নাম পরিবর্তন করে দিয়েছে মো. জুয়েল মাতুব্বর। পত্রের সাথে তিনি অষ্টম শ্রেণি উত্তীর্ণ হওয়ার সার্টিফিকেট জমা দিলেও উক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্র হিসেবে তার কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে কয়েক জনের বিষয়ে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মো. জুয়েল হোসেন মাতুব্বর ছাড়াও আবেদনকালীন ছিলারচর ইউনিয়নের ফজলুল হক হাওলাদারের ছেলে মিলন হাওলাদারের ৩৫ বছর ৫ মাস। দুধখালী ইউনিয়নের আ. মান্নান খানের ছেলে ফেরদাউস খানের বয়স ৩৭ বছর। এছাড়া সদর উপজেলার অন্যান্য ইউনিয়নগুলোতে নিয়োগকৃতদের ক্ষেত্রেও অনুরূপ জালিয়াতি হয়ে থাকতে পারে বলে অভিযোগ পত্রে উল্লেখ করা হয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যক্তি সাংবাদিকদের জানান, অভিযুক্ত ব্যক্তিরা মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে সংশ্লিষ্ট ইউপির চেয়ারম্যান ও সচিবের সহযোগিতায় জালিয়াতির মাধ্যমে জাল নাগরিক সনদ, জন্ম সনদ ও শিক্ষাগত সনদ ব্যবহার করে নিয়োগ লাভ করেছে।
এ বিষয়ে ইউপি সচিব আনিসুর রহমান বলেন, নিয়োগ প্রদান করেছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা। নিয়োগের ক্ষেত্রে আমাদের কোনো হাত নেই। এখানে আমাদের ঘুষ গ্রহণ ও অনিয়মের অভিযোগ সত্য নয়।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে মাদারীপুরের জেলা প্রশাসক ড. রহিমা খাতুন বলেন, অভিযোগটি পেয়ে বিষয়টি তদন্তের জন্য স্থানীয় সরকারের উপ-পরিচালককে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। অভিযোগটির তদন্ত চলছে।
তদন্ত কমিটির প্রধান স্থানীয় সরকার শাখার উপ-পরিচালক আজহারুল ইসলাম বলেন, নিয়োগপ্রাপ্তদের মধ্যে কয়েকজনের অনিয়মের বিষয়ে শুনেছি। সদর উপজেলার ইউএনও মো. সাইফুদ্দিন গিয়াস কয়েকজনের বয়সের ক্ষেত্রে অনিয়ম পেয়েছেন বলে জানিয়েছেন। তবে অভিযোগের ফাইলটি সাধারণ শাখা থেকে আমার দপ্তরে এখনো পৌঁছায়নি।
বিডি প্রতিদিন/এমআই