ঘাসের ডগায় শিশিরের বিন্দু। হ্রদ, পাহাড়ে কুয়াসার হাতছানি। আর পাহাড়ে বুক চিরে মেঘ, পাখিদের লুকোচুরি খেলা। শীতলতায় স্নিগ্ধতায় গোধূলির রঙ। পূর্ণিমা রাতে কাপ্তাই হ্রদে জ্যোৎস্নার স্নান। তার সাথে নতুন বছরের আগমন। সব মিলে পাহাড়ে নামছে পর্যটকদের ঢল। প্রায় প্রতিদিন আসছে দুই থেকে চার হাজারেরও অধিক পর্যটক।
পরিবার-পরিজন নিয়ে ভিড় করছে পার্বত্যাঞ্চলে। অন্যদিকে বছরের প্রথম দিন সাপ্তাহিক ছুটির দিন হওয়ায় লাখো মানুষের অরণ্যে পরিণত হয়েছে রাঙামাটি। পর্যটকের পদচারণায় এ পাহাড় যেন এখন উৎসবের নগরী। এমন চিত্র শুধু রাঙামাটিতে নয়। পর্যটক উৎসবে মেতেছে অপর দু’পার্বত্য জেলা খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান।
শীতের শুরু থেকে সবুজ অরণ্যে রাজ্য পার্বত্যাঞ্চলে পুরোদমে শুরু হয়েছে পর্যটন মৌসুম। বইছে পর্যটক উৎসবের উল্লাস। হিম শীতের উষ্ণতা। নতুন বছরের আমেজের উৎসবকে স্মরণীয় করতে অনেকেই পরিবার-পরিজন, বন্ধ, আত্মীয় স্বজন নিয়ে ছুটে আসছে এ পাহাড়ে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার ছিল থার্টি ফাস্ট নাইট। অর্থাৎ ইংরেজি নববর্ষের আগের দিন। এ দিন থেকে রাঙামাটিতে আসতে শুরু করেছে হাজার হাজার পর্যটক। শহরের আবাসিক হোটেল, মোটেল, সরকারি রেস্ট হাউসগুলো এখন কানায় কানায় ভরপুর।
অগণিত পর্যটক আগমনে তিল পরিমাণ জায়গা খালি নেই কোথাও । আছে অগ্রিম বুকিং। সড়কে, সড়কে পিকনিক পার্টি ও
ভ্রমণ পিপাসুদের গাড়ির বহরের ভিড় যেন লেগে আছে।
সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, রাঙামাটির পর্যটন কেন্দ্রগুলো এখন লোকে লোকারণ্যে ভরপুর। প্রকৃতির টানে দূর-দূরান্ত থেকে এসেছে দেশি-বিদেশী হাজার হাজার পর্যটক। বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-স্বজনদের নিয়ে আগত পর্যটকরা রাঙামাটির ঝুলন্ত সেতু, শুভলং ঝর্ণা, পলওয়েল পার্ক, ডিসি বাংলো পার্ক ও কাপ্তাই-আসামবস্তী সড়কসহ বিভিন্ন বিনোদন কেন্দ্রে ঘুরে বেড়াচ্ছেন।
কেউ কাপ্তাই হ্রদ নৌ-ভ্রমণের আনন্দ উচ্ছ্বাসে মেতেছে। আবার কেউ প্রকৃতিকে উজাড় করে দিচ্ছে নিজেকে। বিকালের সূর্যের সোনালী রঙ যখন ছড়িয়ে পড়ে, ঠিক তখনি মানুষের ভিড় জমে পর্যটন ঝুলন্ত সেতুতে। শীতের উষ্ণতায় হ্রদ, পাহাড় আর কুয়াশার লুকোচুরি খেলার দেখা মিলে এখানে। তাতেই মুগ্ধ পর্যটকরা।
রাঙামাটি পর্যটন কমপ্লেক্স, ডিসি বাংলো পার্ক, পলওয়ে পার্ক, সুবলং ঝর্ণা, আসামবস্তি সড়ক, প্যাদা টিং টিং, বরগ্যাং ও ফুরামন পাহাড়ের মত অসংখ্য পর্যটন কেন্দ্র রয়েছে রাঙামাটিতে। এসব স্থানে পর্যটকদের জন্য গড়ে তুলে হয়েছে বিভিন্ন রেস্টুরেন্ট আর বিনোদন কেন্দ্র। রেস্টুরেন্টগুলোতে মিলছে পাহাড়ি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীদের বিভিন্ন খাবার। যার প্রতি পর্যটকদের আকর্ষণ থাকে সবচেয়ে বেশি।
এছাড়া শহরের বিভিন্ন স্থানে আছে এ অঞ্চলের মানুষের দেশিও পোশাক ও পণ্য সামগ্রী। যারা ঘুরতে আসছে তারাও ছুটে যাচ্ছে এসব শপিং-মলে। ফলে চাঙা হয়ে উঠছে স্থানীয় ক্ষুদ্র পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসাগুলো। একই সাথে ব্যস্ত সময় পাড় করছে কাপ্তাই হ্রদের নৌ- টুরিস্ট বোর্ট ব্যবসায়ীরা। দিন রাত ছুটছে তারা কাপ্তাই হ্রদ ভ্রমণ পিপাসুদের নিয়ে।
রাঙামাটি পর্যটন মোটেল ও হলিডে কমপ্লেক্সর ব্যবস্থাপক সৃজন বিকাশ বড়ুয়া জানান, এবার শীত মৌসুমে পাহাড়ে আগের মত পর্যটকদের আনাগোনা নেই। তবে নতুন বছরকে কেন্দ্র করে কিছু পর্যটক আসছে এখানে। আগে এসময় প্রতিদিন ১০ থেকে ১৫ হাজার পর্যটক।
কিন্তু এখন ৪ থেকে ৫ হাজার পর্যটক আসছে এখানে। তাই আমাদের ৬০ লাখ টাকা লক্ষ্য মাত্রা থাকলেও গত এক মাসে রাঙামাটি পর্যটন কমপ্লেক্সে ৪৫ লাখ রাজস্ব আয় হয়েছে। তবে ইংরেজি নতুন বছরকে ঘিরে এখন ৯০ ভাগ পর্যটক মোটেল বুকিং রয়েছে।
বিডি প্রতিদিন/আবু জাফর