পশ্চিমাকাশে লাল হয়ে ডুবে গেছে সূর্য। ক্যালেন্ডারের পাতা থেকে বিদায় নিচ্ছে ২০২১ সাল। সফলতা-ব্যর্থতার হিসাব ভুলে সুন্দর আগামীর প্রত্যাশায় সাগরকন্যা কুয়াকাটার সৈকতে গোধুলী লগ্নে বছরের শেষ সূর্যকে বিদায় জানিয়েছেন পর্যটকরা। আর বিদায় বেদনার মাঝেই প্রভাতে নতুন সূর্য দেখার প্রতীক্ষায় তারা। আনন্দ উপভোগ করতে দেশি-বিদেশি সমুদ্রপ্রেমী মানুষের পদচারণায় মুখরিত কুয়াকাটার বেলাভূমি। আবাসিক সংকট ও অতিরিক্তি ভাড়া নিয়ে অনেকের অসন্তোষ থাকলেও নিরাপত্তা আর আতিথিয়তায় মুগ্ধ পর্যটকরা।
বিভিন্ন দর্শনীয় স্পট ঘুরে দেখা গেছে, কেউ ঘোড়ায় চড়ছে, কেউ সৈকতে সাগরের ছোট ছোট ঢেউয়ে সঙ্গে গোসল করছে। কেউ কেউ প্রিয়জনের হাত ধরে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। কেউবা আবার গা ঘেঁষে উপভোগ করছেন প্রাকৃতিক সৌন্দর্য। এমন দৃশ্য আবার নিজ নিজ হাতে থাকা স্মার্টফোনে সেলফিতে ধারণ করেছেন অনেকে। পর্যটকের এমন ভিড়ে পর্যটনসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা ফিরে পেয়েছেন প্রাণচাঞ্চল্য। পর্যটকদের আগমনে সর্বত্রই উৎসবের আমেজ বইছে। আবাসিক হোটেল, খাবার হোটেল, ঝিনুক ও শুটকির দোকানসহ পর্যটনমুখী ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোতে বেচা-কেনার ধুম পড়ে গেছে।
পর্যটকরা জানান, ২০২১ সালের দুঃসহ সব স্মৃতি ধুয়েমুছে ২০২২ সালের সূর্যোদয়ের সঙ্গে একটি নতুন পৃথিবী দেখার প্রত্যাশা তাদের। তারা চান নতুন বছর করোনামুক্ত পৃথিবী হোক। তারা আরও জানান, করোনা পরিস্থিতির পর দীর্ঘদিন কোথাও যাওয়া হয়নি। বছরের শেষ ও নতুন বছরের আগমনটা উপভোগ করতে আসা কুয়াকাটায়।
এদিকে থার্টি ফাস্ট নাইট উপলক্ষ্যে কুয়াকাটায় কোনো আয়োজন না থাকলেও দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এখানে ছুটে এসেছেন হাজারো পর্যটক। আগামী দু’চার দিন এরকম চাপ থাকবে। তবে কিছু কিছু অভিযাত হোটেলে থার্টি ফাস্ট নাইটে পর্যটকদের লাইভ কনসার্ট, ডিজে পার্টি ও ফানুস উৎসবের আয়োজনের কথা ট্যুরিজাম ব্যবসায়ীরা জানান।
পর্যটক তানভির হাসান বলেন, শহরের একঘেয়ে জীবন থেকে একটু পরিত্রাণ পেতে সপরিবারে কুয়াকাটায় এসেছি। এখানে প্রকৃতির গড়া নির্মল শোভা আমাদের মুগ্ধ করেছে। বছরের শেষ সূর্যাস্ত সাগরের মাঝখানে নিমজ্জিত হতে দেখেছি। আশা করি, এ সৈকতে দাঁড়িয়ে ২০২২ সালের প্রথম সূর্যোদয় দেখব। অপর এক পর্যটক মিজানুর রহমান বলেন, সূর্যাস্তের মনোলোভা দৃশ্য সমস্ত ক্লান্তি দূর করে দিয়েছে আমাদের। এখানকার ছবি আমার ফেসবুকেও আপলোড করে দিয়েছি।
কুয়াকাটা আবাসিক হোটেল মালিক সমিতির সভাপতি মো.শাহ আলম হাওলাদার জানান, সমিতির আওতাভুক্ত আবাসিক হোটেলের সকল রুমই বুকিং হয়ে গেছে। তবে পর্যটকের ভিড়কে পুঁজি করে কেউ অতিরিক্ত ভাড়া আদায় না করতে পারে সেজন্য সাবক্ষণিক তদারকি করা হবে বলে তিনি জানিয়েছেন।
ট্যুরিস্ট পুলিশ কুয়াকাটা জোনের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার আবদুল খালেক বলেন, ইংরেজি নতুন বছর বরণে অসংখ্য পর্যটকের আগমন ঘটেছে। পর্যটকের নিরাপত্তায় ট্যুরিস্ট পুলিশের পাশাপাশি অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। দর্শনীয় স্পটগুলোতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। এ ছাড়া সাদা পোশাকে গোয়েন্দা নজরদারিও রয়েছে।
বিডি প্রতিদিন/জুনাইদ আহমেদ