হঠাৎ করেই গত কয়েকদিনে দেবে গেছে প্রায় অর্ধশতাধিক বসতবাড়ি। ফাটল দেখা দিয়েছে আরো কিছু জায়গায়। এ ঘটনায় ধসে গেছে তিনটি বসত ঘর, কয়েকটি রান্নাঘর, বেশকিছু টয়লেটসহ অসংখ্য পাকা-কাঁচা স্থাপনা। বসতবাড়ি দেবে যাওয়ায় আতঙ্কের মধ্যে রয়েছে নদী তীরের কয়েকশ পরিবার। বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশংকায় অনেকেই সরিয়ে নিচ্ছে বসতঘর। কেটে ফেলছেন বড় বড় বিভিন্ন প্রজাতির গাছপালা।
ঘটনাটি ঘটেছে ফরিদপুর শহরের পৌর এলাকার ১৩ নং ওয়ার্ডের পশ্চিম খাবাসপুর এলাকার কুমার নদের তীরে। এ বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য স্থানীয় এলাকাবাসী পৌরমেয়র ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের কাছে আবেদন করেছেন।
স্থানীয় এলাকাবাসী জানান, শহরের পশ্চিম খাবাসপুর মহল্লার ১৩ নং ওয়ার্ডের চৌধুরী বাড়ী থেকে শুরু করে সূফি আব্দুল বারী সড়কের কাড়ালপাড়া ও শামসুল উলুম মাদ্রাসা ঘাট পর্যন্ত ১ কিলোমিটার কুমার নদের তীরে হঠাৎ করেই মাটিতে ফাটল দেখা দেয়। ফাটলের কারণে ইতোমধ্যে দেবে গেছে কমপক্ষে ৪০টি বসতবাড়ি ও বিভিন্ন স্থাপনা। প্রতিদিনই ফাটল দীর্ঘ হচ্ছে। যে কোন সময় বড় ধরনের বিপর্যয়ের আশংকা করছে এলাকাবাসী।
সরেজমিন ঘটনাস্থলে গিয়ে কথা হয় স্থানীয় বাসিন্দা লিয়াকত হোসেন লিটন, তৌহিদুল ইসলাম, হেলেনা বেগম, খ.ম গোলাম আজমসহ বেশ কয়েক জনের সাথে। তারা জানান, গত কয়েকদিন ধরে নদের পাড়ে ফাটল দেখা দেয়। গত মাসে ভূমিকম্পের সময় এলাকার কয়েকটি বাড়িতে ফাটল দেখা দেয়। পরে নদের পাড়ের বিভিন্ন অংশে বড় বড় ফাটল দেখা দেয়। সেই ফাটল গত এক সপ্তাহ আগে ভয়াবহ আকার ধারণ করে। হঠাৎ করেই একে একে দেবে যায় কমপক্ষে অর্ধশতাধিক বসতবাড়ি ও বিভিন্ন স্থাপনা। এছাড়া ফাটল দেখা দিয়েছে আরো কিছু বাড়িতে। ৫ ফুট থেকে শুরু করে কোথাও কোথায় ১০-১৫ ফুট পর্যন্ত দেবে গেছে। ইতোমধ্যেই নদীতে ধসে গেছে কয়েকটি বাড়ির ঘর ও গাছপালা। ক্রমেই ফাটল দীর্ঘায়িত হওয়ায় আতংক নিয়ে নদীপাড়ের কয়েকশ মানুষ দিনযাপন করছেন। ফাটলের কারণে বড় ধরনের বিপর্যয় থেকে রক্ষা পেতে অনেকেই তাদের ঘর বাড়ি সরিয়ে নিচ্ছে। কেটে ফেলা হচ্ছে গাছপালা। ফাটলের হাত থেকে ঘর বাড়ি রক্ষা করতে অনেকেই বাশ ও গাছের বল্লি গাড়ছেন।
স্থানীয়রা জানান, শুস্ক মৌসুমে কুমার নদের পানি কমে যাওয়ায় ফাটলের আকার ক্রমেই বড় আকার ধারণ করছে। তবে কি কারনে এমন ফাটল দেখা দিয়েছে তা কেউই বলতে পারছেসনা। তবে, সচেতন মহল মনে করেন, ভূমিকম্পের কারণে এমন ফাটলের সৃষ্টি হয়ে থাকতে পারে। ফাটল দেখা দেওয়ায় ও ঘরবাড়ী দেবে যাওয়ার বিষয়টি স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলরকে জানানো হয়। পরে স্থানীয়রা পৌরমেয়র ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের কাছে লিখিত আবেদন জানিয়েছেন দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য।
পৌরসভার ১৩ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মিজানুর রহমান মিনান জানান, বেশকিছু ঘর বাড়ি দেবে যাওয়ায় সেখানকার বসতিদের মাঝে আতংক বিরাজ করছে। বিষয়টি নিয়ে পৌর মেয়রের সাথে তিনি কথা বলেছেন। পানি উন্নয়ন বোর্ডের মাধ্যমে নদীর তীরে কাজ করা হবে। এ বিষয়ে পৌর মেয়র অমিতাব বোস জানান, স্থানীয় এলাকাবাসীর কাছ থেকে তিনি বিষয়টি জেনেছেন। দ্রুতই ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডের সুদৃষ্টি কামনা করেন।
ফরিদপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী পার্থ প্রতিম সাহা জানান, বিষয়টি তাদের নজরে রয়েছে। ঘটনাস্থলে সরেজমিন গিয়ে সবকিছু দেখা হয়েছে। মাটির তলদেশে ধস হওয়ার কারণে ফাটলের সৃষ্টি হয়েছে। বিষয়টি জরুরী আখ্যা দিয়ে একটি ডিজাইন ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। আশা করা হচ্ছে, দ্রুতই কাজ করা যাবে।
বিডি-প্রতিদিন/সালাহ উদ্দীন