চলচ্চিত্রে নকলের মহোৎসব থামছেই না। সেন্সর বোর্ডও তাদের দায়িত্ব পালন করছে না। আগে গান, গল্প নকল হতো। আর এখন ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক থেকে শুরু করে পোস্টার পর্যন্ত নকলের কবলে পড়েছে। এতে দেশীয় চলচ্চিত্রের প্রতি দর্শকের অনীহা বাড়ছেই। ধ্বংস হচ্ছে প্রধান গণমাধ্যম চলচ্চিত্র। বর্তমানে বছরে মুক্তিপ্রাপ্ত চলচ্চিত্রে শতকরা ৯৮ ভাগই নকল। ক্ষোভের সঙ্গে কথাগুলো জানান বেশ কজন চলচ্চিত্রকার।
স্বাধীন দেশে ১৯৭৪ সালে সর্বপ্রথম নকলের দায়ে সেন্সর বোর্ড আটকে দিয়েছিল 'অগ্নিশিখা' শিরোনামের একটি চলচ্চিত্রকে। এটি কলকাতার ব্যবসাসফল 'মায়ামৃগ' চলচ্চিত্রের নকল ছিল। এরপর সেন্সর বোর্ডের ছাড়পত্র নিয়ে মুক্তি পায় অনেক নকল গল্পের চলচ্চিত্র। অজানা কারণে নকল চলচ্চিত্রকে ছাড়পত্র দিতে শুরু করে সেন্সর বোর্ড। এ ধারাবাহিকতা এখনো চলছে। বর্তমানে নকলবাজরা এতটাই বেপরোয়া হয়ে উঠেছে যে, তারা রীতিমতো যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকেও তামিল চলচ্চিত্রের গল্প নকল করার কথা সদর্পে বলে বেড়াচ্ছে। এতে নতুন গল্পকারদের মধ্যে অবৈধ কাজের ক্ষেত্রে ভীতি নষ্ট হচ্ছে। সম্প্রতি চিত্রনাট্যকার আবদুল্লাহ জহির বাবু ফেসবুকে বড় গলায় নিজের নকলের কথা বলেছেন। এরই মধ্যে তিনি শীর্ষ নকলবাজ হিসেবে চিহ্নিত। এরপর তার এই অসৎ উল্লাসে সচেতন চলচ্চিত্রকর্মীরা স্তম্ভিত। দিনের পর দিন নকল ছবির গল্প-চিত্রনাট্য করে তা আবার প্রকাশ্যে বলে বেড়াচ্ছে, কিন্তু সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ নিশ্চুপ থাকায় ক্ষুব্ধ অনেকে।
সেন্সর বোর্ডের সদস্য ও প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার নায়করাজ রাজ্জাক বলেন, 'বিষয়টি খুবই দুঃখজনক। এতে আমাদের চলচ্চিত্র কুলষিত হচ্ছে। তাই নকল প্রবণতা রোধে সেন্সর বোর্ড ও এফডিসি কঠোর পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে। চলচ্চিত্র নির্মাণে এফডিসিতে গল্প জমা দিয়ে অনুমতি নিতে হবে। শীঘ্রই এফডিসি এ বিষয়ে ঘোষণা দেবে। আর সেন্সর বোর্ড থেকে নকল চলচ্চিত্র যাতে কোনোভাবেই ছাড় না পায় সে জন্য চলতি সপ্তাহেই মেম্বারদের বৈঠক হবে। এতে প্রযোজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে'।
প্রখ্যাত অভিনেতা ফারুক বলেন, যাদের মেধা ও জ্ঞানের অভাব এবং যাদের মধ্যে দেশপ্রেম নেই, তারাই এমন গর্হিত কাজ করে। এ ছাড়া কতিপয় অসাধু লোক পরিশ্রম না করে রাতারাতি অর্থবিত্তের মালিক হতে চায়। এরা নকলের আশ্রয় নিয়ে আমাদের চলচ্চিত্রের বারোটা বাজাচ্ছে। এসব লোক চলচ্চিত্র, চিত্রনাট্য, গল্প, অভিনয় নকল করার পর বড় গলায় বলে বেড়ায়। আমি বলি আপনারা কি দেশটাকে মগের মুল্লুক পেয়েছেন। চুরি করে আবার ঢোল পেটান। আসলে এ অবস্থার জন্য সর্বপ্রথম সেন্সর বোর্ড দায়ী। নকল চলচ্চিত্রের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে না পারলে সেন্সর বোর্ডের প্রয়োজন কি!'
চলচ্চিত্রকার আজিজুর রহমান বলেন, আমাদের দেশে ভালো লেখকের অভাব নেই। তারপরও কেন অনেকে বিপথে গিয়ে এই শিল্পকে কলঙ্কিত করে বুঝি না। এদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থার বিধান করতে হবে। না হলে এই চৌর্যবিত্তি রোধ করা যাবে না। এ ছাড়া সেন্সর বোর্ডকে যথাযথভাবে দায়িত্ব পালন করতে হবে। নকল রোধে প্রয়োজনে সেন্সর নীতিমালাকে যুগোপযোগী করে গড়ে তুলতে হবে।
চলচ্চিত্রকার ছটকু আহমেদ বলেন, যে হারে হিন্দি বা তামিল ছবির গল্প নকলের মহোৎসব চলছে, তা সত্যিই আশঙ্কাজনক। এভাবে নকল না করে ছায়া অবলম্বনে নির্মাণ করা যেতে পারে, যা সচরাচর সব দেশেই হয়ে থাকে। নকলের এই ব্যাপকতা ঠেকানো না গেলে দর্শক একেবারেই দেশীয় চলচ্চিত্রবিমুখ হয়ে পড়বে।