ভূমি প্রাপ্তির ৩৫ বছর পরেও গড়ে ওঠেনি বাংলাদেশ ফিল্ম সিটি। পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে ১৫০.১১৭ একর জায়গা। জায়গাটি এখন অসামাজিক কার্যকলাপের চারণভূমিতে পরিণত হয়েছে। এতে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে আশপাশের মানুষের মনে। তবে এফডিসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক হারুন-অর-রশীদ বলেন, চলতি বছরই উন্নয়ন কাজ শুরু হচ্ছে। সরকারের কাছে জমা দেওয়া ৩০ কোটি টাকার প্রকল্প প্রস্তাব শিগগিরই পাস হচ্ছে।
চলচ্চিত্রের আউটডোর-ইনডোর শুটিংয়ের সুবিধার্থে চলচ্চিত্রকারদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ১৯৭৯ সালে গাজীপুরের কালিয়াকৈরের আন্দারমানিক গ্রামে ফিল্ম সিটি নির্মাণে সরকার ভূমি বরাদ্দ দেয় এবং তা এফডিসির অন্তর্ভুক্ত করে। তখন তথ্য মন্ত্রণালয়কে ফিল্ম সিটি গড়ার প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণের নির্দেশ দেয়। মন্ত্রণালয় একটি পরিকল্পনা জমা দিলেও তা আর আলোর মুখ দেখেনি। চলচ্চিত্রকারদের অব্যাহত দাবির মুখে পরিকল্পনা জমা দেওয়ার ২৩ বছর পর ২০০২ সালে এফডিসির তৎকালীন এমডি ওয়াসিমুল বারী রাজীব বিষয়টি আবার সরকারের নজরে আনেন। ফলে তথ্য মন্ত্রণালয় তখন সফিপুর আনসার একাডেমি থেকে আন্দারমানিক গ্রামের ফিল্ম সিটি পর্যন্ত রাস্তাটি পাকা করে দেয় এবং ফিল্ম সিটিতে ১৫ কক্ষের সেমি-পাকা ঘর নির্মাণ করে। এর মধ্যে দুটি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ভিআইপি কক্ষের ব্যবস্থা থাকে। একই সঙ্গে লেক তৈরি এবং স্থানটি কাঁটাতারে ঘিরে দেওয়া হয়। ব্যস, ওই পর্যন্তই। থেমে যায় নির্মাণ কাজ।
আবারও চলচ্চিত্রকারদের অব্যাহত দাবির মুখে ২০১০ সালে সরকার নতুন কর্ম-পরিকল্পনা গ্রহণ করে। এতে ব্যয় ধরা হয় ৬০ কোটি টাকা। কথা ছিল দেড় বছরের মধ্যে ফিল্ম সিটি পূর্ণাঙ্গ রূপ পাবে। কিন্তু নানা জটিলতায় সেই উদ্যোগও ভেস্তে যায়।
চলচ্চিত্রকারদের অভিযোগ, ৩৫ বছরে ফিল্ম সিটিতে কখনো চলচ্চিত্রের শুটিং হয়নি। বনভোজনের জন্য বাইরের পার্টির কাছে জায়গাটি ভাড়া এবং লেকে মাছের চাষ ও তা বিক্রি করে সেই অর্থ এফডিসিতে জমা হয়। তা দিয়ে বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ এবং প্রহরীদের বেতন দেওয়া হয়।
সরেজমিন পরিদর্শনকালে দেখা গেছে পরিত্যক্ত ভূমির মধ্যে নোংরা অবস্থায় রয়েছে সেমি-পাকা ঘরগুলো। আবর্জনার স্তূপ জমেছে জায়গাটিতে। আশপাশের মানুষের অভিযোগ, সন্ধ্যা হলেই এখানে বসে মাদক সেবনের আসর। সেই সঙ্গে চলে অসামাজিক কার্যকলাপ। ভূমির পাশের বাসিন্দা লিয়াকত আলী বলেন, প্রতি রাতেই এখানে অবাধে চলে এসব কর্মকাণ্ড। নিরাপত্তারক্ষীদের চোখের সামনেই ঘটে এসব।
ফিল্ম সিটির ভূমির রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে রয়েছে একজন ইনচার্জ, তিনজন সিকিউরিটি গার্ড ও একজন মালি। গার্ড আকরাম হোসেন বলেন, এখানে কখনো সিনেমার শুটিং হতে দেখিনি। পরিত্যক্ত জায়গাটি দীর্ঘদিন পাহারা দিচ্ছি। তবে মাদক ও অসামাজিক কার্যকলাপের কথা অস্বীকার করেন তিনি।
স্থানীয় প্রবীণ আসমত আলী জানান, এটি এখন ফিল্ম সিটি নয়, অবৈধ ও অসামাজিক কার্যকলাপের আখড়া। এখানে মাদকদ্রব্য বিক্রিও হয়। আশপাশের গ্রাম থেকে আসে মাদকসেবীরা। এ ছাড়া ভূমিটিকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে ছিনতাই-রাহাজানির মতো অপরাধমূলক কার্যকলাপের নিরাপদ আখড়া।
ফিল্ম সিটির ভূমিতে রয়েছে চারটি লেক, বেশ কিছু খেজুর গাছ, তিনটি শালবন, চারটি আকাশমনি বাগান। স্থানীয় মো. আলী এফডিসি থেকে লিজ নিয়ে ভিতরের কিছু অংশে ধান চাষ করছেন।
ইনচার্জ মো. লিয়াকত আলী বলেন, এফডিসির সাবেক এমডি ওয়াসিমুল বারী রাজীবের মৃত্যুর পর আর কোনো এমডি ফিল্ম সিটির উন্নয়নে উদ্যোগ নেননি।
এফডিসির এমডি হারুন-অর-রশীদ জানান, গত বছরের এপ্রিলে এফডিসির এমডি হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর পরই ফিল্ম সিটি নির্মাণে উদ্যোগ গ্রহণ করেন তিনি। ২০১৪-১৫ অর্থবছরের সরকারি প্রকল্প তালিকায় ফিল্ম সিটির উন্নয়ন অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে এটি অনুমোদন পায় এবং প্রজেক্ট সাবমিট করতে বলা হলে গত ডিসেম্বরে ৩০ কোটি টাকার একটি প্রজেক্ট সাবমিট করা হয়। এমডি আশা প্রকাশ করে বলেন, শিগগিরই এটি অনুমোদন পাবে এবং জুলাই থেকে কাজ শুরু করা সম্ভব হবে।
ফিল্ম সিটির উন্নয়ন প্রজেক্টে রয়েছে পুকুরঘাট বাঁধাইসহ নানা এলিমেন্ট তৈরি। শুটিং লোকেশনের জন্য তিনটি পাকা ও তিনটি আধাপাকা দৃষ্টিনন্দন বাড়ি নির্মাণ। গ্রামীণ আবহ তৈরি, রেললাইন, রানওয়ে স্থাপন, ব্রিজ, বাগান, পাহাড় তৈরি। শুটিং ইউনিটের জন্য রেস্ট হাউস, শুটিং ফ্লোর নির্মাণ, আউটডোর-ইনডোর শুটিংয়ের পূর্ণাঙ্গ ব্যবস্থা করা, বাউন্ডারি ওয়াল নির্মাণ প্রভৃতি। তিনি আরও বলেন, আপাতত লাইট ছাড়া অন্য কোনো ইক্যুইপমেন্ট নেই প্রজেক্টে। দ্বিতীয় ধাপে ইক্যুইপমেন্টের ব্যবস্থা করা হবে।