কেমন আছেন?
বয়স'ত আর কম হলো না, এই সময় যতখানি ভালো থাকা যায় আর কি।
মুক্তিযুদ্ধের সময় সংগীত ছিল অস্ত্র। আপনারা তো শব্দসৈনিক।
এ কথায় আমার কিছুটা আপত্তি আছে। কারণ আমরা যুদ্ধের সময় মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে অনুপ্রেরণা জুগিয়েছি গান দিয়ে। সেদিক থেকে বিবেচনা করলে আমরা ছিলাম সংগীতযোদ্ধা। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে আমাদের গাওয়া বিভিন্ন গান মুক্তিযোদ্ধাদের প্রেরণা ও মনোবল বাড়িয়েছে। বাঙালির মহান মুক্তিযুদ্ধে কেউ অস্ত্র হাতে যুদ্ধ করেছেন, আবার কেউবা করেছেন অদম্য সাহস বুকে নিয়ে কণ্ঠ দিয়ে, সুর দিয়ে, যা উজ্জীবিত করেছে সমগ্র বাঙালি জাতিকে।
স্বাধীনতার মাস শুরু হয়েছে। এ নিয়ে কিছু করছেন?
সারা বছর আমাদের কোনো খোঁজখবর না থাকলেও স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস ও একুশে ফেব্রুয়ারিতে আমাদের কদর বেড়ে যায় জাতির কাছে। এটাইবা কম কি? ফলে মার্চ থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত আমার বেশকিছু কাজ করার প্ল্যান আছে। যদি শরীরটা ঠিক থাকে তাহলে করব।
যুদ্ধে যাওয়ার গল্পটি একটু শুনতে চাই?
সারা শহরে তখন আর্মি ছাড়া সাধারণ মানুষ রাস্তায় ছিল না বললেই চলে। আগুন জ্বলছিল। আর্তনাদ, গুলির শব্দ, পাক সেনাদের ট্যাঙ্ক আর লরির শব্দে আকাশ বাতাস কেঁপে কেঁপে উঠেছিল। ছায়ার মধ্যে লুকিয়ে, কোনো বাড়ির পাঁচিল টপকে কোনোমতে গিয়ে পৌঁছলেন বঙ্গবন্ধুর ৩২ নম্বর বাড়িতে। সেখান থেকে রায়ের বাজারের দিক দিয়ে বুড়িগঙ্গা সাঁতরে পার হতে গিয়ে পড়ি এক বিপদে। কিছুক্ষণ সাঁতার দিতেই বেশ কিছু স্থানীয় লোক আর এক নৌকার মাঝি আমাকে পাকিস্তানিদের অনুচর ভেবে ধরে ফেলল। বারবার বলেও তাদের মানাতে পারিনি। আমাকে ধরে নিয়ে গেল স্থানীয় এক আওয়ামী লীগ নেতার বাসায়। সেই নেতা তাকে চিনতে পারলেন এবং তাকে ছেড়ে দিলেন। সেই নেতার নির্দেশে মাঝি নৌকা দিয়ে আমাকে নদী পার করে দিল। এরপর আমার এক আত্দীয়ের বাড়ি রাতটা কাটিয়ে রওনা হলাম কলকাতার উদ্দেশে। হাঁটতে হাঁটতে দোহার, নবাবগঞ্জ হয়ে পৌঁছলাম আমার গ্রামের বাড়ি কুষ্টিয়াতে। এরপর মেহেরপুর যশোর হয়ে বেনাপোল বর্ডার দিয়ে চলে যাই ভারতে। কলকাতায় গিয়ে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে যোগ দেই আমি। সেই সময় কলকাতা থেকে মাঝে মাঝে আগরতলায় বেতারের কেন্দ্রীয় শাখাতে এসেও গান করতাম আমি ।
বিটিভিতে নাকি একটি গানের অনুষ্ঠানের কথা ভাবছেন?
এখনো ভাবিনি কি করব। তবে ভাবছি একটি গানের অনুষ্ঠান করব। এ ছাড়া বিটিভির জনপ্রিয় গানের অনুষ্ঠান 'তারা ভরা রাতে' আমার তত্ত্বাবধানেই তৈরি হচ্ছে। আর বিটিভিতে এ অনুষ্ঠানটি জনপ্রিয়।
স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের অনেক গান হারিয়ে যাচ্ছে।
আমি কিছু স্বপ্ন দেখছি। আমি ভাবছি, স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের বন্ধুরা মিলে সেই গানগুলোর স্বরলিপি-সুরগুলোকে নতুন করে গুছাব। আপাতত এটাই মূল ভাবনা।
নতুন প্রজন্মের সংগীতশিল্পীদের নিয়ে কিছু বলুন।
আমি ১৯৭৩ সালে বঙ্গবন্ধু স্বর্ণপদক, ১৯৮০ সালে একুশে পদক, ১৯৯৬ সালে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার, জহির রায়হান চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছি। আজও আমি মনে করি, আমার আরও শিখতে হবে। কিন্তু এখনকার শিল্পীদের মধ্যে এ শেখার প্রবণতা খুব কম।
* আলী আফতাব