ভারতের সাবেক অর্থমন্ত্রী ও কংগ্রেস নেতা পি চিদাম্বরম গতকাল স্বীকার করেছেন যে সালমান রুশদির লেখা 'সাটানিক ভার্সেস' নিষিদ্ধ করা তখনকার ভারত সরকারের ভুল সিদ্ধান্ত ছিল। ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের সাবেক কোনো মন্ত্রী যখন ভুল স্বীকার করতে পারেন তখন পশ্চিমবঙ্গ সরকার কেন তসলিমা নাসরীনের লেখা 'দ্বিখণ্ডিত' বই নিষিদ্ধ করা নিয়ে ভুল স্বীকার করতে পারেন না-এমন এক প্রশ্ন রেখেছেন ওই লেখিকা। তসলিমা নাসরীনের এমন প্রশ্নের জবাবে পশ্চিমবঙ্গের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য জানিয়েছেন যে, তিনি অনেকটা বাধ্য হয়েই 'দ্বিখণ্ডিত' নিষিদ্ধ করেছিলেন।
পি চিদাম্বরমের ভুল স্বীকার করার প্রেক্ষিতে সালমান রুশদিও একটি টুইট করেছেন। এতে তিনি লিখেন, '২৭ বছর পরে এই স্বীকারোক্তি। এই ভুল শোধরানোর আগে আরো ক’টা ভুল হবে?'
চিদাম্বরমের ভুল স্বীকার করার প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন তসলিমা নাসরিনও। বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের প্রতি সরাসরি প্রশ্ন রেখে তসলিমা নাসরীন এক টুইট বার্তায় লিখেন, 'সাটানিক ভার্সেস’ নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত ভুল ছিল। বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য কবে বলবেন আমার বই 'দ্বিখণ্ডিত' নিষিদ্ধ করাও ভুল ছিল?'
তসলিমার টুইট প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে বুদ্ধদেব বলেন, 'বিতর্ক খোঁচাতে চাই না। তবে আমি মৌলিকভাবে কখনো কোনো বই নিষিদ্ধ করার বিপক্ষে। ব্যক্তিগতভাবে আমি এভাবে ভাবিই না। কিন্তু ওই বইটার (দ্বিখণ্ডিত) সময় মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে বাধ্য হয়েছিলাম।'
বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের বক্তব্যে সমর্থন জানিয়ে সিপিএমের দলীয় সূত্রেও দাবি করা হয়েছে, ওই সময় আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভালো ছিল না। শহরের বেশ কিছু বিশিষ্টজনের কাছে মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য জানতে চেয়েছিলেন, কী করব? তাদের বেশির ভাগ যা চেয়েছিলেন, সেটাই হয়েছিল। সিদ্ধান্তটা ঠিক ছিল কিনা, সে প্রশ্ন পরেও তাড়িয়ে বেড়িয়েছে বলেও সিপিএম নেতাদের একাংশের দাবি।
এক যুগ আগে 'দ্বিখণ্ডিত নিষিদ্ধ করার কথা যখন ভাবা হচ্ছিল তখনো প্রশ্ন করা হয়েছিল বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যকে। তখন তিনি বলেছিলেন, 'আমি নিজে বইটা পড়েছি। বইটা তাদেরই পড়িয়েছি, যাদের মতামতের গুরুত্ব আছে। তারপর ওই সিদ্ধান্ত নিয়েছি।' গণতান্ত্রিক দেশে কোনো বই নিষিদ্ধ করা লেখক-শিল্পীর স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ কিনা জানতে চাওয়া হলে তখন বুদ্ধদেব নিরুত্তর ছিলেন। সিপিএমের তখনকার রাজ্য সম্পাদক অনিল বিশ্বাস বলেছিলেন, 'বইটি সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা সৃষ্টি করতে পারে বলে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। সরকার আগাম সতর্কতা হিসেবে এই নিষেধাজ্ঞা জারি করে।'
ভারতে ধর্মীয় অসহিষ্ণুতা নিয়ে চলমান বিতর্কের মধ্যেই ভারতীয় বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ লেখক সালমান রুশদির 'সাটানিক ভার্সেস' ও তসলিমা নাসরীনের 'দ্বিখণ্ডিত' বই দুটি নিষিদ্ধ করা নিয়ে ফের নতুন করে আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়েছে। এই প্রেক্ষাপটে নিজেদের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন এই দুই লেখক।
বিডি-প্রতিদিন/৩০ নভেম্বর ২০১৫/শরীফ