আততায়ীদের হাতে যখন কেউ খুন হন তখন সেখানে পেশাদার ফটোগ্রাফারের উপস্থিত থাকার ঘটনা খুবই বিরল। বিশেষ করে, হত্যার পরপরই আততায়ী যেভাবে তার প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করেন সেটা ক্যামেরায় ধরা পড়ার নজিরও খুব কমই আছে।
কিন্তু তুরস্কের আঙ্কারা শহরে সোমবার তুর্কী পুলিশ বাহিনীর এক সদস্যের হাতে যখন রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত আন্দ্রেই কারলভ খুন হলেন তখন সেখানে উপস্থিত ছিলেন অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের ফটোগ্রাফার বুরহান ওজবিলিচি।
কাকতালীয়ভাবে একেবারে সামনের সারিতে বসেছিলেন ওজবিলিচি। আঙ্কারার ওই আর্ট গ্যালারিতে ওজবিলিচি তখন ওই আততায়ীর কিছু ছবি তুলেছেন যেখানে দেখা যাচ্ছে রুশ রাষ্ট্রদূতকে খুন করার পর আততায়ী জোরে জোরে চিৎকার করছে এবং দুই হাত উপরের দিকে তুলে আকাশে তার পিস্তল তুলে ধরছে। খবর বিবিসির।
ওই শ্বাসরুদ্ধকর মুহূর্তের ঘটনা বর্ণনা করতে গিয়ে ওজবিলিচি বলেন, ‘অবশ্যই আমি খুব ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। বন্দুকধারী আমার দিকেও ঘুরে দাঁড়াতে পারে এই আশঙ্কা তো আমার ছিলোই।’
নিজের ব্লগে এভাবে সেদিনের ঘটনা বর্ণনা করেন তিনি।
ওজবিলিচি জানান, অফিস থেকে তার বাড়িতে যাওয়ার পথেই ওই গ্যালারির অবস্থান। তিনি সেখানে ঢু মেরেছিলেন এই আশায় যে, তুরস্ক ও রাশিয়ার মধ্যে বর্তমান সম্পর্কের কথা তুলে ধরার কিছু ছবি হয়তো তিনি এখানে পেয়ে যেতে পারেন।
তিনি লিখেছেন, 'ভালো কিছু মুহূ্র্তের পরিবর্তে আমি চরম এক বিশৃঙ্খলার প্রত্যক্ষদর্শী হয়ে গেলাম।’
দাঙ্গা পুলিশের ২২ বছর বয়সী সদস্য আলটিনটাস যখন তার হাতে খুন হওয়া রুশ রাষ্ট্রদূতের মরদেহের চারপাশে ঘুরে বেড়াচ্ছিলো তখন সেখানে উপস্থিত অন্যান্যরা নিরাপদ আশ্রয়ের জন্যে ছুটোছুটি করতে শুরু করেন।
বন্দুকধারী আততায়ী তখন আরবি ও তুর্কী ভাষায় চিৎকার করতে থাকেন। সিরিয়ায় রাশিয়ার ভূমিকা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করছিল সে।
ওজবিলিচি আরও জানান, লোকজন চিৎকার চেঁচামেচি করছিল। কেউ কেউ পিলারের পেছনে আশ্রয় নিয়েছিল। অনেকেই টেবিলের নিচে লুকিয়ে এবং অনেকে মেঝেতে শুয়ে পড়ে প্রাণ বাঁচানোর চেষ্টা করেন।
তিনি বলেন, ‘আমিও ভয় পেয়েছিলাম এবং বুঝতে পারছিলাম না কি করবো। কিন্তু একটি দেওয়ালের পেছনে আংশিক আড়াল পেয়ে যাওয়ায় সেখান থেকেই আমি ছবি তুলতে থাকি। বিপদ সম্পর্কে ধারণা ছিল। কারণ অন্যরা সেখান থেকে পালিয়ে যাচ্ছিলো। তবে সে সময় মনে হয়েছিল এই দৃশ্যটা ধারণ করতেই হবে।’
ওজবিলিচি পরে নিজের অফিসে ফিরে ছবিগুলো সম্পাদনা করেন। তিনি বলেন, ‘একটা ছবি দেখে আমি খুব অবাক হয়ে যাই। দেখলাম রাষ্ট্রদূত যখন বক্তব্য রাখছিলেন তখন ওই আততায়ী তার পেছনে দাঁড়িয়েছিল। ঠিক একজন বন্ধুর মতো অথবা একজন দেহরক্ষীর মতো। অথচ কি নির্লিপ্তভাবে তার হাতেই খুন হতে হলো রাষ্ট্রদূতকে। পরে অবশ্য আততায়ী আলটানটিসও ঘটনাস্থলে পুলিশের গুলিতে নিহত হন।
বিডি প্রতিদিন/ ২১ ডিসেম্বর ২০১৬/ এনায়েত করিম