মোহাম্মদ বিন সালমান। সৌদি আরবের বর্তমান বাদশাহর তৃতীয় স্ত্রীর বড় সন্তান তিনি। ২০১৫ সালে বাদশাহ আবদুল্লাহ বিন আব্দুল আজিজ মারা যাবার পর সালমান বিন আব্দুল আজিজ সৌদি আরবের বাদশাহ হন। তিনি ক্ষমতাসীন হাবার পর তাৎক্ষণিকভাবে দু'টি সিদ্ধান্ত নেন। এর মধ্যে একটি হচ্ছে, তাঁর ছেলে মোহাম্মদ বিন সালমানকে প্রতিরক্ষামন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ করা। এছাড়া পরবর্তীতে ভাইয়ের ছেলে মোহাম্মদ বিন নায়েফকে সরিয়ে ক্রাউন প্রিন্স পদে আসীন করেন ছেলে মোহাম্মদ বিন সালমানকে। একই সাথে তিনি সৌদি আরবের অর্থনীতি এবং উন্নয়ন বিষয়ক কাউন্সিলের প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পান। এরপর ৩১ বছর বয়সী এ ব্যক্তি সৌদি আরবের ভেতরে উঠেন প্রবল ক্ষমতাধর হয়ে উঠেন।
বর্তমানে সৌদি আরবের সামাজিক এবং রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে যে সম্প্রতি ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে কিংবা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে, তার সবটাই এসেছে এই ক্রাউন প্রিন্স মুহাম্মদ বিন সালমানের নেতৃত্বে। বর্তমানে সৌদি আরবের অর্থনীতি থেকে শুরু করে পররাষ্ট্রনীতি ঠিক করার মাস্টারমাইন্ড হিসেবে বিবেচনা করা হয় তাকে। ২০১৭ সালের অক্টোবরে রিয়াদে আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারীদের সালমান পরিষ্কারভাবে জানিয়েছেন, সৌদি আরবে ‘মডারেট ইসলাম’ (মধ্যপন্থী ইসলাম) ফিরিয়ে আনা হবে; যা সকল ধর্মের জন্য উন্মুক্ত হবে।
সৌদিতে চরমপন্থী চিন্তা-ভাবনার প্রবর্তকদের নির্মূল করা হবে বলে ঘোষণা দিয়ে সৌদি প্রিন্স বলেন, সৌদি আরব অতীতে এমন ছিল না। তিনি বলেন, ‘আমরা মডারেট ইসলামিক সৌদি আরবে ফিরছি, যেমনটা অতীতে ছিল। যা বিশ্ব এবং সব ধর্মের জন্য উন্মুক্ত ছিল।’
সৌদি এই প্রিন্স এমন এক সময় মডারেট ইসলামে ফিরিয়ে আনার কথা বলেন, যার একমাস আগে দেশটিতে নারীদের গাড়ি চালানোর অনুমতি দেয়ার ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
২০১০ সালে তৎকালীন বাদশাহ আবদুল্লাহ এক আদেশ জারি করেন যে, রাজ্যের ফকিহরা (ইসলামী শাস্ত্র ফিকাহ বিশারদ) ফতোয়া জারি করতে পারবেন। অথচ বাদশাহ সালমান এবং তার পুত্র মুহাম্মদ বিন সালমান তো বহু সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ফকিহদের অনুমতি ছাড়াই। ২০১৬ সাল থেকেই সে দেশের প্রিন্সদের ধরপাকড়ের ঘটনা ঘটছে। সম্প্রতি রাজপরিবারের সদস্য এবং ব্যবসায়ীদের আটকে রেখে বিপুল পরিমাণ অর্থের বিনিময়ে ছেড়ে দেওয়ার ঘটনা ঘটল। বাদশাহের প্রাসাদের ঢুকে ঝগড়ার অভিযোগে আটকের ঘটনাও ঘটেছে।
ক্রাইন প্রিন্সের কথা সঙ্গে অবশ্য কিছু মিলও পাওয়া যায়। চলতি বছরের জুনে মোহাম্মদ বিন সালমানকে ক্রাউন প্রিন্স হিসাবে নিয়োগ দেয়া হয়। এরপর থেকেই দেশটির তেল নির্ভরতা থেকে বেরিয়ে এসে অর্থনীতির চাকা আরো সচল করতে ব্যাপক সংস্কার আনার ঘোষণা দেন। অবশ্য গত বছরে সংস্কৃতিতে উল্লেখ করার মতো বেশ কিছু পরিবর্তন এসেছে সৌদিতে। গানের কনসার্ট করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে, বিভিন্ন অনুষ্ঠানে নারীদের যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। গত ৩৫ বছর পর দেশটিতে চলচ্চিত্রের প্রদর্শনীর অনুমতি দেওয়া হয়েছে। স্টেডিয়ামে বসে খেলা দেখারও অনুমতি পেয়েছে গত বছর। এ ছাড়া গাড়ি চালানোর অনুমতি দেওয়ার বিষয়টি তো রয়েছেই।
নারীবাদীরা এবং মানবাধিকারকর্মীরা নতুন সিদ্ধান্তকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। তবে ক্রাউন প্রিন্স সালমানের সিদ্ধান্তের সমালোচনাও কিন্তু কম হচ্ছে না। তাই সময় এবং তার কাজই বলে দেবে সালমান কতটা মডারেট ইসলাম চান এবং কট্টর ইসলামপন্থী দেশটিতে এটা কিভাবে তিনি কার্যকর রাখতে পারেন।
সূত্র: আল-জাজিরা ও বিবিসি
বিডি-প্রতিদিন/০৮ জানুয়ারি, ২০১৮/মাহবুব