ভারতের সংসদের নিম্নকক্ষ লোকসভায় পাশ হয়েছে 'বিতর্কিত' নাগরিকত্ব (সংশোধনী) বিল ২০১৬। মঙ্গলবার সংসদের শীতকালীন অধিবেশনের শেষ দিনে এই বিলটি পেশ করেন দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং। এরপর শুরু হয় আলোচনা, পরে বিরোধীদের বিরোধ-বিক্ষোভের মধ্যেই বিলটি পাশ করে নেয় মোদি সরকার।
আগামীকাল বুধবার রাজ্যসভাতেও অধিবেশনের শেষ দিনে এই বিলটি পাশ করা হতে পারে বলে জানা গেছে। মঙ্গলবার নাগরিকত্ব বিল উত্থাপনের পর এনিয়ে বক্তব্য রাখতে গিয়ে রাজনাথ সিং বলেন, ‘আমি পরিস্কার করে বলতে চাই যে নাগরিকত্ব (সংশোধনী) কেবলমাত্র অাসাম কিংবা নির্দিষ্ট কয়েকটি রাষ্ট্র থেকে আসা উদ্বাস্তুদের কল্যাণের জন্য নয়। এই বিলের ফলে পশ্চিম পাড়ের প্রতিবেশি রাষ্ট্র (পাকিস্তান) থেকে এসে রাজস্থান, পাঞ্জাব, দিল্লি এবং রাজস্থানে এসে বসবাস করছে তাদেরও কল্যাণে আসবে। দীর্ঘদিন ধরেই অাসাম অবৈধ অনুপ্রবেশ সমস্যায় জর্জরিত এবং অাসামের এই বোঝা ভারতেরও বোঝা। এই সমস্যা মোকাবিলায় সরকার সমস্ত পদক্ষেপ নেবে।’
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর এই বক্তব্যের সময়ই বিরোধী দলের সংসদ সদস্যরা স্লোগান দিতে থাকে, তাতে যোগ দেয় উত্তরপূর্ব ভারতে বিজেপির শরিক দলের কয়েকজন সাংসদও। একসময় অধিবেশন বর্জন করে জাতীয় কংগ্রেসের সাংসদ। বিরোধীতা করে বাম ও তৃণমূল কংগ্রেসের সাংসদরাও। তৃণমূলের অভিযোগ এই বিলের ফলে পশ্চিমবঙ্গের শান্তি বিঘিœত হতে পারে।
এই বিলটিতে ২০১৪ সালের ৩১ ডিসেম্বরের আগে আফগানিস্তান, পাকিস্তান ও বাংলাদেশ থেকে আসা হিন্দু, শিখ, বৌদ্ধ, জৈন, পার্শি ও খ্রিস্টান নাগরিকদের ধর্মীয় নির্যাতনের বলি হয়ে ভারতে আসাদের নাগরিকত্ব দেওয়ার প্রস্তাব রাখা হয়েছে। আর তা নিয়েই তৈরি হয়েছে বিতর্ক।
নাগরিকত্ব (সংশোধনী) বিল ২০১৬-এর প্রতিবাদে গত কয়েকদিন ধরেই উত্তপ্ত হয়ে রয়েছে অাসামের পরিস্থিতি। এরই মধ্যে এই বিলের প্রতিবাদ করে সোমবার অাসামের বিজেপি জোট সরকার থেকে সমর্থন প্রত্যাহার করে নিয়েছে শরিক দল অসম গণ পরিষদ (অগপ)।
এদিকে সংসদে বিল পেশের প্রতিবাদে মঙ্গলবার ১১ ঘণ্টা (সকাল ৫ টা থেকে বিকাল ৪ টা পর্যন্ত) অাসাম সহ উত্তরপূর্ব ভারতে হরতালের ডাক দেয় নর্থ ইষ্ট স্টুডেন্টস অর্গানাইজেশন (নেসো) ও অল অসম স্টুডেন্টস ইউনিয়ন (আসু)। তাদের এই হরতালকে সমর্থন দেয় কংগ্রেস, অসম গণ পরিষদ (অগপ), অল ইন্ডিয়া ইউনাইটেড ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (এআইইউডিএফ) সহ বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক সংগঠন। হরতালের ফলে গোটা উত্তরপূর্ব ভারতের স্বাভাবিক জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। বন্ধ রাখা হয় দোকান, বাজার, স্কুল, কলেজ, ব্যাঙ্ক সহ অর্থকারী প্রতিষ্ঠান, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান। হরতালে অসমের একাধিক জায়গায় বিক্ষিপ্ত সহিংসতা হয়। ডিব্রগড়ে রাজ্যটির মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সনোয়ালের বাসভবনের সামনে বিক্ষোভ দেখায় বিক্ষোভকারীরা, অবরোধ করা হয় জাতীয় সড়ক। গাড়িতেও অগ্নিসংযোগ করা হয় বলে অভিযোগ। অর্ধনগ্ন হয়ে বিভিন্ন রেল লাইনের ওপর দাঁড়িয়ে রেল অবরোধ করে হরতালকারীরা।
পাশ্ববর্তী ত্রিপুরাতেও হরতালের প্রভাব পড়ে। আগরতলা থেকে ২৫ কিলোমিটার দূরে ত্রিপুরা ট্রাইবাল এরিয়াস অটোনোমাস ডিস্ট্রিক্ট কাউন্সিল (টিটিএডিসি)-এর সদর কার্যালয়ের সামনে সড়ক অবরোধ করতে গেলে হরতালকারী সংগঠন নেসোর সমর্থকদের সাথে পুলিশের সাথে সংঘর্ষ বাধে। তাতে পাঁচ জন আহত হয় বলে খবর। এর মধ্যে দুইজন গুলি বিদ্ধ হয় বলে জানা গেছে।
বিডি প্রতিদিন/হিমেল