১৪০০ বছর আগে রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নেতৃত্বে মদিনায় প্রতিষ্ঠিত হয় ইসলামী শাসন। পরবর্তীতে চার খলিফা ইসলামী খিলাফতের বিকাশ ঘটান। মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় খলিফারা কতটা দাযিত্বশীল ছিলেন তার প্রমাণ মেলে মিসরের গভর্নর মালিক আশতারকে চতুর্থ খলিফা হজরত আলী (রা.)-এর লেখা একটি চিঠিতে। এতে তিনি লেখেন- 'তোমার অন্তরকে তোমার অধীন জনগণের প্রতি ক্ষমা এবং তাদের প্রতি স্নেহশীলতা ও দয়ার্দ্রতায় অভ্যস্ত করে তোলো। তুমি তাদের ওপর লোভী, হিংস্র পশুর মতো চড়াও হয়ো না যারা মনে করে যে, তাদের খেয়ে ফেলা যথেষ্ট। কারণ, তারা (তোমার অধীন জনগণ) দুই ধরনের : হয় তোমার দীনি ভাই, নয় তো সৃষ্টি হিসেবে তোমারই মতো। তারা বিচ্যুত হবে এবং ভুলের শিকার হবে। তারা ভুল কাজ করতে পারে তা ইচ্ছা করেই হোক বা উদাসীনতার কারণেই হোক। অতএব, তুমি ঠিক সেভাবেই তাদের দিকে ক্ষমার হস্ত প্রসারিত করে দাও যেভাবে তুমি পছন্দ করে যে, আল্লাহ তোমার প্রতি ক্ষমা বিস্তার করে দিন। কারণ, তুমি তাদের ওপরে স্থান লাভ করেছ এবং তোমার দাযিত্বশীল অধিনায়ক (খলিফা) তোমার ওপরে, আর যে (খলিফা) তোমাকে নিয়োগ করেছে তার ওপরে আছেন আল্লাহ। তিনি (আল্লাহ) চেয়েছেন যে, তুমি তাদের বিষয়াদি পরিচালনা করবে এবং তিনি তাদের মাধ্যমে তোমাকে পরীক্ষা করছেন।' হজরত আলী (রা.) সমাজে সুবিচারের বাস্তব রূপায়ণ প্রসঙ্গে বলেন, "ক্ষমা করার কারণে অনুতপ্ত হয়ো না এবং শাস্তি দিতে পেরে গর্বিত হয়ো না। ক্রোধের সময় দ্রুত পদক্ষেপ নিও না যদি তোমার পক্ষে তা এড়িয়ে যাওয়া সম্ভব হয়। এ কথা বলো না যে, 'আমাকে কর্তৃত্ব দেওয়া হয়েছে; অতএব, আমি যখন আদেশ দেব তখন অবশ্যই তা পালিত হতে হবে।' কারণ, তা অন্তরে বিভ্রান্তি ও দীনে দুর্বলতা সৃষ্টি করে এবং তা ব্যক্তিকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যায়।" হজরত আলী (রা.) মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় শাসকদের করণীয় কর্তব্য সম্পর্কে ১৪০০ বছর আগে যে নির্দেশনা দিয়েছেন তা মানবাধিকারের ক্ষেত্রে আজও অনুকরণীয়।
লেখক : ইসলামী গবেষক