ইসলাম সব মানুষের সম্মান ও মর্যাদা রক্ষা করার নির্দেশ দিয়েছে। সমাজে কেউ যেন কারও মর্যাদা হানি না করে এবং কারও সম্পর্কে খারাপ ধারণা না করে এ সম্পর্কে পবিত্র কোরআন ও হাদিস শরিফে যথেষ্ট গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। মহান আল্লাহ পবিত্র কোরআনে বলেন, 'হে ইমানদারগণ! তোমরা অধিক অনুমান (মানুষের প্রতি খারাপ ধারণা করা) থেকে দূরে থাক। কারণ অনুমান কোনো কোনো ক্ষেত্রে পাপ। এবং তোমরা একে অপরের গোপনীয় বিষয় সন্ধান কর না। এবং একে অপরের পশ্চাতে গীবত কর না। তোমাদের মধ্যে কি কেউ তার মৃত ভ্রাতার গোশত খেতে চাইবে? বস্তুত তোমরা তো এটাকে ঘৃণাই মনে কর। তোমরা আল্লাহকে ভয় কর। আল্লাহ তওবা গ্রহণকারী, পরম দয়ালু।' সূরা : হুজুরাত, আয়াত : ১২। এই আয়াত দ্বারা তিনটি জিনিস হারাম ঘোষণা করা হয়েছে। এক. কারও সম্পর্কে খারাপ ধারণা রাখা যাবে না। দুই. কারও দোষ-ত্রুটি তালাশ করা যাবে না। তিন. কারও দোষ আমার জানা থাকলেও তা সমাজে প্রকাশ করা যাবে না। মোটকথা কোনো মুসলমান সম্পর্কে খারাপ ধারণা রাখা যাবে না। সবাইকে ভালো মনে করতে হবে। কারও খারাপ বিষয় যদি আমার জানাও থাকে তবু এ কথা ভাবতে হবে যে, হয়তো তার এমন কোনো নেক আমল আছে যা আল্লাহর দরবারে কবুল। আর হতে পারে আমার সারা জীবনের আমল আল্লাহপাক কবুল করবেন না। এমনটি যদি হয় তাহলে আমার চেয়ে খারাপ ব্যক্তি আর কেউ নেই। আরেকটি বিষয় এখানে বিবৃত হয়েছে, তা হলো- কারও গোপনীয় বিষয় তালাশ করা বা দোষ-ত্রুটি সন্ধান করা অপরাধ। তাই আমাদের কারও গোপনীয় বিষয় সন্ধান করা বা দোষ-ত্রুটি অনুসন্ধান করা থেকে বিরত থাকতে হবে। আয়াতে আরও উল্লেখ হয়েছে, কারও সমালোচনা করা মৃত ভাইয়ের মাংস খাওয়ার চেয়ে বেশি নিকৃষ্ট। মানুষের সমালোচনা ও পরনিন্দা করা থেকে বিরত থাকার জন্য এ আয়াতই যথেষ্ট। আল্লাহর রসুল (সা.) সব সময় মানুষের দোষ-ত্রুটি গোপন রাখতেন। এ সম্পর্কে বহু হাদিস বর্ণিত হয়েছে। তার মধ্য থেকে একটি উল্লেখ করছি। বিখ্যাত সাহাবি হজরত আবু হোরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, নবী করীম (সা.) বলেন, যে ব্যক্তি দুনিয়ায় কোনো মুসলমানের দোষ-ত্রুটি গোপন রাখে, আল্লাহ দুনিয়া ও আখেরাতে তার দোষ-ত্রুটি গোপন রাখবেন। বান্দা যতক্ষণ তার ভাইয়ের সহযোগিতায় লিপ্ত থাকে, আল্লাহ ততক্ষণ তার সহযোগিতায় রত থাকেন।' তিরমিযি শরিফ। মহান আল্লাহ আমাদের সব মানুষের সম্মান ও মর্যাদা বজায় রাখার তৌফিক দান করুন। আমিন।
লেখক : খতিব, বাইতুর রহমত জামে মসজিদ, গাজীপুরা, টঙ্গী।