চুল তার কবেকার অন্ধকার বিদিশার নিশা...কবি জীবনানন্দ দাশের এই পংক্তি থেকে চুলের প্রতি দুর্বার আর্কষণ ও আকুতির প্রকাশ ঘটেছে। কবি যে নারীর চুল নিয়ে কাব্য করেন, চুলের চিন্তায় সেই নারীর কিন্তু ঘুম নেই! শুধু নারী কেন? চুল নিয়ে পুরুষরাও কম ভাবেন না। চুলের যত্নে তাই ব্যবহৃত হয়ে আসছে নানান রকম উপকরণ। আর সে কারণে চা পাতা, কফি, লেবু, ডিম ইত্যাদির মত খাদ্যবস্তুকেও দেখা যায় পেটে চালান না করে মাথার উপর রেখে তথাকথিত চুলের যত্নে ব্যবহার করা হচ্ছে। তা ছাড়া চুলের যত্নে তেলের চিরাচরিত অনর্থক ব্যবহার তো আছেই। কিন্তু নিরাশার কথা হচ্ছে এইসব আয়োজনের কোনটাই চুলের মানোন্নয়নে খুব একটা কাজে আসে না। বৈজ্ঞানিকভাবে এটাই সত্যি।
চুলের যত্ন, পরিচর্যা, বৃদ্ধি ইত্যাদি নিয়ে অনেকের মধ্যেই বিভিন্ন রকম ভ্রান্ত ধারণা প্রচলিত আছে। উত্তরাধিকার সূত্রে এইসব ভুল ধারণাকে আমরা অনেকেই ধারণ করে আসছি। ভ্রান্ত ধারণার বশবর্তী হয়ে মিথ্যে চাকচিক্যে অযথাই পুলকিত হচ্ছি। ফলে চুলের যত্নে যোগ হয়েছে মাত্রাতিরিক্ত বাহুল্য। এবার চুল সম্পর্কে একটি ভুল ধারণা উল্লেখ করা যাক-
অনেকের ধারণা, বার বার চুল আচঁড়ানো ভালো, সুন্দর চুলের জন্য দৈনিক অন্তত ১০০ বার চুলে ব্রাশ বা চিরুনির আঘাত দেয়া ভালো। কিন্তু বৈজ্ঞানিক সত্য হচ্ছে, বার বার কিংবা খুব জোরে চুল আঁচড়ালে চাপের কারণে চুল ছিঁড়ে অথবা শেকড় সুদ্ধ উঠে আসতে পারে। এছাড়াও অতিরিক্ত চুল ব্রাশের কারণে চুলের সবচেয়ে বাইরের চকচকে আবরণ ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। চুলের এই বাহ্যিক আবরণ চুলের প্রতিরক্ষার কাজটি করে থাকে। চুলের বাহ্যিক আবরণ মাথার ঘর্মগ্রন্থি থেকে নিঃসৃত তৈলাক্ত পদার্থের সাহায্যে চুলের ঔজ্জ্বল্য ধরে রাখার চেষ্টা করে। ফলে চুলের উপর আলো পড়লে চুল ঝলমলে দ্যুতি ছড়িয়ে স্বাস্থ্যোজ্জ্বল চুলের উপস্থিতি প্রমাণ করে দেয়। কিন্তু বার বার ব্রাশ করলে চুলের বাহ্যিক আবরণে ঘর্মগ্রন্থি নিঃসৃত তৈলাক্ত পদার্থ যথার্থ মাত্রায় বিস্তৃতি লাভের সুযোগ পায় না। ফলে এক্ষেত্রে চুলের উপর আলো প্রতিফলিত হতে পারে না বলে চুলকে নিষ্প্রাণ ও রুক্ষ দেখায়। চুলের বাহ্যিক আবরণের এই ক্ষতি এক পর্যায়ে চুলের শাঁসকেও আক্রান্ত করতে পারে। যার পরিণামে চুল হয় রুক্ষ ও ভঙ্গুর।
ঘন ঘন চুল ব্রাশের কারণে মাথার ত্বকে অবস্থিত ঘর্মগ্রন্থি মাত্রাতিরিক্ত উদ্দীপিত হয়ে সেবাম নামক তৈলাক্ত পদার্থেরও বাড়তি নিঃসরণ ঘটায়। ফলে তৈলাক্ত পদার্থে সিক্ত হয়ে চুল নেতিয়ে থাকে। এ অবস্থায় চুল আঁঠালো ও চুপসানো দেখায়।
মাথার ত্বকে খুশকি থাকা অবস্থায় বার বার মাথা আঁচড়ালে মাথার ত্বকে সেবোরিক ডার্মাটাইটিস নামক খুশকিজনিত প্রদাহ হতে পারে। শেষ পর্যন্ত এই প্রদাহ থেকে মাথায় সোরিয়াসিস ও একজিমা হতে পারে।
জট পাকানো চুলে চিরুণি ব্যবহারের চেষ্টা করলে চুল ছিঁড়ে কিংবা উঠে যাওয়াটাই স্বাভাবিক। পার্লার থেকে সেট করা (পার্ম, কার্ল...) চুলে বার বার চিরুণি ব্যবহার করলে চুল নষ্ট হতে পারে। কারণ এসব চুল স্বাভাবিক চুলের তুলনায় ভঙ্গুর ও নরম থাকে। কাজেই প্রকৃত সত্য হচেছ, চুলে অতিরিক্ত চিরুণি বা ব্রাশ ব্যবহার করা ভাল নয়। চুল ব্রাশ করার জন্য আদর্শ চিরুণি হচ্ছে শক্ত প্লাস্টিকের তৈরি (ভলকানাইজড) বড় ও ফাঁকা দাঁত বিশিষ্ট চিরুণি। এই ধরণের চিরুণি দিয়ে দৈনিক ৩/৪ বার চুল আঁচড়ানোটাই হচ্ছে আদর্শ। আর চুল কম আঁচড়ানোটাই ভাল।