পশ্চিমা উন্নত বিশ্বে হৃদরোগজনিত মৃত্যুর হার ৪০%। তবে বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশেও হৃদরোগ ক্রমে ক্রমে প্রধান ঘাতক রোগ হিসেবে দেখা যাবে। কারণ আমাদের দেশে কলেরা, বসন্ত, অন্য সংক্রামক রোগের মৃত্যুর হার কমেছে। শিক্ষিত লোকের হার বেড়েছে, স্বাস্থ্য সচেতনতা বেড়েছে। তাই সংক্রামক রোগ কমেছে। গড় আয়ু বেড়েছে। গড় আয়ু বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে হৃদরোগ।
অল্প বয়সের শিশুরা ঘরে বসে কম্পিউটার খেলে, আউটডোর গেম খেলে না, বেশি করে ফাস্টফুড খায়, ফলে স্থূল হয়ে যায়, যেন খামারের মুরগি। স্থূল শিশুরা ফাস্টফুড বেশি খায় বলে রক্তে চর্বি বেড়ে যায়। তাই অল্প বয়সে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি থাকে।
হার্ট অ্যাটাকের কারণ :
হার্টের রক্তনালি অর্থাৎ বড় করোনারি আর্টারিতে চর্বি (কোলেস্টেরল) জমে রক্তনালি চিকন হতে থাকে, চিকন রক্তনালিতে রক্ত জমাট বেঁধে রক্তনালি পুরোপুরি বন্ধ হয়ে হার্ট অ্যাটাক হয়। তবে একটা কথা মনে রাখা দরকার, রক্তে চর্বি (কোলেস্টেরল) বেশি থাকলে হার্ট, ব্রেইন ও পায়ের রক্তনালি বেশি আক্রান্ত হয়। হার্টের রক্তনালি ৭০% এর কম ব্লক হলে বুকে ব্যথা হয় তাকে এনজিনা বা ইসকেমিয়া বা ইস্কেমিক হার্ট ডিজিজ বা আইএইচডি বলা হয়। হার্টের রক্তনালিতে আরও চর্বি জমে ৭০% এর বেশি ব্লক এবং সঙ্গে যোগ হয় জমাট বাঁধা রক্ত, তখন করোনারি রক্তনালি পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায় এবং হার্ট অ্যাটাক হয়।
হার্ট অ্যাটাক সন্দেহ হলে রোগীকে ৩০০ মি. এসপিরিনি বা ৭৫ মি. এর চার বড়ি ইকোস্প্রিন খাওয়ানো উচিত। তাতে রোগীর মৃত্যুঝুঁকি ৩০% কমে এবং জমাট বাঁধা রক্ত তরল করতে সহায়তা করে। হার্ট অ্যাটাক হলে আট ঘণ্টা পর হার্টের মাংসে পচন ধরে, তাই পচন ধরার আগে ইনজেকশন স্ট্রেপটোকাইনেজ দিতে পারলে, (যত তাড়াতাড়ি এই ইনজেকশন দেওয়া যায় তত ভালো ফল পাওয়া যাবে) জমাট বাঁধা রক্ত বরফের মতো গলে যায়, করোনারি রক্তনালি খুলে যায় এবং হার্ট অ্যাটাক থেকে রেহাই পেয়ে যায় রোগী অর্থাৎ হার্ট অ্যাটাকের কোনো আলামত থাকে না ইসিজিতেও।
হার্ট অ্যাটাক সন্দেহ হলে ইসিজি, রক্তের এনজাইম টেস্ট ট্রপিনিন টি এন্ড আই এবং সিপিকে এমবি করলে রোগ নির্ণয় করা সহজ হয়। হার্ট অ্যাটাক সাধারণত ৪০ ঊর্ধ্ব বয়সীদের হয়। স্থূল ও ধূমপায়ীদের ৪০ বছর আগেও হার্ট অ্যাটাক হতে পারে। অতএব সাবধান! বাচ্চাদের খামারের মুরগির মতো বানাবেন না।