যা কিছু সিয়াম ভঙ্গ করে তা থেকে সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত বিরত থাকার নাম হল সওম, বহু বচনে সিয়াম। সিয়ামভঙ্গকারী সকল প্রকার বিষয় থেকে বিরত না থাকলে সিয়াম আদায় হবে না। যে সকল কাজ সিয়াম ভঙ্গ করে তা সাধারণত সাত প্রকার।
১. সহবাস : সিয়াম অবস্থায় সহবাস করলে সিয়াম বাতিল হয়ে যায়। সিয়াম ফরজ হোক কিংবা নফল। সহবাসের মাধ্যমে সিয়াম বাতিল করা হলে তার কাজা ও কাফফারা উভয়টি আদায় করা জরুরি।
২. ইচ্ছাকরে বীর্যপাত : যেমন কাউকে চুমো দেয়ার মাধ্যমে বা স্পর্শ করার কারণে কিংবা হস্তমৈথুন ইত্যাদি কারণে বীর্যপাত ঘটানো হলে সিয়াম বাতিল হয়ে যায়। তবে এ সকল কারণে কামভাব থাকা সত্ত্বেও যদি বীর্যপাত না হয় তবে সিয়াম বাতিল হবে না। যদি চুমো ও স্পর্শ দ্বারা বীর্যপাত হওয়ার আশঙ্কা থাকে তবে এ সকল কাজ থেকে বিরত থাকা অত্যন্ত জরুরি। ইসলামি শরিয়তের একটা মূলনীতি হল যা কিছু অন্যায় বা হারাম কাজের দিকে নিয়ে যায় বা তার সম্ভাবনা সৃষ্টি করে তা থেকে দূরে থাকা ওয়াজিব। এ কারণে সিয়াম পালনকারীর জন্য কুলি করা নাকে পানি দেয়ার সময় সাবধানতা অবলম্বন করতে হয়। সে কুলি করার সময় গড়গড়া করবে না। স্বপ্নদোষের কারণে বীর্যপাত হলে সিয়াম ভঙ্গ হবে না। কারণ এটা অনিচ্ছাকৃতভাবে হয়ে গেছে। যা কিছু অনিচ্ছাকৃতভাবে হয়ে যায় আল্লাহ তা ক্ষমা করে দেন। এমনিভাবে নিদ্রা মগ্ন ব্যক্তি থেকে কলম উঠিয়ে রাখা হয়। কাজেই নিদ্রাকালে যা কিছু ঘটে তার জন্য কাউকে দায়ী করা যায় না। এটা আমাদের প্রতি আল্লাহ রাববুল আলামিনের একটি রহমত। কেউ কোনো বিষয় কল্পনা করার ফলে যদি বীর্যপাত হয়ে যায় এতে সিয়াম ভঙ্গ হবে না।
৩. পানাহার করা: নাক দিয়ে ঔষধ সেবন করা পানাহার করার মতই সিয়াম বাতিল করে দেয়। কারণ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন , 'তোমরা ওজুর সময় নাকে পানি দিতে একটু অতিরিক্ত করবে তবে সিয়াম অবস্থায় নয়।’ এ হাদিস দ্বারা প্রমাণিত হয় যে সিয়াম অবস্থায় নাকের ভিতরে এমনভাবে পানি দিতে নিষেধ করা হয়েছে যাতে পানি ভিতরে চলে যায়। অতএব নাক দিয়ে কিছু ভিতরে প্রবেশ করালে সিয়াম নষ্ট হয়ে যায়।
৪. যা কিছু পানাহারের বিকল্প, তা সিয়াম ভঙ্গ করে : এটা দুভাবে হতে পারে: ১. সিয়াম পালনকারী শরীরে রক্ত গ্রহণ করলে সিয়াম নষ্ট হয়ে যায়। কারণ পানাহার দ্বারা রক্ত তৈরি হয়। তাই রক্তগ্রহণ পানাহারের একটি বিকল্প। ২. খাবারের বিকল্প হিসেবে স্যালাইন বা ইনজেকশন গ্রহণ করা। তবে যে সকল ইনজেকশন ও স্যালাইন খাবারের বিকল্প নয় তা গ্রহণ করতে বাধা নেই।
৫. হাজামা বা শিঙ্গা লাগানো: যে শিঙ্গা লাগায় ও যাকে শিঙ্গা লাগানো হয় উভয়ের সিয়াম নষ্ট হয়ে যায়। শিঙ্গা লাগালে শরীরে এর প্রভাব পড়ে। এটা রক্ত দানের মতই। তাই সিয়াম পালনকারীর জন্য শিঙ্গা ব্যবহার জায়েজ নয়। তবে প্রয়োজন হলে সিয়াম ভঙ্গ করে শিঙ্গা ব্যবহার করবে পরে সিয়াম কাজা করবে। নাক দিয়ে রক্ত পড়লে কিংবা দাঁত ওঠালে অথবা আহত হয়ে রক্ত প্রবাহিত হলে সিয়ামের কোনো ক্ষতি হয় না।
৬. ইচ্ছাকৃতভাবে বমি করা : যদি কেউ ইচ্ছা করে বমি করে তবে তার সিয়াম পালন বাতিল হয়ে যাবে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন 'যার বমি হলো তার কোনো ক্ষতি নেই। আর যে নিজের ইচ্ছায় বমি করল সে সিয়াম কাজা করবে।’ তবে বমি আসলে তা আটকে রাখার চেষ্টা করা যাবে না।
৭. মহিলাদের মাসিক ও প্রসূতিবস্থা আরম্ভ হলে: যদি সিয়াম অবস্থায় মাসিকের রক্ত দেখা দেয় তবে সিয়াম ভেঙে যাবে। এমনিভাবে প্রসবজনিত রক্ত প্রবাহিত হতে থাকলে সিয়াম নষ্ট হয়ে যায়।
বিডি-প্রতিদিন/২১ জুন ২০১৫/শরীফ