এবার রমযান গ্রীষ্মকালে হওয়াতে রোজা রাখার সময়কাল বেড়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বেড়েছে গরমের কষ্ট। বিশেষ করে এবার যেন একটু বেশিই গরম পড়েছে। তাই এসময় একটু বেশি তৃষ্ণার্ত থাকার পাশাপাশি ঘামও বেশি হচ্ছে।
গরমকালের প্রচণ্ড গরমে দেহের তরল বের হয়ে যাওয়ায় শরীর ক্লান্ত ও পানিশূন্য হয়ে পরে। বিশেষ করে বাইরের কাজ করার সময় অত্যাধিক ঘামের সৃষ্টি হয়। রোজার মাঝে প্রত্যেকেরই উচিত শরীরে পানি ও ইলেক্ট্রোলাইট মজুদ ও ভারসাম্য বজায় রাখা। তাই তৃষ্ণা মেটানোর জন্য কিছু স্বাস্থ্যকর পানীয় সম্পর্কে জেনে রাখা আমাদের প্রত্যেকেরই উচিত। এই পানীয়গুলো শুধু দেহের তরলের অভাবই পূরণ করবে না বরং ঘামের মাধ্যমে হারানো ইলেক্ট্রোলাইট সরবরাহ করবে। নিচে রমযানে তৃষ্ণা মেটাতে সহায়ক ১০টি বিশেষ পানীয় নিয়ে আলোচনা করা হলো :
বরফ মিশ্রিত মাঠা : এটি রোজায় অন্যতম একটি স্বাস্থ্যকর পানীয় যা গরমের মাঝে শুধু তৃষ্ণাই পূরণ করবে না সেই সঙ্গে শরীরের জন্য খুব উপকারী। দইয়ের সঙ্গে এক চিমটি লবণ, কিছু শুকনো বা তাজা পুদিনা পাতা, সামান্য মধু ও তার সঙ্গে চাইলে স্ট্রবেরি বা যেকোনো বেরী ফল বরফ দিয়ে ব্লেন্ড করে ইফতারের সময় পান করুন।
দইয়ের লাচ্ছি : এটি উচ্চ প্রবায়োটিক (ভালো ব্যাকটেরিয়া), অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও ইলেক্ট্রোলাইট সমৃদ্ধ। এটি শরীরকে পানিশূন্যতা ও গরমের বিভিন্ন সংক্রমণ থেকে রক্ষা করে। এক কাপ দই, এক কাপ পানি, সামান্য জিরা, সামান্য আদা কুচি করে কেটে এবং এক চিমটি লবণ দিয়ে ভালো করে মিশিয়ে পান করুন।
লেবু ও পুদিনা পাতার জুস : রোজার মাসে গরমের তাপ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য এটি খুব ভালো পানীয়। এক গ্লাস পানিতে কিছু পুদিনা পাতা ও লেবুর টুকরো নিয়ে ১৫ মিনিট ফুটিয়ে নিয়ে ঠাণ্ডা করে সামান্য মধু মিশিয়ে খেতে হবে।
টক পানীয় : যদিও একটু কটু স্বাদযুক্ত কিন্তু এটা উচ্চ ভিটামিন সিসমৃদ্ধ খুবই স্বাস্থ্যকর একটি পানীয়। এই পানীয়টির অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট গুণাগুণের জন্য এটি খেলে গরমে র্যাশ হওয়ার সম্ভাবনা থেকে বাঁচা যায়। এক গ্লাস পানিতে কিছু শশার স্লাইস, কমলার স্লাইস এবং সামান্য পুদিনা পাতা দিয়ে তৈরি করতে হবে এটা।
গোলাপের পানীয় : পানিতে কিছু জাফরান ও গোলাপের পাপড়ি ভিজিয়ে রেখে ফুটিয়ে নিয়ে ৭/৮ ঘণ্টা বা সারারাত রেখে দিতে হবে। তারপর তাতে সামান্য মধু মিশিয়ে পান করুন। এটা গরমকালের সবচেয়ে ভালো পানীয়।
শসা ও বাঙ্গির জুস : শসা ও বাঙ্গি নিয়ে একসঙ্গে ব্লেন্ড করে তাতে আধা চা চামচ মধু ও সামান্য লবণ যোগ করুন। চাইলে সামান্য জিরা ও পুদিনা পাতাও দিতে পারেন। এই পানীয়টি দেহকে শীতল করার সঙ্গে সঙ্গে ঘামের পরিমাণ কমাবে।
কমলার জুস : কমলার রস বের করে সামান্য লবণ যোগ করে ঠাণ্ডা করে খেতে হবে। এই পানীয়তে থাকা উচ্চমাত্রার ভিটামিন সি এবং ইলেক্ট্রোলাইট গরমে ক্লান্ত হয়ে যাওয়া এবং পানি শূন্যতার হাত থেকে দেহকে রক্ষা করে।
নন ফ্যাট বা ননীমুক্ত দুধ : এই পানীয় টি উচ্চমাত্রার প্রোটিন সমৃদ্ধ এবং কম ক্যালরিযুক্ত। গরমের সময় এই পানীয়টি তৃষ্ণা মিটিয়ে আপনার ক্ষুধাও মেটাতে সাহায্য করে। প্রচণ্ড গরমের তাপ থেকে মুক্তি পেতে ঠাণ্ডা ননীমুক্ত দুধ পান করতে পারেন। গরমের সময়ের এই কার্যকরী পানীয়টি রোজায় ইফতারে পান করলে দেহের পানিশূন্যতা পূরণ হয়।
তরমুজের জুস : তরমুজ ব্লেন্ড করে তাতে ২ চা চামচ লেবুর রস এবং এক চিমটি লবণ দিয়ে তৈরি করুন জুস। এই পানীয়টি গরমে দেহের জন্য যেসব অত্যাবশ্যকীয় খনিজ পদার্থের প্রয়োজন হয় তা সরবরাহ করে। দেহের পানি শূন্যতা দূর করার ক্ষেত্রে উত্তম একটি পানীয় হচ্ছে তরমুজের জুস।
গ্রীন টি : গরমকালে যদি চা খাওয়া হয় তখন তা দেহকে পানিশূন্য করে দেয় এতে থাকা ক্যাফেইনের কারণে। কিন্তু সবুজ চা হচ্ছে এর ব্যতিক্রম। তাই সামান্য লেবু দিয়ে সবুজ চা যেকোনো সময় খাওয়া যায়। ঠাণ্ডা খেতে চাইলে এতে কিছু বরফ যোগ করতে পারেন।
বিডি-প্রতিদিন/৩০ জুন ২০১৫/শরীফ