পেশা পেশাই। অন্নসংস্থানের কারণে মানুষকে তো কত কিছুই করতে হয়! পেশা দিয়ে কারোর পরিচয় নির্ধারণটা শুধু অন্যায়ই নয়, অপমানজনকও বটে। কিন্তু এ কথাও অস্বীকার করা যায় না যে, পেশা অনেক সময়েই মানুষের ব্যক্তিত্বকে বিশেষ খাতে বইয়ে দেয়। ধরা যাক আপনি অধ্যাপক হবেন বলে প্রস্তুতি নিলেন। কিন্তু কোথা হতে কী হয়ে গেল, আপনাকে হতে হল রেডিও জকি। আপনার আগে থেকে তৈরি করে রাখা স্বপ্নটা মলিন হয়ে গেল। আবার অনেক সময় উল্টোটাও ঘটে। পেশা দেখে মানুষ চেনা খুব সহজ নয়। কিন্তু একটা আবছা ধারণা করে রাখি আমরা সবাই। এখানে এমন কিছু পেশার কথা উল্লেখ করা হল, যাদের সম্পর্কে অন্যরা আগে থেকেই অস্বস্তি বোধ করেন। অবশ্য ব্যক্তিটির সঙ্গে পরিচিত হওয়ার পরে ধারণার বদল ঘটেই থাকে। কিন্তু পূর্বনির্ধারিত অস্বস্তি সহজে যায় না।
১. ক্লাউন— সার্কাসে এঁদের দেখে যতই আমোদ পান না কেন, তাঁবুও একজন ক্লাউনকে কি সহজে গ্রহণ করে সমাজ? ক্লাউনের আনপ্রেডিক্টেবিলিটিই বোধ হয় এই অস্বস্তির কারণ। তার উপরে একগাদা হলিউডি হরর ছবি ক্লাউনকে ভয়ঙ্কর হিসাবে দেখানোয় সম্প্রতি অস্বস্তি আরও বেড়েছে।
২. ময়না তদন্তকারী ডাক্তার— ময়না তদন্তকারী ডাক্তার সম্পর্কে একটা সামাজিক অস্বস্তি অবশ্যই কাজ করে। ময়না তদন্তকারী অনেক ডাক্তারই সামাজিক জীবনে দুর্দান্ত রসিক, এবং জমাটি লোক। কিন্তু তাঁর পেশার কথা শুনলে একটা প্রাথমিক অস্বস্তি তৈরি হয়ই, অস্বীকার করার উপায় নেই।
৩. ট্যাক্সিডার্মিস্ট— মৃত পশুদের সংরক্ষণকারী সম্পর্কে আজকের বাঙালির তেমন ধারণা না থাকলেও এককালে এই পেশায় অনেকেই ছিলেন পশ্চিমবঙ্গে। বিদেশে এই পেশা বেশ কমন। পুরনো লেখালিখি থেকে জানা যায়, বাংলায় এই পেশার মানুষদের কেমন একটা রহস্যময় দৃষ্টিতেই দেখা হত। ট্যাক্সিডার্মিস্ট সম্পর্কে এই অস্বস্তি ইউরোপেও রয়েছে। এর জ্বাজ্জ্বল্য প্রমাণ, উমবের্তো একো-র ‘ফুকো’জ পেন্ডুলাম’ উপন্যাসে উল্লিখিত এক ট্যাক্সিডার্মিস্ট চরিত্র। তাকে ঘিরে অনেকটাই আবর্তিত হয় এই যুগান্তকারী রহস্যগ্রন্থের কড়া রহস্যপাক।
৪. শ্মশানঘাটের পুরোহিত— মৃত বা মৃত্যুর সঙ্গে জড়িত পেশাগুলি সাধারণভাবে অস্বস্তি উদ্রেক করবে, এটা স্বাভাবিক। চার্লস ডিকেন্সের বেশ কয়েকটি উপন্যাসে কফিন মেকার-দের কথা রয়েছে। সেই বর্ণনাগুলি আজও পাঠককে অস্বস্তিতে ফেলে। ভারতীয় সমাজে এর তুলনীয় পেশা অনেকগুলিই রয়েছে। তবে মৃত্যু নিয়ে কারবার করেন, এমন মানুষের মধ্যে শ্মশানঘাটের পুরোহিত একটি বিশেষ ‘টাইপ’। রাত নেই দিন নেই এই মানুষটিকে সর্বদা মুখোমুখি হতে হয় মৃত্যুর, মৃতের— এই কথাটা মনে এলে অস্বস্তি হওয়াটা অস্বাভাবিক নয়। তাঁদের সঙ্গে পরিচিত হলে অস্বস্তি কেটেও যেতে পারে।
৫. জ্যোতিষী— সাধ করে কোষ্ঠী বিচার করতে যান অথবা এমনিই আড্ডা মারুন, জ্যোতিষে নূন্যতম বিশ্বাস যিনি রাখেন, তিনি জানেন এঁর সঙ্গে দেখা হলেই একটা অস্বস্তি গুড়গুড় করবেই পেটের ভিতরে। যদি বলে দেন অতীত সম্পর্কে এমন কিছু যা আপনি গোপন রাখতে চান। অথবা যদি ফ্যাঁস করে বলে বসেন— আপনার কপালে শনি আছে। ফলে অস্বস্তি এই পেশায় নিযুক্তদের নিয়েও।
বিডি প্রতিদিন/১৫ জুন ২০১৬/হিমেল-০৩