শ্রাবণ মাস মানে ভরা বর্ষাকাল। এই রোদ আবার পরক্ষণেই রিমঝিম বৃষ্টি। আপনি বাড়ি থেকে বেরোনোর সময় দেখলেন যে, কাঠফাটা রোদ। তাই ছাতাটা নিতে গিয়েও নিলেন না। কিন্তু দুই-পাঁচ মিনিট হাঁটতেই দেখলেন হঠাৎ বৃষ্টি অঝোরে! ব্যস, আর কী! আপনি কোন দাঁড়ানোর জায়গা না পেয়ে একেবারে কাকভেজা।
এই বর্ষাকালে এখন কত মানুষ রেনকোট বা বর্ষাতি পরেন। কিন্তু বর্ষাকালের আসল 'প্রোটেকশন' বা 'অ্যান্টিবায়োটিক' তো ছাতা! আজ তাই ছাতা নিয়ে কয়েকটা 'ইন্টারেস্টিং' তথ্য রইল আপনাদের জন্য।
১) বর্ষা মানেই ছাতা। অথচ ছাতার আবিষ্কার কিন্তু একেবারেই বৃষ্টি থেকে বাঁচার জন্য তৈরি হয়নি। বরং ছাতার আবিষ্কার হয়েছে রৌদ্র থেকে বাঁচার জন্য! আমব্রেলা শব্দটি এসেছে ল্যাটিন 'আমব্রা' শব্দ থেকে। এই 'আমব্রা' শব্দের অর্থ হল, ছায়া। সূর্য থেকে রক্ষা পেতে কৃত্রিম ছায়ার জন্যই আবিষ্কার হয় ছাতা কিংবা আমব্রেলা!
২) ছাতা কোথায় বা কোন দেশে আবিষ্কার হয়েছে জানেন তো? আসলে ছাতার আবিষ্কার চীনে এবং সেটাও প্রায় তিন হাজার বছর আগে! আবিষ্কার করার পর ছাতার ব্যবহার শুরু করেন কোরিয়ানরা। তারপর এশিয়ার আরও কিছু দেশ। এরপরই ছাতা পাড়ি দেয় ইউরোপে। রোমানদের কাছেতো ছাতা খুবই পছন্দের এবং প্রিয় হয়ে উঠেছিল। ইউরোপের নবজাগরণের সময়েও ছাতার ব্যবহারের কথা জানা যায়।
৩) চীনে যখন ছাতা আবিষ্কার শুরু হয়, তখন ছাতার ব্যবহার ছিল শুধুমাত্র মেয়েদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। পুরুষ কিন্তু ছাতার ব্যবহার শুরু করেছে অনেক পরে। আর মেয়েদের ব্যবহারের জিনিস হলেও সব মেয়েরা শুরুর দিকে ছাতার ব্যবহার করতে পারত না। শুধুমাত্র সমাজের সম্ভ্রান্ত এবং আর্থিকভাবে শক্তিশালী পরিবারের মেয়েরাই ছাতার ব্যবহার করতেন। ছাতা ছিল সামাজিক প্রভাব, প্রতিপত্তির প্রতীক।
৪) বর্তমান সময়েও সবথেকে বেশি ছাতা তৈরি হয় চীনে। সে দেশের সংজিয়া শহরে পৃথিবীর সবথেকে বেশি ছাতা তৈরি হয়। সেই জন্যই সংজিয়াকে 'পৃথিবীর ছাতা'-ও বলা হয়ে থাকে। গোটা চীনে যত পরিমাণ ছাতা তৈরি হয়, তার ৩০ শতাংশেরও বেশি তৈরি হয় সংজিয়াতেই। শুধু এই শহরেই ছাতার হাজারেরও বেশি কারখানা রয়েছে! এই শহরের একজন ছাতা কর্মচারী সারাদিনে অন্তত ৩০০ টি ছাতা তৈরি করেন। প্রতি ঘণ্টায় ৪০টি ছাতা তৈরি করেন গড়ে!
৫) যেহেতু ছাতা ছিল মেয়েদের ব্যবহারের জিনিস, তাই ছেলেদের এটা ব্যবহার করা হত না। জোনাস হানওয়ে নামের এক ইংরেজ প্রথম প্রকাশ্যে ছাতা ব্যবহার শুরু করেছিলেন। তাকে দেখার পর থেকেই ইউরোপে পুরুষরা ছাতা ব্যবহার করা শুরু করেন।
৬) পুরুষরা ছাতা ব্যবহার করার পর থেকে, এটা আর শুধু রোদ্র থেকে বাঁচার জিনিস রইল না। বরং, ছাতাই হয়ে গেল, আত্মরক্ষার অন্যতম অস্ত্র! বুলগেরিয়ার প্রেসিডেন্ট জিওর্জি মারকোভতো নিজের নিরাপত্তার জন্য ছাতার মধ্যে সরু তরোয়াল লুকিয়ে রাখতেন!
বিডি প্রতিদিন/৩১ জুলাই ২০১৬/হিমেল-১২