সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া স্টেশনে 'লালমনি' এবং 'একতা' আন্তঃনগর এক্সপ্রেস ট্রেনের মুখোমুখি সংঘর্ষে ২ জন নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আরও অন্তত ৪০ জন আহত হয়েছেন। এছাড়াও একটি বগি ট্রেনের ইঞ্জিনের উপরে ওঠে গেছে এবং ৩টি বগি লাইনচ্যুত হয়েছে। আজ রবিবার ভোর ৪টার দিকে উল্লাপাড়া উপজেলার উল্লাপাড়া রেলওয়ে স্টেশনে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
নিহতরা হলেন: নাটোর সদর উপজেলার হরিশপুর গ্রামের আলতাফ হোসেন (৩৫) ও লালমনিরহাটের আদিতমারি স্টেশন মাস্টার মজিবুর রহমান (৪৫)।
সংবাদ পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের ৪টি ইউনিট, র্যাব-পুলিশ ঘটনাস্থলে উদ্ধার অভিযান পরিচালনা করেন। এ ঘটনার পর থেকে উত্তরাঞ্চল-ঢাকা রুটের সকল ট্রেন চলাচল বন্ধ রয়েছে। দুর্ঘটনার পর পরই জেলা প্রশাসক মো. বিল্লাল হোসেন ও পুলিশ সুপার এস এমরান হোসেনসহ পশ্চিমাঞ্চল রেল বিভাগ পাকশীর ঊর্ধ্বতন ও স্থানীয় উপজেলা প্রশাননের বিভিন্ন কর্মকর্তা দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। এদিকে, দুর্ঘটনার পর থেকে উল্লাপাড়া রেলওয়ে স্টেশন মাস্টার খান মনিরুজ্জামান ও সহকারী স্টেশন মাস্টার কুতুবুদ্দিন পলাতক রয়েছেন।
লালমনি এক্সপ্রেসের গার্ড হুমায়ুন আহমেদ জানান, লালমনিহাট থেকে ঢাকাগামী লালমনি এক্সপ্রেস ট্রেনটি স্টেশনের ১নং লাইনে দুই মিনিট দাঁড়িয়ে থাকার সিগন্যাল পেয়ে ট্রেনটি ধীরে ধীরে চলতে শুরু করে। এ সময় ঢাকা থেকে দিনাজপুরগামী একতা এক্সপ্রেস ট্রেনটি একই রেললাইনে দ্রুত ঢুকে গেলে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। বিকট শব্দে পুরো এলাকা প্রকম্পিত হয়ে ওঠে। যাত্রীরা আতঙ্কে এদিক-ওদিক ছোটাছুটি শুরু করেন। সংঘর্ষে একতা এক্সপ্রেসের একটি বগি ট্রেনের ইঞ্জিনের উপর উঠে যায়। তিনটি বগি লাইনচ্যুত হয়ে পড়ে। এসময় লালমনি এক্সপ্রেসে ট্রেনের গার্ডব্রেক রুমে থাকা ৫ জন আহত হয়। একতা এক্সপ্রেসের পাওয়ার কারে থাকা অন্তত ৭ যাত্রী আহত হয়। এদের লালমনি এক্সপ্রেসের গার্ডব্রেক রুমের মধ্যে থাকা লালমনিরহাটের আদিতমারি স্টেশন মাস্টার মজিবুর রহমান (৪৫) মারা যায় এবং তার দুই ছেলেসহ ৩ জন আহত হয়। একতা এক্সপ্রেস ট্রেনের পাওয়ার রুমের সামনে সিটে বসে থাকা আলতাফ হোসেন মারা যায় এবং তার শ্বশুরসহ অন্তত ৬ জন আহত হয়। এছাড়াও দ্রুত নামার সময় এবং সংঘর্ষের সময় প্রচণ্ড ঝাকুনিতে প্রায় ৩০ জন আহত হয়।
তিনি আরও জানান, লালমনি এক্সপ্রেস ট্রেনটির উল্লাপাড়া স্টেশনে যাত্রা বিরতি রয়েছে। কিন্তু একতা এক্সপ্রেসের যাত্রা বিরতি নাই। যে কারণে একতা ট্রেনটি দ্রুতগতিতে স্টেশনের দিকে আসছিল। মূলতঃ স্টেশনে দায়িত্বরতদের ভুল সিগন্যালের কারণেই এ দুর্ঘটনা ঘটেছে।
উল্লাপাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তাজুল হুদা জানান, র্যাব-পুলিশের পাশাপাশি ফায়ার সার্ভিসের ৩টি টিম উদ্ধার অভিযানে অংশ নিয়েছে। দুর্ঘটনা কবলিত ট্রেনের ২টি ইঞ্জিন ও ২টি বগি লাইনচ্যুত হয়েছে। লালমনি এক্সপ্রেস ট্রেনের উপর ইঞ্জিন উঠে পড়ায় একতা এক্সপ্রেস ট্রেনটি বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। দুর্ঘটনার পর লাফিয়ে নামতে গিয়ে আরও বেশকিছু যাত্রী আহত হয়েছে। এদের স্থানীয় হাসপাতাল ও ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়েছে।
পাবনা ফায়ার সার্ভিসের সহকারী পরিচালক সাইদুল ইসলাম জানান, সিরাজগঞ্জ, শাহজাদপুর, পাবনা ও বেড়া ফায়ার সার্ভিসের ৪টি টিম উদ্ধার তৎপরতায় অংশ নেয়ার পর ২ জনকে নিহত ও ১২ জনকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। দুর্ঘটনার জন্য তিনি সিগন্যালম্যান ও স্টেশন মাস্টারসহ কর্তব্যরতদের অবহেলাকে দায়ী করেছেন।
পশ্চিমপাঞ্চল রেলের বিভাগীয় পরিচালক (পাকশী) মাসুদুর রহমান জানান, ভোর ৭টায় রির্জাভ ট্রেন উদ্ধার তৎপরতা শুরু করেছে। দুর্ঘটনার প্রকৃত কারণ উদঘাটনে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।