পুরান ঢাকার প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী আদর্শ বিদ্যাপীঠ বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজ। দুর্নীতির কলুষমুক্ত থেকে উন্নত শিক্ষা বিতরণই এ কলেজের বৈশিষ্ট্য। প্রায় দেড়শ' বছর আগে ঢাকার ফরাশগঞ্জে স্কুল হিসেবে চালু হলেও বর্তমানে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর করার সুযোগ রয়েছে এই কলেজটিতে। চারদিকে প্রাচীরবেষ্টিত বদরুন্নেসা কলেজের অভ্যন্তরে অত্যন্ত মনোরম ও নিরাপদ পরিবেশে শিক্ষা-কার্যক্রম এগিয়ে চলছে। নারীশিক্ষা প্রসারে এই কলেজ 'বাংলাদেশ' জন্মের আগেই পথ চলা শুরু করে। ঐতিহ্যবাহী কলেজটি ২০০২ সালে ঢাকা বিভাগে শ্রেষ্ঠ কলেজের মর্যাদা পায়। এই কলেজেরই ছাত্রী ছিলেন আজকের প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা। এবং এখান থেকেই নেতৃত্বের বড় একটি পাঠ নিয়েছিলেন তিনি। শুধু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাই নন, দেশের প্রথম নারী উপাচার্য ড. ফারজানা ইসলামসহ অনেক কৃতি নারীই এখানে লেখাপড়া করে দেশের মুখ উজ্জ্বল করেছেন।
গত বছর কলেজের একটি স্মরণিকায় আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্মৃতিচারণ করে লিখেছিলেন, 'প্রথম ক্লাস শুরুর দিন। খুবই উৎসাহ, সারারাত যেন আর ঘুমই হয় না। সকালে উঠেই তৈরি হলাম। প্রথম দিন কলেজে যাব। নতুন সালোয়ার-কামিজ মা তৈরি করে দিয়েছেন। খুবই সুন্দর প্রিন্ট, একেবারে নতুন বাজারে এসেছে।...কলেজের ভেতরে পা রাখলাম। কত স্বপ্ন, মনে কী উৎসাহ, ক্লাসে যাব। ক্লাস রুমগুলো খুঁজে নিতে হবে। রুটিন জানতে হবে। শিক্ষকদের সঙ্গে পরিচিত হতে হবে। মনের মাঝে একটা উদ্বেগও কাজ করছে। কলেজজীবনের প্রথম দিন। দারুণ উত্তেজনা, উদ্দীপনা।'
গভর্নর অ্যাসলি ইডেনের নাম অনুসারে প্রতিষ্ঠানটির নাম হয় ইডেন গার্লস স্কুল। দেশ বিভাগের পর এটি বকশি বাজারে স্থানান্তরিত হয়ে সরকারি কলেজে রূপান্তিত হয়। ব্রিটিশ শাসনের শেষের দিকে ১৯৪০ সালে পূর্ববঙ্গে তৎকালীন ইডেন ভবনে কলেজটি স্থাপিত হয়। তখন এর নাম ছিল 'ইডেন স্কুল ও কলেজ'। বেশ কয়েকবার নামবদলের পর ১৯৭৪ সালে বাংলাদেশের প্রথম শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী বেগম বদরুন্নেসা আহমদের মৃত্যুর পরে তাঁর নামানুসারে কলেজের নামকরণ করা হয় 'বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজ'।
২ দশমিক ১৫ একর জায়গা নিয়ে গড়ে উঠেছে কলেজ প্রাঙ্গণ। মাঝখানে এক টুকরো সবুজ মাঠ ঘিরে দাঁড়িয়ে আছে চারটি একাডেমিক ভবন। কলেজে উচ্চ মাধ্যমিকসহ ২০টি একাডেমিক বিভাগে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পড়ানো হয়। এ ছাড়া এখানে ডিগ্রি পড়ারও সুযোগ রয়েছে। কলেজের অনেক ছাত্রীর অবসর কাটে পাঠাগারে। ইনডোর-আউটডোর গেমসের বিভিন্ন ব্যবস্থাসহ যাতায়াতের জন্য রয়েছে দু'টি কলেজ বাস। আবার ক্যান্টিনের চা ছাড়া অনেক ছাত্রীর নাকি ক্লাসের ফাঁকে সময়ই কাটে না! আবৃত্তি, নাচ ও গানের চর্চা চলছে কলেজের বিভিন্ন ক্লাবে।
প্রায় আট হাজার ছাত্রীর জন্য আছেন দেড়শ' শিক্ষক। ক্যাম্পাসে একটি প্রশাসনিক ভবনসহ তিনটি একাডেমিক ভবন, দু'টি হোস্টেল, একটি অডিটোরিয়াম ও একটি পাঠাগার রয়েছে। সম্প্রতি ব্যাংক এশিয়ার অর্থায়নে আরো একটি বৃহৎ পাঠাগার (আকাশলীনা) নির্মাণ করা হয়েছে, যার উদ্বোধন করেছেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। একাডেমিক শিক্ষার পাশাপাশি এখানকার ছাত্রীরা সাংস্কৃতিক ও ক্রীড়াঙ্গনসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সাফল্যের স্বাক্ষর রেখে চলেছে।
বিডি-প্রতিদিন/০৩ জানুয়ারি, ২০১৬/মাহবুব