জাতীয় নির্বাচন ঘিরে এখনো সমঝোতার লক্ষণ দেখা যায়নি। যার যার পথেই বড় দুই দল নিজেদের অবস্থানে অনড়। সংঘাত নয়, সকল দলের অংশগ্রহণেই সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন দেশবাসীর প্রত্যাশা। নতুন বছরে সরকার, বিরোধী দল ও নির্বাচন কমিশনের জন্য গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের চ্যালেঞ্জ রয়েছে।
শনিবার সকালে পূর্বপশ্চিমবিডি.নিউজ আয়োজিত নতুন বছরঃকেমন হবে ভোট রাজনীতি শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনায় বক্তারা এ মন আশঙ্কার কথা জানান।
পূর্বপশ্চিম প্রধান সম্পাদক পীর হাবিবুর রহমানের সঞ্চালনায় এ মুক্ত আলোচনায় অংশ নেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য লে. কর্ণেল (অব.) ফারুক খান, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জে. (অব.) মাহাবুবুর রহমান, জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদ, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ইনাম আহমেদ চৌধুরী, সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আবুল হাসান চৌধুরী কায়সার, সাবেক নির্বাচন কমিশনার বিগ্রে. জে. (অব.) সাখাওয়াত হোসেন, সাবেক কূটনীতিক মহিউদ্দিন আহমেদ, সুজন সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার, নারী সংগঠক খুশি কবির, নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর জে. (অব.) আব্দুর রশিদ, জাতীয় প্রেসক্লাবে সাবেক সভাপতি খন্দকার মনিরুল আলম, ৭১ টেলিভিশনের পরিচালক বার্তা সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা, রাজনৈতিক বিশ্লেষক মোহাম্মদ শাহেদ, বিএনপির সহ-আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিষ্টার রুমিন ফারহানা, যুদ্ধাপরাধ ট্রাইবুনালের প্রসিকিউটর ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ প্রমুখ।
অনুষ্ঠান সঞ্চালন করতে গিয়ে স্বাগত বক্তব্যে পীর হাবিবুর রহমান বলেন, আমরা চাই নতুন বছরে সংঘাত নয়, উদ্বেগ উৎকন্ঠা নয়, শান্তিপূর্ণ রাজনীতি। আমরা চাই সকল দল ও জনগণের অংশগ্রহণে উৎসবমুখর নির্বাচন। আমরা নির্বাচনের মাধ্যমে একটি কার্যকর সংসদ ও জবাবদিহিমূলক শাসন ব্যবস্থা ফিরে পেতে চাই। সুমহান মুক্তিযুদ্ধে অঙ্গীকার একটি অসাম্প্রদায়িক উদার গণতান্ত্রিক শোষণমুক্ত বাংলাদেশের জন্য আমরা নিরন্তর কাজ করছি।
আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য কর্ণেল (অব.) ফারুক খান এমপি বলেছেন, সবাই বলেন ১৫৪জন বিনা প্রতিদ্বন্ধিতায় নির্বাচিত হয়েছে। প্রার্থী না থাকলে আমরা তো জোর করে প্রার্থী ধরে আনতে পারব না। ঘাড় ধরে দাঁড় করাতে পারি না। রংপুর ও কুমিল্লা নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে কারণ সুষ্ঠুভাবে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছে। নির্বাচন সংঘাতময় হয় যখন রাজনৈতিক দলগুলো সঠিক আচরণ করে না। নির্বাচনকে নির্বাচনের মতো মনে করি তাহলে প্রতিটি নির্বাচনই মডেল নির্বাচন হবে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জে. (অব.) মাহাবুবুর রহমান বলেন, নিছক ভোটের রাজনীতি অপরাজনীতির দিকে ঠেলে দেয়। এখনো গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়নি, এর দায় রাজনৈতিক দলগুলোর। তিনি বলেন, ‘আমরা মানুষের আশা আকাঙ্ক্ষা পূরণ করতে পারিনি। মানুষকে বিভ্রান্ত করেছি, শোষিত করেছি।’ আমরা দেখছি নির্বাচনের নামে ডাকাতি। এখানে দুর্নীতির মহোৎসব চলছে। যেখানে চিফ জাস্টিস প্রশ্নবিদ্দ সেখানে বিচার বিভাগের কাছ থেকে আমরা কি আশা করতে পারি। আইনের শাসনের কি অবস্থা তা আমরা বুঝতে পারি। আজকে দুর্নীতির মহোৎসব চলছে। বিভিন্ন ক্ষেত্রে আমরা সাধারণ মানুষের আশায় প্রতিফলনব ঘটাতে পারেনি।
জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদ এমপি বলেন, যারা নির্বাচনে হারে তারা কখনই নির্বাচন ভাল হয়েছে বলে স্বীকার করে না। আমাদের দুই দল নিজেদের মাছে লড়তে লড়তে তারা দুই দলই গণতন্ত্রের কাছে হেরে গেছে। জাতীয় পার্টি দেশে তৃতীয় শক্তি হতে পারত। কিন্তু এ দুইটি দলই বাংলাদেশে তৃতীয় রাজনৈতিক শক্তির উত্থান হতে দেয় না।এখানে তাদের মধ্যে দারুন মিল।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ইনাম আহমেদ চৌধুরী বলেন, বিভাজনের রাজনীতি পরিহার করে দেশের স্বার্থে পজিটিভ কাজ করতে হবে। স্বাধীনতার চেতনার কথা বলতে হলে আমাদেরকে একটি সুষ্ঠু, সুন্দর গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের কথা বলতে হবে। কারণ স্বাধীনতার চেতনাই ছিল গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ। আজকে বাংলাদেশে রাজনীতিতে যে সঙ্কট সৃষ্টি হয়েছে। সেখানে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করে একটি জাতীয় নির্বাচন আমাদের সকলকেই আয়োজন করতে হবে।
বিডি-প্রতিদিন/ সালাহ উদ্দীন