নতুন বছরের একাদশ সংসদের প্রথম অধিবেশন শুরু হয়েছে। এই অধিবেশন চলবে আগামী ১৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। তবে আগামী ১২ জানুয়ারি বিশ্ব ইজতেমার মোনাজাতের জন্য অধিবেশন মূলতবী থাকবে। সংসদের কার্য উপদেষ্টা কমিটির সভায় এই সিদ্ধান্ত হয়। নতুন বছরে জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশনে বৃহস্পতিবার রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ভাষণ দেন।
এর আগে অধিবেশনের শুরুতে গাইবান্ধা-৩ আসন থেকে নির্বাচিত চলতি সংসদের সদস্য ডা. ইউনুস আলী সরকার, সাবেক এমপি ফজিলাতুন্নেছা বাপ্পী, স্যার ফজলে হাসান আবেদসহ দেশের বিশিষ্ট জনদের মৃত্যুর কারণে উত্থাপিত শোক প্রস্তাবের ওপর আলোচনার শেষে সর্বসম্মতিক্রমে তা গৃহীত হয়। পরে রেওয়াজ অনুযায়ী অধিবেশন এক ঘণ্টার জন্য মুলতবি করা হয়। এটি চলতি সংসদের ষষ্ঠ ও নতুন বছরের প্রথম অধিবেশন।
বৃহস্পতিবার বিকাল সোয়া ৪টায় সংসদের অধিবেশন শুরু হয়। বৈঠকের শুরুতে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী সংসদের চলতি অধিবেশনের প্যানেল সভাপতির নাম ঘোষণা করেন। পরে চলমান সংসদের সদস্য মো. ইউনুস আলী সরকার, সাবেক এমপি ফজিলাতুন নেসা বাপ্পিসহ বিশিষ্ট জনদের মৃত্যুতে শোক প্রস্তাব উত্থাপন করেন। রেওয়াজ অনুযায়ী ইউনুস আলী সরকারের ওপর আলোচনা হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বিরোধী দলীয় নেতা বেগম রওশন এরশাদ, আওয়ামী লীগের শেখ ফজলুল করিম সেলিম, তোফায়েল আহমেদ, ডেপুটি স্পিকার অ্যাডভোকেট ফজলে রাব্বি মিয়া, জাতীয় পার্টির মশিউর রহমান রাঙ্গা প্রমুখ আলোচনায় অংশ নেন।
তারা মরহুমের জীবন ও কর্মের স্মৃতিচারণ করেন। পরে মরহুমদের স্মরণে এক মিনিট নিরবতা পালন ও আত্মার মাগরেফরাত কামনা করে মোনাজাত করা হয়।
কার্য উপদেষ্টা কমিটির বৈঠক :
বৃহস্পতিবার অধিবেশন শুরুর আগে সংসদের কেবিনেট কক্ষে কার্য উপদেষ্টা কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সংসদ সচিবালয়ের গণসংযোগ বিভাগ জানায়, সংসদ ভবনে বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদের ‘কার্য উপদেষ্টা কমিটির ষষ্ঠ বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী এমপি। বৈঠকে আগামী ১৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত একাদশ জাতীয় সংসদের ষষ্ঠ অধিবেশন পরিচালনার সিদ্ধান্ত হয়। প্রতিদিন বিকাল ৪টায় অধিবেশন শুরু হবে। আগামী ১২ জানুয়ারি বিশ্ব ইজতেমার মোনাজাতের জন্য অধিবেশন মূলতবী থাকবে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্ম শতবার্ষিকী ‘মুজিববর্ষ’ উদযাপন উপলক্ষে ২২-২৩ মার্চ জাতীয় সংসদের বিশেষ অধিবেশন অনুষ্ঠিত হবে।
অধিবেশনের শুরুর আগে ধানমন্ডি-৩২ নম্বরে অবস্থিত জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্মৃতি জাদুঘরে সকল সংসদ সদস্য জাতির পিতার প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে বিশেষ অধিবেশনে যোগ দিবেন। আগামী ১৯ মার্চ শিশু দিবস উপলক্ষে জাতীয় সংসদ শিশুদের নিয়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্ম শতবার্ষিকী ‘মুজিববর্ষ’-এর অনুষ্ঠান পালন শুরু করবে। কমিটির সদস্য, সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এমপি, বিরোধী দলীয় নেতা, রওশন এরশাদ, তোফায়েল আহমেদ, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, ওবায়দুল কাদের, রাশেদ খান মেনন, হাসানুল হক ইনু, মো. ফজলে রাব্বী মিয়া, আনিসুল হক, গোলাম মোহাম্মদ কাদের, আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, নূর-ই-আলম চৌধুরী বৈঠকে অংশ নেন।
সংসদের শোক প্রস্তাব গৃহীত
গাইবান্ধা-৩ আসনের সংসদ-সদস্য মো. ইউনুস আলী সরকারসহ আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি ফজিলাতুন নেসা বাপ্পি, ব্র্যাকের প্রতিষ্ঠাতা স্যার ফজলে হাসান আবেদ, সাবেক পররাষ্ট্র সচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম আলী, প্রধানমন্ত্রীর সামরিক সচিব মিয়া মোহাম্মদ জয়নুল আবেদীনসহ দেশের বিশিষ্ট জনদের মৃত্যুর কারণে উত্থাপিত শোক প্রস্তাবের ওপর আলোচনার শেষে সর্বসম্মতিক্রমে তা গৃহীত হয়। শোক প্রস্তাবে কওমী মাদ্রাসা বোর্ড বা আল হাইয়াতুল উলিয়া লিল জামিয়াতিল কওমিয়ার কো চেয়ারম্যান আল্লামা আশরাফ আলী, সাবেক বিচারপতি মাহমুদুল আমীন চৌধুরী, একুশে পদকপ্রাপ্ত পদার্থবিদ বীর মুক্তিযোদ্ধা অজয় রায়, কবি ও স্থপতি রবিউল হুসাইন, বীর মুক্তিযোদ্ধা বেনজীর আহমেদ সেলিম, জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত চিত্রগ্রাহক মাহফুজুর রহমান খান, ভাষা সৈনিক রওশন আরা বাচ্চু, সুরকার-সংগীত পরিচালক বাসুদেব ঘোষ, বীরাঙ্গনা আফিয়া খাতুন খঞ্জনি, বীরাঙ্গনা রাহেলা বেগম, সাবেক পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য (এমপিএ) মো. আব্দুল কাদের, সাবেক সংসদ-সদস্য ইকবাল হোসেন, এবাদত হোসেন মন্ডল, গুলজার আহমদ প্রমুখের মৃত্যুতে সংসদে গভীর শোক প্রকাশ করা হয়। পরে তিনিসহ অন্যান্য মরহুমদের আত্মার মাগরেফরাত কামনা করে মোনাজাত করা হয়।
অকাল মৃত সবাইকে কষ্ট দেয় : প্রধানমন্ত্রী
শোক প্রস্তাবের আলোচনায় অংশ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ডা. ইউনুস আলী সরকার ও ফজিলাতুন্নেছা বাপ্পীর অকাল মৃত্যুর কথা উল্লেখ করে বলেন, সবাইকেই এক সময় চলে যেতে হবে। কিন্তু অকাল মৃত্যু সবসময় সবাইকে কষ্ট দেয়।
তিনি আরও বলেন, ইউনুস আলী সরকার ছাত্র রাজনীতি থেকে ওঠে এসেছেন। তিনি এলাকায় ঘুরে ঘুরে বিনা পয়সায় চিকিৎসা দিতেন এমনকি ওষুধও কিনে দিতেন। এমন মানবপ্রেমী মানুষটি এতো তাড়াতাড়ি চলে যাবেন ভাবতে পারি না।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ফজিলাতুন্নেছা বাপ্পী যুব মহিলা লীগের সদস্য ছিলেন। ভবিষ্যতে তার উজ্জ্বল নেতৃত্বের সম্ভাবনা ছিল। তত্বাবধায়ক সরকারের সময় আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলক মামলা মোকাবেলায় তিনি সবসময় সক্রিয় ছিলেন। তার অকাল মৃত্যু মেনে নেয়া কঠিন।
ব্রাকের প্রতিষ্ঠাতা ফজলে হোসেন আবেদের কথা স্মরণ করে মৃত্যুর আগে প্রধানমন্ত্রী দেখা করতে গিয়েছিলেন জানিয়ে বলেন, তিনি বলেছিলেন তিনি আর বেশিদিন হয়তো বাঁচবেন না। সব দায়িত্ব বুঝিয়ে দিয়ে দিয়েছেন। তিনি একজন আমায়িক লোক ছিলেন। আমি প্রথমবার ক্ষমতায় আসার পর তাকে অনুরোধ করে ব্রাক ব্যাংক ও ব্রাক বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করিয়েছিলাম। তিনি সারা বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমুর্তি উজ্জ্বল করেছেন। প্রধানমন্ত্রী তার সামরিক সচিব মিয়া জয়নুল আবেদীন ও শায়খুল হাদীস আল্লামা আশরাফ আলীকে স্মরণ করে বলেন, কওমী মাদরাসার সনদ প্রদানের ক্ষেত্রে দুইজনই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন।
বিডি প্রতিদিন/এনায়েত করিম