হরতালকে গণতান্ত্রিক অধিকার বলার কোনো উপযোগিতা বাংলাদেশে এখন আর নেই। দুই সামরিক স্বৈরশাসকের সময়ের কথা না হয় বাদই দিলাম। কারণ তাদের দুজনকেই দেশের সর্বোচ্চ আদালত অবৈধ ক্ষমতা দখলকারী হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। কিন্তু নব্বই দশকের শুরু থেকে আজ পর্যন্ত গণতান্ত্রিক শাসনের সময়ে হরতালকারীদের সরাসরি আক্রমণের শিকার হয়ে কত মানুষ জীবন হারিয়েছেন তার কোনো লেখাজোখা নেই। কারণ, তারা প্রায় সবাই সাধারণ মানুষ, তাদের হিসাব কোনো সরকার বা রাজনৈতিক দল রাখে না। গত পাঁচ-সাত বছর আগেও দুয়েকটি পরিত্যক্ত খালি গাড়িতে পেট্রল ঢেলে আগুন দেওয়া এবং রাজপথে পুলিশের সঙ্গে হরতালকারীদের কিছু ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল হরতালের সহিংস চরিত্র। কিন্তু বিগত দুই-আড়াই বছর, বিশেষ করে ২০১৩ সালের প্রথম থেকে জামায়াতের যুদ্ধাপরাধী নেতাদের ফাঁসির রায় বের হওয়া শুরু হলে জামায়াতের ডাকা হরতাল এবং তাতে বিএনপির সমর্থনে হরতালকারীদের পক্ষ থেকে সরাসরি বিনা উসকানিতে ব্যাপকভাবে সাধারণ মানুষ ও পুলিশকে টার্গেট করে আক্রমণ এবং হত্যা করা হয়। কোনো কোনো জায়গায় পুলিশের পাল্টা গুলিতে হরতালকারীদের মধ্য থেকেও হতাহতের ঘটনা ঘটে। এই সহিংস হরতাল ও অবরোধের ভয়াবহ অমানবিক বীভৎস স্বরূপ দেখা যায় গত বছর ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত নির্বাচনের অব্যবহিত আগে। হরতাল-অবরোধকারী দলের ক্যাডার বাহিনী বাসভর্তি মানুষ, ট্রাকভর্তি অবলা প্রাণীর ওপর আক্রমণ চালায় এবং আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেয় খেটে খাওয়া মানুষের দোকানপাট ও আয়-রোজগারের শেষ সম্বল। গণতন্ত্র, বাকস্বাধীনতা বা ভোট রক্ষা যা-ই বলি না কেন, এমন বর্বর অমানবিক কুকর্ম যে কর্মসূচির মাধ্যমে হয় তাকে কি কোনো অজুহাতে সমর্থন করা যায়, নাকি সেটাকে আইনসিদ্ধ বলা যায়, নাকি বলা যায় গণতান্ত্রিক অধিকার। মানুষের জন্য দেশ, রাজনীতি, উন্নয়ন, সবকিছু। সবকিছুর আগে মানুষ। গণতন্ত্র ও নিয়মতন্ত্রের কথা যখন বলবেন, তখন একজন মানুষের জীবন যেতে পারে এমন কোনো কর্মসূচি চলতে পারে না। আর কেউ যদি সশস্ত্র বিপ্লব বা যুদ্ধ করতে চান, সেটা ভিন্ন ব্যাপার। মানুষকে মেরে অথবা মানুষ মারার কর্মসূচি দিয়ে যারা মুখে বলেন তারা গণতন্ত্র ও উন্নয়ন চান, তখন সেটি কি শুধুই প্রহসন ও প্রবঞ্চনা নয়। মানুষ মরছে এটাই বাস্তবতা, এটাই মুখ্য। নির্দিষ্টভাবে কে দায়ী তা এখন গৌণ। কারণ, রাষ্ট্রসহ আমরা সবাই মিলে ব্যর্থ হয়েছি ওই হত্যাকারীদের শাস্তি দিতে। সুতরাং মানুষকে বাঁচাতে হলে হরতালকে না বলতে হবে, বিদায় দিতে হবে। বাংলাদেশের রাজনীতিকরা যখন বলেন ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য নয়, জনকল্যাণের জন্য রাজনীতি করেন, তখন তা এখন বিশ্বসেরা কৌতুকের মতো শোনায়। হরতাল বা ধ্বংসযজ্ঞের কর্মসূচি না দিয়ে বিরোধী পক্ষ ক্ষমতাসীন দলের স্বাস্থ্য, শিক্ষা, জ্বালানি, অবকাঠামো, যোগাযোগ, কৃষি, খাদ্য, অর্থনীতি, বিদেশনীতি, বিদ্যুৎ ও প্রযুক্তিনীতি এবং কার্যক্রম প্রসঙ্গে তথ্যমূলক কঠোর সমালোচনা করে নিজেদের আগামী দিনের কর্মসূচিকে বিশ্বাসযোগ্য আকারে তুলে ধরলে বোঝা যেত তারা জনকল্যাণ চান। কারণ, জনকল্যাণ করতে হলে এসব কর্মসূচির মাধ্যমেই করতে হবে। জনকল্যাণ কোনো বায়বীয় বিষয় নয়। প্রতিটি বিষয় তথ্য-উপাত্তের সূচকে এখন মাপা যায়। একদল বলবে উন্নয়নের জোয়ার সৃষ্টি করেছি, আরেক দল বলবে সব রসাতলে গেছে। এসব বায়বীয় কথা বলার দিন শেষ। মিডিয়ার সুবাদে মাসান্তে, বছরান্তে অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি ও মূল্যস্ফীতির হার, দারিদ্র্য বিমোচন, খাদ্য, বিদ্যুৎ উৎপাদনের উঠা-নামা সব কিছু মানুষ অঙ্কের হিসাবে দেখতে পারছে। বর্তমান আওয়ামী লীগের সরকারের সঙ্গে বিগত বিএনপি সরকারের পারফরমেন্স তুলনা করতে পারছে। গণতন্ত্র, নির্বাচন, বাকস্বাধীনতা যা-ই বলি না কেন, সব কিছুরই প্রয়োজন আছে, তবে এর কোনোটাই শেষ কথা নয় (Not end by itself)। শেষ কথা হলো-
২. মানুষের জীবন-সম্পদের নিরাপত্তা ও সামাজিক এবং অর্থনৈতিক অগ্রগতি। শেষ বিচারার্য এটাই। সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন, সঙ্গে নিরাপত্তা নিশ্চিত হয়েছে বলেই ১৩০ কোটি মানুষের দেশ চীনকে আমেরিকা গণতন্ত্রের ধুয়া তুলে, শত উসকানি দিয়েও এক তিল নড়াতে পারেনি। ক্ষমতা কোনো দলের জন্য চিরস্থায়ী নয়। মানুষ চাইলে শান্তিপূর্ণ পথেই বিএনপি আবার ক্ষমতায় যেতে পারে। বর্তমান ক্ষমতাসীন দল, জনসমর্থন ও জনসন্তুষ্টি ব্যতিরেকে কলাকৌশলে তা যদি ঠেকিয়ে রাখতে চায় তাহলে সেটি বুমেরাং হবে। বিএনপির বোঝা উচিত ১৯৯৬ ও ২০০৬ সালে তারা নিজেরা বহু কূটকৌশলে ক্ষমতায় টিকে থাকার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছে। সময় যতই পেরুচ্ছে ততই জনমানুষকে ফাঁকি দেওয়ার দিন কঠিন হয়ে যাচ্ছে। কেউ তা পারবে না। গত ২৯ ডিসেম্বর হরতালে বিএনপির পিকেটারদের ইটের আঘাতে প্রাণ হারিয়েছেন একজন অপার সম্ভাবনাময় জীবনের আকাঙ্ক্ষী স্কুলশিক্ষিকা শামসুন নাহার ঝর্ণা। এতিম হলো একজন শিশু, অনিশ্চিত হয়ে গেল তার ভবিষ্যৎ। মায়ের আপত্য ছায়ার অভাবে ঝর্ণা বেগমের এই শিশু যদি ভুল পথে গিয়ে পরিণত বয়সে সমাজের বোঝা হয়ে যায়, তার জন্য দায়ী হবে কে? হরতাল সমর্থক রাজনীতিবিদদের এই প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে। এ পর্যন্ত হরতালে যত মানুষকে হত্যা করা হয়েছে তার একটি হত্যাকাণ্ডেরও বিচার হয়নি। শামসুন নাহার ঝর্ণা হত্যারও বিচার হবে না। কারণ, যারা হত্যা করেছে তারা সবাই একটি রাজনৈতিক দলের কর্মী। তাদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দিয়ে আদালতে তা প্রমাণ করতে পুলিশ অক্ষম। তা ছাড়া মামলা দিলে আবার হরতাল, কারণ মূল দল থেকে বলা হবে রাজনৈতিক হয়রানির জন্য মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়েছে তাদের নেতা-কর্মীদের নামে। তারপর আমাদের পুলিশের নৈতিকতা ও সততা নিয়েও তো অনেক প্রশ্ন আছে। তাহলে সাধারণ মানুষের রক্ষাকবচ কোথায়? হরতাল ডাকা বা পালন করা যদি গণতান্ত্রিক ও ব্যক্তি স্বাধীনতার বিষয় হয়, তাহলে তা প্রত্যাখ্যান ও পালন না করাও গণতান্ত্রিক অধিকার। এ কথা ঠিক হলে হরতালকারীরা রাস্তায় নেমে পিকেটিংয়ের নামে কেন চলাচলকারী মানুষ ও যানবাহনের ওপর আক্রমণ করবে এবং আগুন দেবে। এই যদি হয়, তাহলে হরতালের ওপর মানুষের কতটুকু সমর্থন আছে তার পরিমাপ কিভাবে হবে? হরতাল সম্পর্কে আমাদের সার্বিক মানসকাঠামোর পরিবর্তন হওয়া দরকার। ঢিলেঢালা হরতাল হলে একশ্রেণির মানুষ এবং মিডিয়াকর্মীদের বলতে শুনি, হরতাল ছিল নিরুত্তাপ, নেতা-কর্মীরা মাঠে নেই। অজান্তে এটা কি সহিংস হতে এক ধরনের উসকানি নয়? এক সময় পিকেটিংয়ের উদ্দেশ্য ছিল হরতালের কারণ ও বিষয়ের ওপর জনমত গড়ার জন্য মানুষের কাছে লিফলেট বিতরণসহ বিভিন্নভাবে আবেদন জানানো। এখন তো পিকেটিং মানে আগুন দেওয়া ও মানুষ হত্যা করা। সুতরাং সময়ের বিবর্তনে হরতালের উপযোগিতা ও আবেদন দুটিই শেষ হয়ে গেছে। মানুষের জন্য, জনগণের সম্পদ রক্ষার জন্য মিডিয়াসহ, সর্বস্তরের মানুষ, সুশীল সমাজ এবং মানুষের শেষ আশ্রয়স্থল দেশের সর্বোচ্চ আদালত, সবাইকে সময়ের ডাকে সাড়া দিয়ে হরতালের অভিশাপ থেকে জাতিকে মুক্ত করার জন্য এগিয়ে আসতে হবে। সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের মতামতকে প্রাধান্য দেওয়া যদি গণতন্ত্রের মূলমন্ত্র হয়ে থাকে, তাহলে আজকে বাংলাদেশের ব্যাপক সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ যে হরতালের বিরুদ্ধে তা যে কোনো পন্থায় প্রমাণ করতে চাইলে প্রমাণিত হবে। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের পর গত এক বছর দেশে শান্তি বিরাজ করছে। ব্যবসা-বাণিজ্য, সামাজিক-অর্থনৈতিক কোনো খাতই পিছনের দিকে যায়নি। সামনে আরও কতখানি যেতে পারত তা নিয়ে তর্ক হতে পারে এবং হওয়া উচিত বলে আমি মনে করি। নানা কারণে সরকারের বিরুদ্ধে মানুষের ক্ষোভ থাকা অস্বাভাবিক নয়। কিন্তু আমার বিশ্বাস, দেশের বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ বলবে গত এক বছর যে রকম শান্তি বজায় ছিল তা যেন আগামীতেও বজায় থাকে। বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের গত ৫ জানুয়ারি গণতন্ত্র রক্ষা কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে আবার ব্যাপক হারে জননিরাপত্তা বিঘ্নিত হয়েছে এবং মানুষের জীবনযাত্রা হুমকির মুখে পড়েছে। ৬ জানুয়ারি মঙ্গলবার অবরোধ
৩. কর্মসূচি পালনকালে রাজশাহীতে ছাত্রশিবিরের মিছিল থেকে কোনো রকম উসকানি ছাড়াই অকস্মাৎ কর্তব্যরত পুলিশের ওপর আক্রমণ করা হয়। টেলিভিশনের খবরে এবং ৭ জানুয়ারিতে সব পত্রিকার প্রথম পাতায় ওই আক্রমণের ছবি সারা দেশের মানুষ দেখেছে। শিবিরের ক্যাডাররা পুলিশের অস্ত্র কেড়ে, সেই অস্ত্রের বাঁট দিয়ে পিটিয়ে দুইজন পুলিশ সদস্যকে মাটিতে ফেলে দিয়েছে। মাটিতে পড়ে যাওয়ার পরও শিবির ক্যাডাররা ওই দুই পুলিশ সদস্যকে পিটাতে থাকে। অস্ত্র দুটিও ভেঙে ফেলে। পরে বিজিবির সদস্যরা এসে পুলিশকে উদ্ধার করে। ২০১৩ সালের মাঝামাঝিতে নারায়ণগঞ্জ ও রাজশাহীতে একই রকম ঘটনা ঘটেছে। দেলাওয়ার হোসেন সাঈদীর ফাঁসির রায়কে কেন্দ্র করে জামায়াত-শিবিরের আন্দোলনের সঙ্গে যখন বিএনপি যোগ দিল তখন গাইবান্ধায় পুলিশ ফাঁড়িতে আগুন দিয়ে বিশ্রামরত পুলিশকে তারা হত্যা করল। ২৩ বছর পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ব্যাপক আন্দোলন-সংগ্রাম হয়েছে। কিন্তু সেই ঔপনিবেশিক দখলদার দেশের পুলিশের ওপরও সরাসরি কোনো আক্রমণ কোনো মিছিল-মিটিং থেকে কখনো করা হয়নি। ২০১৩ সালের আগে বাংলাদেশেও পুলিশের ওপর এমন নৃশংস আক্রমণ কেউ করেনি। কর্তব্যরত পুলিশের ওপর আক্রমণ তো রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণার শামিল। ওই দৃশ্য দেখে আমার মনে হয়েছে জামায়াত-শিবির একাত্তরের পরাজয়ের প্রতিশোধ নিচ্ছে এবং ২০১৩ সালে তাদের যুদ্ধাপরাধী নেতার ফাঁসির হুকুমের বিদ্বেষ ঝাড়ছে পুলিশের ওপর। এই নৃশংসতার নেপথ্যে রয়েছে এক ধরনের বর্বর রাজনৈতিক ক্রোধের তাড়না ও বহিঃপ্রকাশ। পুলিশের বিরুদ্ধে আমাদের অনেক অভিযোগ থাকতে পারে। তবে একবার নির্মোহ দৃষ্টিতে ভেবে দেখুন পুলিশ ফোর্স অকার্যকর হয়ে পড়লে কি ভয়াবহ অবস্থা হতে পারে। কোনো দেশপ্রেমিক মানুষের তা কাম্য হতে পারে না। কিন্তু আমাদের রাজনৈতিক দলগুলো ক্ষমতার জন্য এতই অন্ধ যে, নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলনের সীমা কোথায় সেটিও তারা ভুলে যান। আমার মনে হয় এর সবকিছু করা হচ্ছে একটি সূক্ষ্ম পরিকল্পনার অংশ হিসেবে। পুলিশের ওপর পরিকল্পিত আক্রমণ ও র্যাব বাহিনী বিলুপ্তির দাবির মধ্যে কোনো সংযোগ আছে কিনা এবং বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে অকার্যকর করে দেওয়ার সুদূরপ্রসারী কোনো দেশি-আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র আছে কিনা তা সংশ্লিষ্টদের খতিয়ে দেখা উচিত। মনে রাখা দরকার, অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাস মহাবিপর্যয় ডেকে আনে। একটি বাহিনীর কতিপয় সদস্যের দুষ্কর্মের জন্য সম্পূর্ণ ফোর্সের বিলুপ্তির দাবি অস্বাভাবিক, বিশ্বের কোথাও এমন উদাহরণ নেই। র্যাব বিলুপ্ত হলে শুধু একটি ফোর্স বিলুপ্ত হতো না, তার সঙ্গে সম্পূর্ণ পুলিশ বাহিনীর নৈতিক মনোবল সম্পূর্ণ ভেঙে পড়ত। নৈতিক মনোবল না থাকলে সেই ফোর্সের কার্যকরিতা নেমে আসে শূন্যের কোঠায়। তাতে কোনো রাজনৈতিক পক্ষের কি লাভ হতো তা বলা না গেলেও, এতটুকু বলা যায়, তার জের ধরে ধর্মান্ধ জঙ্গিগোষ্ঠীর ভয়াবহ উত্থান ও তৎপরতা শুরু হতো। কারণ জঙ্গিরা এরকম সুযোগেরই অপেক্ষায় থাকে, যার উদাহরণ আমরা দেখেছি বিশ্বের অন্যান্য জায়গায়। ধর্মান্ধ জঙ্গিরা এ দেশে সফল হতে পারবে না, এটা ঠিক। কিন্তু তাতে ভয়াবহ রক্তক্ষরণ হবে, অসংখ্যক মানুষের জীবন যাবে। এখন মূল প্রশ্ন হলো পুলিশ আর কত মার খাবে? পুলিশ কর্তৃপক্ষ এখন কি করবে? পুলিশের এই মার খাওয়া দেখে স্পষ্টতই বোঝা যায়, তাদের আইনগত শক্তি কোথায়, কিভাবে, কতটুকু প্রয়োগ করতে পারবে তার ওপর পুলিশ সদস্যদের আত্মবিশ্বাস নেই। আমার ধারণা পুলিশ তাদের রুলস অব ইনগেজমেন্টের (ক্ষমতা বা শক্তিপ্রয়োগের বিধি) সঠিক প্রয়োগ যদি করতে পারত তাহলে পুলিশকে এমন অসহায় বিব্রতকর অবস্থায় পড়তে হতো না। রাজনৈতিক দলের নেতারা, সুশীল সমাজ এবং মিডিয়া মাঝে মাঝে এমন বক্তব্য দেন, তাতে মনে হয় মরে গেলেও নিজের জীবন, জনগণের জীবন ও সম্পদ রক্ষার জন্য পুলিশ তাদের সর্বোচ্চ শক্তি অস্ত্রের ব্যবহার করতে পারবে না। এটা ঠিক নয়। রুলস অব ইনগেজমেন্ট সম্পর্কে পুলিশ সদস্যদের সঠিক প্রশিক্ষণ দেওয়া প্রয়োজন এবং তার যথার্থ প্রয়োগের জন্য আত্মবিশ্বাস ও আস্থা তৈরির ম্যাকানিজম পুলিশের চেইন অব কমান্ডের ভেতর সর্বক্ষণ বিদ্যমান থাকা দরকার। যাতে নিজেদের ও জনগণের জানমালের রক্ষার্থে রুলস অব ইনগেজমেন্টের সর্বোচ্চ শক্তির সঠিক প্রয়োগের মুহূর্ত এলে তাদের মধ্যে যেন দ্বিধাদ্বন্দ্বের সৃষ্টি না হয়। এখানে ৪.মাত্রা জ্ঞান ও সঠিক মুহূর্ত বুঝতে পারাটাই বড় বিষয়। এটাও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে রপ্ত ও উন্নত করা যায়। যে কোনো পুলিশ অ্যাকশনের পর স্বচ্ছ তদন্তের মাধ্যমে যদি প্রমাণ হয় পুলিশ রুলস অব ইনগেজমেন্টের মধ্যেই আছে, তাহলে পুলিশের আত্মবিশ্বাস বাড়বে।
পুলিশ কর্তৃপক্ষ আরেকটি কাজ করতে পারেন। রুলস অব ইনগেজমেন্ট সর্বসাধারণের বোঝার জন্য কিছু ব্যবস্থা নিতে পারেন। তাতে রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা এবং মিডিয়াকর্মীরা বিষয়টি উপলব্ধি করলে রুলস অব ইনগেজমেন্ট অনুসারে অ্যাকশন নেওয়া পুলিশের জন্য সহজ হবে। আর একই সঙ্গে সেটি জঙ্গি, সন্ত্রাসী ও দুর্বৃত্তরাও জানতে পারবে এবং বুঝবে পুলিশের অস্ত্র কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা বা পুলিশের ওপর আক্রমণ করলে তারাও নিরাপদে পার পাবে না। যত নীতি ও অধিকারের কথা বলি না কেন, দেশের মানুষের জীবন ও সম্পদের নিরাপত্তা সবকিছুর ঊর্ধ্বে।
লেখক : কলামিস্ট ও নিরাপত্তা বিশ্লেষক।