সরকার এবং বিরোধী দলের লাগাতার অবরোধে নতুন বছরের এ ক'দিনে মানুষের নাভিশ্বাস উঠেছে। কামার, কুমার, জেলে, তাঁতি- যারা ছোটখাটো কাজ করে খায় তাদের জীবন দুর্বিষহ। যাদের বড় বড় কারবার, তাদের অবস্থাও গুরুচরণ। সেদিন এক ব্যবসায়ীর কাছে শুনলাম, চট্টগ্রাম থেকে মালপত্র আনতে প্রতি ট্রাকে ২০ হাজার টাকা অতিরিক্ত গুনতে হচ্ছে। সঙ্গে আবার অঙ্গীকার করতে হচ্ছে, রাস্তায় মালামাল জ্বলেপুড়ে খাক হয়ে গেলে পরিবহন কর্তৃপক্ষ দায়ী হবে না। প্রতিদিন বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের আকাশছোঁয়া মূল্য তো আছেই, সেদিকে কারও কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই। যাদের এক মিথ্যা কথায় আসমান ভেঙে পড়তে পারে, তাদের কথায় সত্য খুঁজতে দুরবিন লাগে। ৩ জানুয়ারি থেকে বেগম খালেদা জিয়া বন্দী। সরকার বলছে, তার চলাফেরায় বিধিনিষেধ নেই। অথচ একদিকে ইট-বালু-পাথরের গাড়ি, অন্যদিকে পুলিশের জলকামান, সারি সারি শত শত মহিলা পুরুষ পুলিশ- মানুষ কোনটা সত্য বলে বিশ্বাস করবে? চোখে দেখা, নাকি নেতা-নেত্রীদের বলা? একটা দেশের প্রধানমন্ত্রী তার কথা হবে লোহার লাকির, লক্ষণ রেখা। সরকার চালাতে গিয়ে নিশ্চয় কলাকৌশল করবেন। তবে চোখে দেখা মিথ্যা বলে মানুষের মনে কেন আঘাত দেবেন? মানুষ তাদের রাষ্ট্রীয় কর্ণধারদের সৎ এবং পবিত্র দেখতে চায়। মিথ্যা বললে পবিত্রতা থাকে কোথায়? ঢাকা এক যানজটের শহর, উদ্দেশ্য করে কাউকে কোথাও যেতে দিতে না চাইলে ফেরানোর কত পথ আছে। কিন্তু ক্যামেরায় মানুষ যা দেখছে তার বিপরীত বললে দেশবাসী বিশ্বাস করবে কী করে? অমন অসত্য নিজের ছেলে-মেয়েরাও বিশ্বাস করবে না। আজ ৪-৫ দিন এ নিয়ে একটা লম্বা বিশ্লেষণ করতে চেয়েছিলাম। ভারতীয় জনতা পার্টির সভাপতি আহত বেগম খালেদা জিয়াকে ফোন করলেই কী, আর না করলেই কী? খোঁজ নিলে কতটা লাভ, আর না নিলে কতটা ক্ষতি? বলতে চেয়েছিলাম, তিনবারের প্রধানমন্ত্রী, সত্তরের ওপর বয়স যার তাকে তো তার বয়সের একটু লেহাজ করতে হবে। বর্তমান প্রধানমন্ত্রীও তো প্রাক্তন হতে পারেন। তেমন হওয়ার পরও আল্লাহ যদি তাকে বাঁচিয়ে রাখেন তাকেও কী এমন অপমান-অপদস্থ হতে হবে? দেশের মানুষ কিন্তু তেমন চায় না। দেশের মানুষ চায়, তারা শান্তিতে থাকুন, নিরাপদে থাকুন। যুবরাজ তারেক রহমান যেভাবে স্বাধীনতা নিয়ে, স্বাধীনতার প্রাণপুরুষ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে কথাবার্তা বলছেন তাতে সবাই মর্মাহত। যে কারণে এমন একটা সংঘাতপ্রবণ আন্দোলনে দলীয় নেতা-কর্মীর অংশগ্রহণ নেই, সাধারণ মানুষের সাড়া নেই। আজকাল রাজনৈতিক দলগুলো সাধারণ মানুষের ইচ্ছা-অনিচ্ছার প্রতি খুব একটা তোয়াক্কা করে না। অথচ পানি ছাড়া যেমন মাছ বাঁচে না, জনগণের সমর্থন ছাড়া রাজনীতি চলে না। যেহেতু কোট-প্যান্ট, টাই-টুই পরা রাজনৈতিক নায়ক-নায়িকারা তিন দশক যাবৎ সব সুযোগ-সুবিধা ভোগ করছে, লুটপাট করছে- তাই সাধারণ নেতা-কর্মীরা দেখতে চায়, আগে নেতারা নামুক, তারপর তারা নামবেন। শিল-পাটায় ঘষাঘষি মরিচের জান ক্ষয়ের মতো সাধারণ মানুষ আর আগ বাড়িয়ে এগুতে চায় না। তাতে শক্তিমানদের কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই। আমরা কোনো এক অন্ধকার গহ্বরের দিকে এগিয়ে চলেছি যা কেউ বলতে পারছি না।
এসব চিন্তা নিয়ে যখন লিখতে বসব, ঠিক তখন খবর এলো প্রিয় সাথী বাবুল হক ইহলোক ত্যাগ করেছে। একটু পরই খবর পেলাম দেশের প্রখ্যাত চলচ্চিত্র পরিচালক চাষী নজরুল ইসলাম আর নেই। চাষী নজরুল পাকিস্তানের সময়ই ২-৪টি ছোটখাটো কাজ করেছেন। কিন্তু স্বাধীনতার পরপরই 'ওরা এগারো জন' পরিচালনা করে স্বাধীন দেশের টগবগে রক্তের যুবকদের দৃষ্টি কেড়েছিলেন। বড় সজ্জন মানুষ ছিলেন তিনি। বঙ্গবন্ধুর সময় আমরা একটু বড় ছিলাম, তিনি খানিকটা ছোট ছিলেন। কিন্তু ইদানীং খুবই নামকরা মানুষ ছিলেন। কিন্তু আমার সঙ্গে সম্পর্ক রেখেছিলেন ভাইয়ের মতো। কোনো কাজ নেই, কর্ম নেই- সেই সিলেটের সুনামগঞ্জের হাওরে শুটিং করতে গেছেন, সেখান থেকে ফোন, 'ভাই কেমন আছেন? শাহ আবদুল করিমের এখানে শুটিং করতে এসেছি। আপনার কথা মনে পড়ল তাই ফোন করলাম।' রাত ১২টা, ১টায় ফোন, 'কেমন আছেন? দোয়া করবেন।' কত অনুষ্ঠানে কতবার দেখা হয়েছে। সজ্জন মানুষ হারিয়ে গেলে বুক বড় বেশি খালি খালি লাগে।
আমার বাবুল হক চাষী নজরুলের মতো বিখ্যাত ছিল না। কিন্তু এক দারুণ কর্মবীর ছিল। আমার পাড়ায়ই তার বাস। তারা ৪-৫ ভাই। মুক্তিযুদ্ধের আগে বাবুল হককে খুব ভালো করে জানতাম না। ওর বড় ভাই জিন্নাহ আমার সঙ্গে প্রাইমারি স্কুলে পড়ত। আদু ভাই হয়ে স্কুলে গিয়েছিলাম, তাই জিন্নাহও আমার থেকে ২-৩ বছরের ছোট ছিল। ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে বাবুল হক হাসপাতালে ছিল, সেখানেই সে প্রাণত্যাগ করেছে। বুদ্ধিজীবী কবরস্থানের যেদিন সূচনা হয়, সেদিন বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে গিয়েছিলাম। আর সেদিন গিয়েছিলাম বাবুল হকের কবরের সময়। তার পরিবারের লোকজন আসার আগে বিশাল কবরস্থানের পাশ দিয়ে যখন ঘুরছিলাম, তখন বারবার মনে হচ্ছিল সব মানুষের এখানেই শেষ ঠিকানা। '৭৫-এ বঙ্গবন্ধু হত্যার এক প্রতিরোধ সংগ্রামী জগলুল পাশা সকালেই ফোন করে বাবুল হকের মৃত্যুর সংবাদ দিয়েছিল। জানাজায় শরিক হতে না পারলেও বাবুলের মুখটা শেষবার দেখার ইচ্ছায় গিয়েছিলাম মিরপুর বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে। কবরে নামানোর আগে যখন শুকনো মুখ দেখলাম তখন বুকের ভিতর ছ্যাৎ করে উঠেছিল। বাবুল হকের অমন মুখ আমি দেখিনি। সবকটি দাঁত পড়ে গেছে। চাপা ভাঙা, উপর আর নিচের পাটি ফাঁকা। চোখে কয়েক ফোঁটা পানি এসেছিল কিন্তু তা আমি মাটিতে পড়তে দেইনি। গামছায় ভিজিয়ে নিয়েছিলাম। যখন ফিরে আসছিলাম পা চলছিল না, বুকের ভিতর উথাল-পাতাল কত স্মৃতির আলোড়ন উঠেছিল।
১৯৭১-এর সেপ্টেম্বর, চারদিকে হানাদার কামানের গর্জন। ওই সময় এক রাতে দেলদুয়ারের লাউহাটিতে ব্যারিস্টার শওকত আলী খানের বাড়ি গেছি। তার চাচাতো ভাই কামাল খান লাউহাটির চেয়ারম্যান। তাদের বাড়ির সামনের বিরাট মাঠে ব্রিগেডিয়ার ফজলুর রহমান ট্রেনিং দিচ্ছেন। এক অসাধারণ উন্নত ট্রেনিং। সেখানেই হঠাৎ বাবুল হকের সঙ্গে দেখা। প্রথম প্রথম তাকে আমার কাছে আসতে দেয়নি। পরে কীভাবে যেন ফজলুর রহমানের অনুমতি নিয়ে এসেছে। সেই যে '৭১-এ কাছে আসা, কত ঝড়, তুফান, ঘূর্ণি গেল কেউ আর তাকে দূরে সরাতে পারেনি। গতকাল মৃত্যু তাকে নিয়ে গেছে। আশরাফুজ্জামান রতন, বাবুল তালুকদার কাদেরিয়া বাহিনীর ছবি তুলত, থানাপাড়ার বজলুর রহমান কুতুব পরে ডেপুটি সেক্রেটারি হিসেবে মারা গেছে। সে জি সাহার স্টুডিওতে রাতভর প্রিন্ট করে মুক্তিবাহিনীর হেডকোয়ার্টারে ছবিগুলো পৌঁছে দিত। সে দলের সঙ্গে বাবুল হককেও যুক্ত করা হয়। এর পর আর কিছু বলতে হয়নি। সামাদ গামার মটর প্লাটুন, আজিজ বাঙালের বেতার বিভাগ, খোরশেদ আলম আর.ও., হামিদুল হক বীরপ্রতীক, আউয়াল সিদ্দিকী ও ওসমান গনির খাদ্য বিভাগ, শাহজাদা চৌধুরী, নিশি রঞ্জন সাহা, আমজাদ মাস্টার, শুকুর মাহমুদের হাসপাতাল, আনোয়ারুল আলম শহীদ, কবি রফিক আজাদ, বুলবুল খান মাহবুব, ফারুক আহমেদ, সৈয়দ নুরু, শওকত মোমেন শাজাহান, আব্দুল্লাহর প্রচার এবং রণাঙ্গন যেভাবে আপন গতিতে চলেছে তার চেয়েও দ্রুত চলতে শুরু করে কাদেরিয়া বাহিনীর চিত্রগ্রহণ বিভাগ। স্বাধীনতার পর বাবুল হক কত দুর্লভ ছবি তুলেছে। ২৪ জানুয়ারি ১৯৭২ বঙ্গবন্ধু নিজে টাঙ্গাইল গিয়ে কাদেরিয়া বাহিনীর অস্ত্র নিয়েছিলেন। রাষ্ট্রীয় ফটোগ্রাফাররা যেসব ছবি তুলেছিল তারচেয়ে ভালো মূল্যবান ছবি তুলেছিল বাবুল হক, আশরাফুজ্জামান রতন এবং নাগর আলী। স্বাধীনতার পর কাদেরিয়া বাহিনীর একটি বিরাট প্রতিনিধি দল ভারত সফরে গিয়েছিল। মেঘালয়ের তুরা, আসামের ধুবরী, পশ্চিমবঙ্গের কুচবিহার, জলপাইগুড়ি, শিলিগুড়ি, মালদা আলীপুর দুয়ার, বর্ধমান হয়ে কলকাতা পর্যন্ত প্রতিটি অনুষ্ঠান এমন নিখুঁতভাবে কভার করেছিল, যে কেউ দেখলে বিস্মিত হতো। '৭২-এর এপ্রিল-মে তে বঙ্গবন্ধুর চিঠি নিয়ে ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গে দেখা করতে দিলি্ল গিয়েছিলাম। আমরা ছিলাম তিনজন। ব্যক্তিগত সহকারী শামসুদ্দিন আহমেদ বালু মোক্তার এমপি আর ক্যামেরায় বাবুল হক। আজমীরের তারাঘর, পুস্করের ব্রহ্মা মন্দির, আগ্রার তাজমহল, ফতেপুর সিক্রি, কলকাতার ফোর্ট উইলিয়াম, বোলপুর বা শান্তি নিকেতন- কোথায় যাইনি, আর কোথায় বাবুল হক ছবি তুলেনি! দিনগুলো মোটামুটি ভালোই চলেছিল। বাবুল হকের নিষ্ঠায় কোনো খুঁত ছিল না। হঠাৎই '৭৫-এর ১৫ আগস্ট বাঙালি জাতির ওপর নেমে আসে এক মহাবিপর্যয়। বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদে এক কাপড়ে প্রথমে ঘর এবং পরে দেশছাড়া হই। কয়েক দিন পরেই বাবুল হক গিয়ে হাজির হয়। প্রতিরোধ সংগ্রাম চলতে থাকে। সিলেটের ফারুক এবং বাবুল হক ছায়ার মতো অনুসরণ করে। এক রাতে এক রাশিয়ান এসএমজি পরখ করতে গিয়ে মিসফায়ারে বাবুল হকের হাতে এবং ফারুকের পায়ে গুলি লাগে। ওরা দুজনই গুরুতর আহত হয়। আল্লাহ আয়ু দিয়েছিলেন তাই সে যাত্রায় বেঁচে যায়। কিন্তু তারা কখনো পুরোপুরি সুস্থ হয়নি। হাতের ব্যথায় বাবুল সব সময় কাতর থাকত। '৮০-র দিকে বাবুল হক দেশে ফিরে। ক্যামেরায় খুব ভালো ছিল। তাই বাংলাদেশ টেলিভিশনে অনুষ্ঠান ধারণ করত। বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং বঙ্গবন্ধুর প্রিয় ও আমার সমর্থক হওয়ায় অনেকের কাছে সম্মান পেত, আবার অনেকের কাছে অপমান। এ করেই চলছিল। '৯০-এ এরশাদের পতনের পর আমি যখন দেশে আসি তখনো সে টিভিতে কাজ করত। ঢাকা বিমানবন্দর, ধানমন্ডির বঙ্গবন্ধুর বাসভবন, টুঙ্গিপাড়ায় জাতির পিতার কবর জিয়ারত- এসব কর্মসূচিতে ছায়ার মতো ছিল।
নানা ঘাত-প্রতিঘাতের পর '৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসে। যারা কারা নির্যাতন ভোগ করেছে, কষ্ট করেছে, তারা অনেকেই কিছুটা সম্মান আশা করেছিল। কিন্তু কেন যেন তা তারা পায়নি। বঙ্গবন্ধুর কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী হয়েই কেমন যেন হয়ে যান। ব্যক্তিগতভাবে যতটা মেলামেশা করেছি, যতটা জেনেছি তাতে কখনো তাকে খারাপ মানুষ মনে হয়নি। কিন্তু তারপরও স্বাধীনতা যুদ্ধে কাদেরিয়া বাহিনীর সদস্যরা এবং বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিরোধ যুদ্ধে জাতীয় মুক্তিবাহিনী কেমন যেন এক মারাত্দক প্রতিহিংসার শিকার হয়। '৭৫-এ বঙ্গবন্ধু নিহত হলে আমি তার প্রতিবাদ করায় কাদেরিয়া বাহিনীর প্রায় সবাইকে পালিয়ে বেড়াতে হয়। মুক্তিযোদ্ধা বলে গর্ব করবে তো দূরের কথা, রাজাকার আলবদরের মতো মুখ লুকিয়ে চলতে হতো। হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ক্ষমতায় এসে মুক্তিযোদ্ধাদের জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান বলে এক বয়ান দেন। কিন্তু তখনো কাদেরিয়া বাহিনীর সদস্যরা মুক্তিযোদ্ধা তালিকাভুক্ত হতে পারেনি। মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় নাম লেখাতে গেলেই বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিরোধ সংগ্রামী বলে আসামি করা হতো। ভেবেছিলাম, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে কাদেরিয়া বাহিনীর সদস্যদের মুক্তিযোদ্ধা তালিকাভুক্ত হতে আর কোনো সমস্যা থাকবে না। কিন্তু আমার সমস্যা কখনো দূর হয়নি, বরং আরও কঠিন হয়েছে। আমাকে আড়াল করার জন্য কতজনকে সামনে আনা হয়েছে। কাদেরিয়া বাহিনীকে যেমন, ঠিক তেমনি বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিরোধ সংগ্রামীদেরও খণ্ড বিখণ্ড করে একজনের বিরুদ্ধে আরেকজনকে লেলিয়ে দেওয়া হয়েছে। কায়েমি স্বার্থবাদীরা পুরো সফল না হলেও অনেককেই ক্ষতবিক্ষত করতে পেরেছে। আর সব থেকে বিস্ময়ের ব্যাপার, এসব কাজে কম-বেশি শত্রুরা বঙ্গবন্ধুর কন্যা জননেত্রীকে তাদের পক্ষে পেয়েছে।
মনটা একেবারেই ভালো না। হাত এবং মন কোনোটাই চলছে না। এমন অতি আপনজন চলে গেলে কার তেমন ভালো লাগে? বয়স হয়ে গেছে, কখন চলে যাব জানি না। তাই কাউকে বিব্রত করতে খুব একটা মন চায় না। বিশেষ করে অতীতের কষ্টকর জীবনের কথা শুনিয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে ভারাক্রান্ত করতে ইচ্ছা করে না। কিন্তু তবু বাবুল হকের কবরের পাশ থেকে ফিরতে গিয়ে কেন যেন বারবার মনে হচ্ছিল, একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে বাবুল হক সারা জীবন বাংলাদেশ টেলিভিশনে চিত্রগ্রহণ করল। কতবার বলার পরও তার স্কেল বাড়ল না বা উন্নতি হলো না। জানি, বড় কিছু করতে হলে ছোট ছোট অনেক কিছু ছাড়তে হয়। তবু কেন যেন বুকের ভেতর থেকে উথলে আসা বেদনা চেপে রাখা যায় না। বঙ্গবন্ধু হত্যার পর জনাব মালেক উকিল বলেছিলেন, ফেরাউনের হাত থেকে দেশ মুক্তি পেয়েছে। সেই মালেক উকিলের ছেলে খেলন বাংলাদেশ টেলিভিশনের সর্বেসর্বা হতে পারল অথচ বাবুল হক সিনিয়র স্কেল পেতে পারল না। বুকের ভেতরের গুমরে মরা কান্নাগুলো বেরিয়ে এলে কী করার আছে? বীর মুক্তিযোদ্ধা চাষী নজরুল এবং বাবুল হকের আত্দার মাগফিরাত কামনা করছি। দয়াময় আল্লাহ তাদের পরিবার-পরিজনকে এই শোক সইবার শক্তি দিন -আমিন।
লেখক : রাজনীতিক।