better late than never- বলে ইংরেজিতে একটা প্রবাদ আছে। বাংলা অর্থে- না হওয়ার চেয়ে বিলম্বে হলেও ভালো। বহুদিন ধরে ভারতের সঙ্গে স্থলসীমানা চিহ্নিতকরণের ব্যাপারটি বাংলাদেশের অতীব নায্য দাবি হলেও ভারত তার বিশালত্বের দাম্ভিকতায় বিষয়টির যথাবিহিত গুরুত্ব দেওয়ার প্রয়োজন অনুভব করেনি। এখানে সন্দেহাতীতভাবে তারা যে 'বিগ ব্রাদার' দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশ করেছে সেটা বেদনাহত চিত্তে বাংলাদেশের মানুষ প্রায় ৪৩টি বছর দগ্ধীভূত হৃদয়ে তিলে তিলে অনুভব করেছে। অমীমাংসিত সব সীমান্ত এলাকার (দহগ্রাম, আঙ্গরপোতাসহ সব ছিটমহল) মানুষের অবর্ণনীয় দুর্ভোগ ও অচিন্ত্যনীয় সংশয়, নিরাপত্তাহীনতা গোটা বাংলাদেশের মানুষের হৃদয়কেই মারাত্দকভাবে দহন করেছে। এখানে আমাদের শাসন-ক্ষমতার পটপরিবর্তন হয়েছে, কিন্তু অমীমাংসিত সীমান্ত সমস্যার সুরাহা হয়নি। এটাও অন্তর্নিহিত সত্য- শুধু বাংলাদেশের পররাষ্ট্র নীতির দুর্বলতা, অদক্ষতা ও উদাসীনতার মর্মান্তিক চিত্রটিই তুলে ধরে। আমি শতভাগ নিশ্চয়তা সহকারে বলতে পারি, বঙ্গবন্ধু জীবিত থাকলে বহু আগেই শুধু সীমান্ত চুক্তি নয়, ফারাক্কাসহ (তিস্তা ব্যারেজের সমস্যাটি তখন সামনে আসেনি) পানিসম্পদের প্রাপ্য হিস্যা আমরা আদায় করে নিতে পারতাম। স্বাধীনতা-যুদ্ধে ভারতের অবদান গোটা জাতির মতো বঙ্গবন্ধুর চিত্তকে আবেগাপ্লুুত করত। সমগ্র বাঙালি জাতির মতো এ প্রশ্নে তার হৃদয় ছিল কৃতজ্ঞতার আবির মাখানো। কিন্তু নতজানু মানসিকতা অথবা ন্যায্য দাবিকে প্রতিষ্ঠিত করার সাহসিকতা তার হৃদয়কে হিমাচলের গিরিশৃঙ্গমালার ঊর্ধ্বে তুলে রেখেছিল। তার জ্বলন্ত প্রমাণ নির্ধারিত দিবসের আগেই বাংলার মাটি থেকে ভারতীয় সৈন্য প্রত্যাহার ও প্রত্যয়দৃঢ় চিত্তে ওআইসি সম্মেলনে তার যোগদান। সম্প্রতি লোকসভা ও রাজ্যসভায় যে সর্বসম্মত প্রস্তাবটি গৃহীত হয় (শাসনতন্ত্রের সংশোধনী) নিঃসন্দেহে এটি সমগ্র ভারতবাসীর গণতান্ত্রিক মানসিকতাকে উজ্জ্বল করেছে, উদ্ভাসিত করেছে এবং সব প্রতিবেশীর সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তোলার ব্যাপারে তাদের পরিবর্তিত মানসিকতাকে প্রতিভাত করেছে। চীনের সঙ্গে তাদের বাণিজ্য-চুক্তি এমনকি পাকিস্তানের সঙ্গেও তাদের বাণিজ্য সম্পর্ক গড়ে তোলা এবং অনেক পুঞ্জীভূত সমস্যা সমাধানের ব্যাপারে তাদের উদ্যোগ লক্ষণীয়। এই উদ্যোগকে ভারতেরই কোনো কোনো নেতৃত্ব দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় ভারত 'বিগ ব্রাদার' নয় 'এলডার ব্রাদার' হতে চায় এমন মন্তব্য করেছেন। কথাটি আত্দম্ভরিতা কিনা এসব উদ্যোগের নিঃশর্ত বাস্তবায়নের মাধ্যমে সেটি প্রমাণিত হবে।
নিকট অতীতে প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের একটি উদ্যোগকে আমি সামনে আনতে চাই এই কারণে, তিনি দিলি্লতে সংবাদ সম্মেলনে সুস্পষ্ট ঘোষণা দিয়েছিলেন- তার সেই সরকার শুধু অমীমাংসিত সীমানার সমাধানই নয় তিস্তা ও ফারাক্কাসহ পানি সমস্যার সুষ্ঠু ও সম্মানজনক সমাধান করেই যাবেন। কিন্তু বাদ সাধলেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি এবং বিজেপির বর্তমান বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ। ব্যর্থতার পাহাড়তুল্য বোঝা নিয়ে মনমোহন সিংকে তাই প্রত্যাবর্তন করতে হয়েছিল।
আমি নেতিবাচক মানসিকতাকে সব সময় ঘৃণা করি। আমি ভারতবিদ্বেষী তো নই-ই বরং ভারতের সঙ্গে বন্ধুত্বের সম্মান ও সমতার ভিত্তিতে সুসম্পর্ক স্থাপনের প্রত্যাশী। বাংলাদেশের মানুষের প্রতীতির সঙ্গে আমার ব্যক্তিগত মিল বহুলাংশে। কিন্তু বাংলাদেশে উগ্র-মতবাদের বহিঃপ্রকাশ দেখে আমি ব্যথিত হই। কিছু কিছু তথাকথিত বিবেকবিবর্জিত বুদ্ধিজীবী এতখানি কাণ্ডজ্ঞানহীন ও নতজানু যে, বাংলাদেশকে ভারতের অঙ্গ বা আশ্রিত ভাবতেও তারা লজ্জাবোধ করেন না। তাদের শব্দচয়ন, দেহভঙ্গি প্রমাণ করে তাদের দেহটি বাংলাদেশে, নামটি মুসলমানের, কিন্তু অন্তরাত্দা ভারতের একাংশের হিন্দুত্ববাদী মানসিকতার সঙ্গে মিলেমিশে একাকার হয়ে গেছে। আমি বর্ষবরণে এবং ২৫ বৈশাখে, ভারতের পত্রপত্রিকায় বাঙালি চিন্তা-চেতনা-মননশীলতার বহিঃপ্রকাশ দেখেছি। তাদের পয়লা বৈশাখের বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ, লালন শাহ, নজরুল এমনকি হাছন রাজার গান বাঙালির মননশীলতাকে উচ্চকিত করেছে- হিন্দুত্ববাদের কোনো কালিমা লেপন করেনি।
আরেক দল আছেন। তারাও বাঙালি। কিন্তু তাদের হৃদয়ের কন্দরে কবিগুরু, জীবনানন্দ দাশ এদের কোনো স্থান নেই। হয় তারা নির্বোধ, না হয় তারা জ্ঞানপাপী। বাংলাদেশে একটি প্রবাদ আছে (এক ধরনের মূর্খরা ভাবে)- 'দারোগায় বলেছে স্ত্রীর ভাই, আনন্দের আর সীমা নাই।' সম্প্রতি ২০-দলীয় জোটের মধ্যে, বিশেষ করে বিএনপির একটা বিরাট অংশ ভাবে এই সীমান্ত বিরোধের উদ্যোগটি আওয়ামী লীগের সুহৃদ কংগ্রেস শাসনামলে হয়নি। কংগ্রেস পৃথিবীর বৃহত্তম গণতান্ত্রিক এবং সংসদীয় গণতন্ত্রে বিশ্বাসী রাজনৈতিক সংগঠন। সাম্প্রতিককালেও সেটি নির্দিষ্টভাবে প্রমাণিত হয়েছে। তাদের শাসনামলে অনুষ্ঠিতব্য নির্বাচনে অকল্পনীয় পরাজয়ের পরও নির্বাচনের ফলাফল মেনে নিতে এবং ক্ষমতা হস্তান্তরে তাদের বিন্দুমাত্র দ্বিধা বা কুণ্ঠা পরিলক্ষিত হয়নি। সমগ্র বিশ্ববাসী অবলোকন করেছে, বিজেপির শপথ অনুষ্ঠানে সোনিয়া গান্ধী, মনমোহন সিং এমনকি রাহুল গান্ধীও উপস্থিত ছিলেন। বিজেপির এ উদ্যোগে বাংলাদেশে ২০-দলীয় জোট নেতারা এতটুকু আহ্লাদিত ও বিমুগ্ধ যে, নির্বোধ ও নির্লজ্জের মতো তা ব্যক্ত করেন। এ যেন তাদেরই বিজয়। নরেন্দ্র মোদি যেন তাদের আত্দার আত্দীয় (হয়তোবা তাই! উভয়ই যে উগ্র-ধর্মান্ধ!)। বরং ভারতে সরকারের এই পটপরিবর্তনে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০-দলীয় জোটের ওই নির্বোধ অংশটি এতটাই গদগদ ভাব প্রদর্শন করেছেন যে, কংগ্রেসের বিদায়ে বিজেপি হয়তো বাংলাদেশের ক্ষমতাসীন দলকে চাপ সৃষ্টি করে একটি মধ্যবর্তী নির্বাচন দিতে বাধ্য করবেন। বলিহারি যাই তাদের এমন কল্পনাবিলাসিতার!
ভারতবর্ষের অর্থনীতি আজ একান্তই অস্থিতিশীল এবং বেকারত্বের সংখ্যা ক্রমেই বেড়ে উঠছে। শিল্পায়ন ব্যতিরেকে বর্তমান বিশ্বে টিকে থাকাই তাদের জন্য কঠিন হয়ে দাঁড়াবে। এটাকে সুসংহত ও দৃঢ় ভিত্তির ওপর দাঁড় করাতে হলে ভারতের অভ্যন্তরে স্থিতিশীলতা প্রতিস্থাপনের জন্য এবং দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকে আকর্ষণ করার আঙ্গিকে সীমান্তবর্তী প্রতিবেশীদের সঙ্গে যথাসম্ভব বিরোধ মিটিয়ে ফেলা তাদের আশু প্রয়োজন। তাই সুহৃদ বাংলাদেশ কেন তাদের জাতিশত্রু চীন এমনকি পাকিস্তানের সঙ্গেও সব বিরোধ মীমাংসা এবং বাণিজ্য সম্পর্ক গড়ে তুলতে অতীব আগ্রহী। শুধু যদি আমরা জাতীয় স্বার্থে ঐক্যবদ্ধ থাকতে পারি, ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত থাকা এবং ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হওয়ার প্রলোভনটিকে প্রশমিত করে জাতীয় স্বার্থকে ভারতের মতো অগ্রাধিকার দিতে সক্ষম হই তাহলে তিস্তা-ব্যারেজ ও ফারাক্কার পানির সুষম বণ্টনের ব্যবস্থাটি বাস্তবায়িত হবেই ইনশাল্লাহ!
১৯৭৪ সালের ১৬ মে মুজিব-ইন্দিরা চুক্তি স্বাক্ষরিত হলেও পরবর্তীতে যোগ্য নেতৃত্বের অভাবে এবং ভারতের প্রচণ্ড নির্মমতা ও বিগ-ব্রাদারসুলভ মানসিকতার কারণে সীমান্ত-সমস্যার সমাধানে যে বিলম্ব হলো এবং ওই সব এলাকার হতদরিদ্র মানুষ যে অবর্ণনীয় মানবেতর জীবনযাপন করতে বাধ্য করা হলো সে বিষয়টি বেমালুম বিস্মৃত হয়ে ক্ষমতাসীন প্রধানমন্ত্রীকে সংবর্ধনা দেওয়ার এবং নরেন্দ্র দামোদর মোদিকে কৃতিত্ব দেওয়ার সম্যক যুক্তি আমি খুঁজে পাই না। বরং বারবার এ কথাটিই আমার মনে হয়, শক্তিধর হলেই কি দুর্বলের ওপর অত্যাচার-নিষ্পেষণের অধিকার থাকে। আবারও পুনরাবৃত্তি করে বলতে চাই, স্থল সীমানা চুক্তি কারও অনুগ্রহ নয়; পরিস্থিতির বিজয়। এখানে উল্লেখ করা প্রাসঙ্গিক যে, মিয়ানমারের সঙ্গে সমুদ্র-সীমানা চুক্তি সম্পূর্ণ বাস্তবায়িত হয়েছে। কিন্তু ভারতের সঙ্গে সমুদ্র-সীমানা সংক্রান্ত মামলার রায় আমাদের পক্ষে এলেও ভারত এটি বাস্তবায়নের ব্যাপারে নির্বিকার। তাদের এই উদাসীনতা যে কোনো দেশপ্রেমিক বাংলাদেশি নাগরিকের হৃদয়কে আতঙ্কিত করে। সীমানা চুক্তির চেয়েও আমাদের বাঁচা-মরার প্রশ্নে অধিক গুরুত্বপূর্ণ ফারাক্কা চুক্তির বাস্তবায়ন ও তিস্তা ব্যারেজসহ পানি সংকট সংক্রান্ত বিষয়াদির ন্যায্য সমাধান।
পাকিস্তান পর্বে পদ্মার পানির স্রোত এত তীব্র ছিল যে, স্রোত নিয়ন্ত্রণ করে ওখানে পাকশীর সনি্নকটে একটি বিরাট বিদ্যুৎকেন্দ্রই নির্মিত হয় নাই; বরং কুষ্টিয়া, ঝিনাইদহ, চুয়াডাঙ্গায় 'গঙ্গা-কপোতাক্ষ প্রজেক্ট' বিশাল আকারে গড়ে ওঠে। ৩০০, ৪০০ ফুটের ক্যানেল দিয়ে শুষ্ক মৌসুমে WAPDA-র মাধ্যমে পানি সিঞ্চনের ব্যবস্থা করা হয়। এখন পাকশীর হার্ডিঞ্জ ব্রিজের নিচ দিয়ে শুষ্ক মৌসুমে নানাবিধ স্থলযান নিয়মিত আসা-যাওয়া করে বিধায় সমস্যাটির আশু সমাধান (অত্যন্ত বিলম্বিত হলেও) নিতান্ত প্রয়োজন। অহেতুক গদগদ না হয়ে সংবর্ধনার পাশাপাশি এ বিষয়ে সুতীক্ষ্ন দৃষ্টি দিয়ে আশু সমাধানে সরকারের ফলপ্রসূ উদ্যোগ দেশবাসীর কাম্য।
পাঠক ও নতুন প্রজন্ম আমার সাক্ষী, আমি কখনোই ৫ জানুয়ারির নির্বাচনকে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন বলে মনে করি না। এবার সিটি করপোরেশন নির্বাচনে সেটিই আবার উদগ্রভাবে প্রতিফলিত হলো। এই নির্বাচনটি একতরফা সেটা প্রমাণ করা তো দূরে থাক, বেশির ভাগ কেন্দ্রে ২০-দলীয় জোট এজেন্ট দিতে ব্যর্থ হয়েছে। তাদের তরফ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে, তাদের এজেন্টদের ঢুকতে দেওয়া হয়নি, আর যেসব কেন্দ্রে ঢুকেছিল সেখান থেকে তাদের বের করে দেওয়া হয়েছে। তাই যদি সত্যি হয় তো, এর বিরুদ্ধে কোনো নির্বাচন কেন্দ্রে নূ্যনতম প্রতিবাদ ও প্রতিরোধ তারা গড়ে তুলতে পারেনি। নেতৃত্বের অধিকাংশই নির্বাচনের মাঠ ছেড়ে কোনো গর্তে লুকিয়েছিলেন, সেটা অনুমান করা ভার। হয়তো নির্বাচনটি একতরফা হয়েছে। তা সত্ত্বেও ওদের কাছে আমার প্রশ্ন নূ্যনতম সাংগঠনিক শক্তি অর্জন না করে নির্বাচনে গেলেনই-বা কেন, আবার বেলা ১১টায় প্রত্যাহারই-বা করলেন কেন? অন্যদিকে আওয়ামী লীগ দাম্ভিকতায় অন্ধ হয়ে নির্বিচারে একতরফা প্রচার চালাচ্ছে- জনগণ বিএনপি জোটকে প্রত্যাখ্যান করেছে। পক্ষান্তরে দেশের নিরপেক্ষ বিশালসংখ্যক জনগণ নিজেদের আলাপচারিতায় বলাবলি করছেন- এ বিজয় প্রশাসনের, বিশেষ করে পুলিশ ও র্যাবের।
বহুবার আমি আমার নিবন্ধে উল্লেখ করেছি, পরিবারতন্ত্রে বিশ্বাসী দুই মহিলা রাজনীতিক উত্তরাধিকার-সূত্রে ক্ষমতাপ্রাপ্ত হয়ে দাম্ভিকতার এমন স্তরে অবস্থান করছেন যে, তারা জনগণকে পরোয়া তো করেনই না, বরং মনে করেন এ দেশের জনতা নিতান্তই উচ্ছিষ্ট। ক্ষমতাসীন জোট এবং তাদের শীর্ষ নেত্রী বিএনপি নেত্রীর সমালোচনার পরিমণ্ডলেই ঘুরপাক খাচ্ছেন। সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে পরতে পরতে দুর্নীতি যে সর্বগ্রাসী রূপে দেশের অর্থনীতি, ব্যবসা-বাণিজ্য ও শিল্প-কারখানাগুলোকে ক্রমেই বিকলাঙ্গ করছে, সেদিকে তিনি ভ্রূক্ষেপই করছেন না। আমদানি-রপ্তানির মধ্যে একটা বিরাট শুভঙ্করের ফাঁক আছে সেটাও তার অজানা। বিদ্যুৎ উৎপাদনের যে অঙ্কটি তার সামনে রয়েছে তার বাস্তব চিত্রটি 'কাজীর গরু খাতায় আছে, গোয়ালে নাই'। বিদ্যুৎ এবং গ্যাসের হাল-হকিকতে মাঝারি ও বৃহৎ শিল্পপতিরা আজ ক্রমেই দিশাহারা হয়ে পড়েছেন। সরকারি ও বেসরকারি ব্যাংকগুলো আজ প্রায় অন্তঃসারশূন্য। অনেক শিল্পপতি দেউলিয়া হয়ে চিরতরে ব্যবসা-বাণিজ্য থেকে বিদায় নিচ্ছেন। এ মুহূর্তে বাস্তবমুখী আশু ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে অবস্থাটি কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে ভাবলে শিউরে উঠি।
নিজেদের সাংগঠনিক দুর্বলতা উপলব্ধি করে বিরোধী জোটের নেত্রী আপাতত হরতাল-অবরোধ স্থগিত রেখেছেন। সরকারদলীয় নেত্রী যে এতে কতখানি উৎফুল্ল সেটা আমি অবগত নই। অবস্থার গুরুত্বও তিনি অনুধাবন করছেন কিনা তাও আমার কাছে অজ্ঞাত। তবে একটি কথা প্রদীপ্ত সূর্যরশ্মির মতো দীপ্যমান- হরতাল-অবরোধ নয়, সংশয়, অনিশ্চয়তা, অস্থিতিশীলতা সর্বোপরি দুর্নীতির সর্বগ্রাসী রূপ দেশকে এক মহাসংকটে নিপতিত করেছে। ৯ মাসের মুক্তিযুদ্ধকালীন ছাড়া এমন অস্বস্তিকর পরিস্থিতির মুখোমুখি বাংলাদেশের মানুষ আর কখনো হয়নি। কাল কী হবে এটি দেশের কী ক্ষমতাসীন, কী বিরোধী দল- সবাই সে ব্যাপারে অনিশ্চিত।
সর্বস্তরের মানুষ আজ অস্বস্তি ও অনিশ্চয়তার কারাগারে অন্তরীণ। স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশে এমন অনিশ্চিত শ্বাসরুদ্ধকর পরিবেশ ছিল না।
এর জন্য দায়ী দুই নেত্রীরই ক্ষমতার প্রতি দুর্দমনীয় লোভ এবং দেশ, জাতি, সাধারণ মানুষ-বিবর্জিত বিদেশনির্ভর নতজানু মনোবৃত্তি। দুই নেত্রীর করালগ্রাসে আজ জাতির ভবিষ্যৎ। পরম করুণাময় আল্লাহই এর থেকে আমাদের বাঁচাতে পারেন। সেই ফরিয়াদ সমগ্র জাতির এবং আমারও।
লেখক : স্বাধীন বাংলা ছাত্রসংগ্রাম পরিষদের অন্যতম নেতা।