শুরুতেই একটি ত্রুটি সংশোধন করা প্রয়োজন। গত পর্বে লিখেছিলাম আবুল হাসান চৌধুরী কায়সারের দাদা আবদুল হামিদ চৌধুরী '৫৪-র যুক্তফ্রন্টের নির্বাচনে মুসলিম লীগের সাইকেল মার্কার প্রার্থী হিসেবে জামানত হারিয়েছিলেন। তিনি জামানত হারিয়েছিলেন ঠিকই, তবে সাইকেল মার্কায় নয়, তার মার্কা ছিল হারিকেন। লোকে বলত, 'হারিকেনে তেল নাই, ভোট দিয়া কাম নাই'।
প্রায় এক বছর পর আজ বড় ভাইকে দেখতে যাব। কদিন থেকে কেন যেন মনটা ছটফট করছে। ১৫ তারিখের পর এক-দেড় মাসের জন্য ভাটি বাংলার ইটনা-মিঠামইন-খালিয়াজুড়ি-ধর্মপাশা-তাহেরপুর ও মহেশখোলার দিকে যাব। তাই এখনই দেখা না হলে অনেক দেরি হয়ে যাবে।
আগস্ট আমার জীবনে চরম বিপর্যয়ের মাস। ১৯৭১-এ ১৬ আগস্ট হানাদারদের গুলিতে গুরুতর আহত হয়েছিলাম। বাঁচার তেমন আশাই ছিল না। মৃত্যু নিশ্চিত জেনে হানাদাররা মিঠাই-মণ্ডা খেয়েছিল। আল্লাহ বাঁচিয়ে রেখেছেন তাই আছি। কেন রেখেছেন তা তিনিই জানেন। মুক্তিযুদ্ধে জয়ী হয়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে ফিরে পেয়েছিলাম। স্বাধীনতা এবং স্বাধীনতার স্বপ্নদ্রষ্টাকে পেয়ে সব পাওয়ার আনন্দে বিভোর ছিলাম। যুদ্ধ ক্লান্তির লেশমাত্র ছিল না আমাদের দেহমনে। স্বাধীনতার পর মানুষের অপরিসীম ভালোবাসা আপনা থেকে অনেক দায়িত্বশীল করে তুলেছিল। বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানের কারাগার থেকে ফিরে এসে আমার কাছে যখন অস্ত্র চান, তখন তাকে কিছুটা বিব্রত মনে হয়েছিল। আমায় বলেছিলেন, 'কাদের, শুনেছি তোর কাছে সবচেয়ে বেশি অস্ত্র। তুই অস্ত্র না দিলে অন্যের কাছে চাই কী করে?' কেন এমন দ্বিধা ছিল জানি না। হয়তো এও হতে পারে, বড় ভাই লতিফ সিদ্দিকী তখন তার যত কাছাকাছি ঘনিষ্ঠ ছিলেন, আমি ততটা ছিলাম না। এক কথায় আমাদের সব অস্ত্র দিয়ে দিয়েছিলাম। কারণ আমার প্রতি তার আস্থার চেয়ে তার প্রতি আমার আস্থা ছিল অনেক বেশি। কেউ আসেনি। রাসেল, জামাল, শেখ শহীদ আর তোফায়েল আহমেদকে নিয়ে ষড়যন্ত্রকারীদের শত উসকানির মধ্যেও তিনি এসেছিলেন। আমরা তার মুখ রক্ষা করেছিলাম। তার পায়ের সামনে বিছিয়ে দিয়েছিলাম হানাদার পাকিস্তানিদের কাছ থেকে যুদ্ধ করে ছিনিয়ে আনা আমাদের বহু স্মৃতিবিজড়িত অস্ত্র।
পরবর্তী দিনগুলো খুব একটা ভালো কাটেনি। যদিও তিনি আমার সঙ্গে সব সময় পিতার আচরণ করেছেন। যে কারণে অনেক চেষ্টা করেও ষড়যন্ত্রকারীরা আমার কেশাগ্র স্পর্শ করতে পারেনি। আমার প্রতি তার অবিচল আস্থা এক মুহূর্তের জন্যও নষ্ট হয়নি, বরং প্রতি মুহূর্তে বৃদ্ধি পেয়েছে। আমিও সব সময় শঙ্কিত থেকেছি, তিনি যদি অযোগ্য মনে করেন। তাই রাত-দিন যোগ্য হওয়ার চেষ্টা করেছি। মানুষ বড় হলে ছোট থাকতে হয়। বড় হয়ে কেউ বড় ভাব দেখালে আল্লাহ নারাজ হন- এটা মা'র কাছে শুনেছি, কোরআন, গীতায় পড়েছি। তাই সব সময় চিন্তিত থাকতাম, আমার ব্যবহারে কোনো অসহায় যাতে ব্যথা না পায়। ধীরে ধীরে দিন গড়ায়। হুজুর মওলানা ভাসানী, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কাছে সমান্তরাল আস্থা পেতে থাকি। উভয়েই একই রকম ভালোবাসতেন, বিশ্বাস করতেন। বঙ্গবন্ধু জানতেন দুনিয়া উল্টে গেলেও আমাকে দিয়ে মওলানা ভাসানীর বিরুদ্ধে কিছু করা যাবে না। হুজুর মওলানা ভাসানীও জানতেন আমি বঙ্গবন্ধুর কর্মী, বঙ্গবন্ধুর রাজনীতি থেকে আমাকে একচুল নড়ানো যাবে না। তাই তারা দুজনের একজনও জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত আমাকে একজন আর একজনের বিরুদ্ধে খাটানোর চেষ্টা করেননি। বরং পূর্ণ বিশ্বাস রেখেছেন। আমি তাদের সে বিশ্বাসের মর্যাদা রাখতে সব সময় চেষ্টা করেছি। বর্তমানে সেই ৩৫-৩৬ বছর আগের মতো কিছু বিষয় সামনে এসে দাঁড়িয়েছে। তখন উভয়ই ছিলেন পুরুষ। এখন নারী। কোনো সমস্যা থাকলে তা শুধু লিঙ্গভেদের সমস্যা, এ ছাড়া অন্য কিছু নয়। ছোট্ট দেশ, অনেক কিছুই লুকানো থাকে না, এক সময় প্রকাশ হয়ে যায়। শুনেছি, উপযাজক হয়ে কেউ জননেত্রীর কাছে আমার বিরুদ্ধে বলতে গেলে কোনো কোনো সময় মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে তেমন পাত্তা পান না। বছর আড়াই আগে কী কারণে আমাকে গ্রেফতারের কথা ছিল। যারা গ্রেফতার করবে তারা বেরিয়েও পড়েছিল। মাঝপথে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সম্মতি না পেয়ে আবার ফিরে যায়। রাত আড়াইটায় এক হিতৈষীর ফোন পেয়েছিলাম, 'তারা আসছেন'। বলেছিলাম, তৈরি আছি। স্ত্রীর সঙ্গে গল্প করছিলাম। অনেক রাতেও ঘুমাচ্ছি না দেখে আমার সাদামাঠা স্ত্রী জিজ্ঞাসা করেছিল, 'কি ঘুমাতে যাবে না?' বলেছিলাম, ঘুম আসছে না। গল্প করে কিছু সময় কাটাই। দুজন বারান্দায় বসে কথা বলছিলাম। বারান্দার পাশে মা'র বোনা মস্ত বড় নারকেল গাছের পাতাগুলো ঝিরঝির আওয়াজ তুলে দুলছিল। আমার মনে হচ্ছিল মা-ই বুঝি আমায় তাল পাখায় বাতাস করছেন। এখনো বারান্দায় বসে নারকেল গাছের দিকে তাকালেই মাকে মনে পড়ে। গল্প করতে করতে ফজরের আজান পড়েছিল। তখনো মেহমানরা এলেন না। হঠাৎ ফোন পেলাম। অমন সময় সাধারণত আমি ফোন ধরি না। জানা ফোন ছিল তাই ধরেছিলাম। জিজ্ঞাসা করেছিলাম, কী খবর? ভদ্রলোক বিনয়ের সঙ্গে বলেছিল, 'সবুজ সংকেত পাওয়া যায়নি তাই আসা হলো না।' তা বেশ তো আপনারা সংকেতের অপেক্ষায় থাকুন, আমি নামাজ পড়ে একটু ঘুমাই।
বছর দেড়েক আগের কথা। কী নিয়ে কথাবার্তার একফাঁকে হঠাৎ আমার নাম এসেছিল। অভিযোগের সুরে কেউ আমাকে নিয়ে এটা ওটা বলতে যাচ্ছিল, দু-চারজন তাতে তালও দিচ্ছিল। এক সময় বিরক্ত হয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তাদের থামিয়ে দেন, 'যথেষ্ট হয়েছে। বজ্র সম্পর্কে তোমাদের কাছে কিছু শুনতে চাই না। তাকে আমি তোমাদের চেয়ে ভালো চিনি, ভালো জানি।' সবাই আমাকে 'কাদের সিদ্দিকী' বলে। লতিফ সিদ্দিকী এবং জননেত্রী শেখ হাসিনা 'বজ্র' বলে ডাকেন। শুধু রাজনৈতিক কর্মীই নয়, একেবারে এক উচ্চ কর্মকর্তাকে বছর দুই আগে সতর্ক করে দিয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, 'দেখবেন কাদের সিদ্দিকী সম্পর্কে কেউ যেন উপযাজক হয়ে কিছু না করে।' নেত্রীর এই হুঁশিয়ারির কয়েক দিন পর একান্তে তার সঙ্গে আমার কথা হয়। আমার প্রতি নেত্রীর কী গভীর মায়া, এটা বুঝাতে তিনি কীসব যে করছিলেন বুঝাতে পারব না। আমি জননেত্রীকে জানি, তিনিও আমাকে জানেন। তার সঙ্গে আমার কাজকর্ম নিয়ে নিশ্চয়ই অমিল আছে। কিন্তু মানুষ হিসেবে তাকে আমি মায়ের মতো সম্মান করি, ভালোবাসি এটা তিনি যেমন জানেন, আমাকেও তিনি যে আদরযত্ন করেন, ভালোবাসেন সেটা আমিও জানি। এমন অবস্থায় হঠাৎ বাবুদের বেশি লাফালাফি ভালো না।
বড় ভাই লতিফ সিদ্দিকী সুদূর আমেরিকায় কী বলেছেন তার জন্য মন্ত্রিত্ব, প্রেসিডিয়ামের সদস্য এবং দলীয় প্রাথমিক সদস্য পদ খুইয়েছেন। আমি আওয়ামী লীগ করি না, লতিফ সিদ্দিকীর রাজনীতিও না। তবে সত্য বলতে কখনো বুক কাঁপে না। সে সত্য যদি চরম শত্রুর পক্ষে, মিত্রের বিরুদ্ধেও যায় আমার কিছু যায় আসে না। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর আস্থার ওপর মন্ত্রিত্ব নির্ভর করে। নির্বাহী কমিটির ওপর প্রেসিডিয়ামের সদস্য থাকা, না থাকা অনেকটা নির্ভরশীল। কিন্তু দলীয় সদস্য থাকা, না থাকা শুধু কার্যনির্র্বাহী কমিটির ক্ষমতা বা এখতিয়ারের মধ্যে পড়ে না। যাকে দলের প্রাথমিক সদস্য পদ থেকে বহিষ্কার বা বাদ দিতে হবে তাকে পর্যাপ্ত কারণ দেখাতে হবে, দলীয় ব্যাপারে সে কোনো শৃঙ্খলা ভঙ্গ করেছে কিনা। জীবনের শুরু থেকে রাজনীতি করি, রাজনীতির ন্যায়নীতি যতদূর জানি বা বুঝি তাতে আমেরিকায় লতিফ সিদ্দিকীর কোনো ব্যক্তিগত কাজ আওয়ামী লীগের শৃঙ্খলা ভঙ্গের মধ্যে পড়ে না। তার কাজে নিশ্চয়ই সরকার এবং দল বিব্রত হতে পারে। অনুভূতিতে আঘাতপ্রাপ্তরাও বিচার চাইতেই পারেন। এক অপরাধে এক মামলা, তার বেশি নয়। কিন্তু জিনিসটা কোনো দলীয় শৃঙ্খলার ব্যাপার নয়। অথচ এখানে শুধু রাজনীতিই হয়েছে। আওয়ামী লীগ এক মজার সংগঠন। আওয়ামী লীগ করলে তার আর অন্য দলের শত্রুতার দরকার পড়ে না, আওয়ামী লীগই যথেষ্ট। প্রাক্তন মন্ত্রী লতিফ সিদ্দিকীর বক্তব্য নিয়ে যখন তোলপাড় তখনো তিনি মন্ত্রী। তার বিরোধী কিছু তথাকথিত আওয়ামী লীগই প্রথম মিছিল করেছে, বিএনপি-জামায়াত বা অন্য কোনো দল নয়। গুটিকয়েক লোক নিয়ে যারা সেদিন মিছিল করেছিল, আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়ামের সদস্য ও মন্ত্রী থাকতেও কোনো নিম্নস্তরের কমিটি যখন কেন্দ্রীয় নেতার বিরুদ্ধে মিছিল-মিটিং করে দল কিছু বলে না, তখন বুঝতে হবে সে দলে কোনো শৃঙ্খলা নেই, অথবা নিজেরাই নিজেদের শত্রু। লতিফ সিদ্দিকীকে নিয়ে যখন কথা শুরু হয় তখনো তাকে মন্ত্রিসভা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়নি, সংসদ সদস্য পদও যায়নি। কিন্তু কালিহাতী উপনির্বাচনে মাঠ গরম। এক সময় আজাদ সিদ্দিকীর কর্মী কোন ব্যাংকের নাকি এখন ডাইরেক্টর, আবু নাসের ও আরও কয়েকজন প্রার্থী হয়ে তোলপাড় করে ফেলেছিল। ছবিতে ছবিতে সয়লাব। অথচ এখন লতিফ সিদ্দিকীর সংসদ সদস্য পদ বাতিল নিয়ে আওয়ামী লীগ স্পিকারের কাছে চিঠি দিয়েছে। স্পিকার সেই চিঠি নির্বাচন কমিশনে পাঠিয়েছে। তারপরও উপনির্বাচনের কোনো নাম-নিশানা নেই। এসবই হচ্ছে আওয়ামী রাজনীতি।
অন্যদিকে কেউ স্বীকার করুন আর না করুন বেগম খালেদা জিয়া একটি বড় রাজনৈতিক দলের নেতা এবং আওয়ামীবিরোধী রাজনীতির ধারক বাহক। তাকে একেবারে অস্বীকার করে বাংলাদেশের রাজনীতি নিয়ে ভাবা অনেকটা কাকের ঠোঁট মোছার মতো। বিরোধী দল সরকারকে অপ্রিয় করে নির্বাচনে জয়ী হওয়ার চেষ্টা করবে। অন্যদিকে সরকার যেভাবে পারবে বিরোধী দলকে পথে বসাতে চেষ্টা করবে। তবে এই উভয় চেষ্টাই হতে হবে দেশের কল্যাণে, শিষ্টাচারবিবর্জিত নয়। আমাদের দেশে সেটিরই বড় বেশি অভাব।
বেগম খালেদা জিয়া দেশের একটি বিরাট অংশের আস্থাভাজন নেত্রী। আমাকে এবং আমার দলকে দলে ভিড়াতে বহু চেষ্টা করেছেন। বহু চেষ্টা করে বুঝেছেন ছলাকলা লোভ-লালসা দেখিয়ে আমাকে পাওয়া যাবে না। আমি জননেত্রী শেখ হাসিনার না হতে পারি, আমি স্বাধীনতার, আমি বঙ্গবন্ধুর। বঙ্গবন্ধুকে গালি দিলে আমার যেমন লাগে, মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে জিয়াউর রহমানকে কেউ অপমান অপদস্ত করলেও লাগে। এটা বেগম জিয়াও যে জানেন না, তা নয়। তার সঙ্গে আমার বেশ ক'বার কথা হয়েছে। তাকে আমি বলেছি, জামায়াত ছাড়ুন। বঙ্গবন্ধু জাতির পিতা, বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে কারও তুলনা হয় না- এটা স্বীকার করুন। দয়া করে তার নির্মম হত্যার দিনে জন্মদিন পালন বন্ধ করুন। যতদিন ওসব করবেন ততদিন বাংলা এবং বাঙালির হৃদয়ে জায়গা পাবেন না। ৫ জানুয়ারির নির্বাচন পৃথিবীর ইতিহাসে গণতন্ত্রের জন্য সব থেকে বড় কলঙ্ক। তারপরও দুর্বল বিরোধী দলের কারণে সরকার টিকে আছে। বিরোধী দলের প্রতি বাঁধভাঙা জনসমর্থন না থাকলে টিকেও থাকবে। তাই মানুষকে পেতে হলে সত্য স্বীকার করতে হবে, মিথ্যার ওপর ভর করে কাচের ঘরে বেশি সময় নিরাপদে থাকা যায় না। তাই আবার অনুরোধ করি, অতীতে যা হওয়ার হয়েছে, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া এবার ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবসে দয়া করে আপনি আপনার জন্মদিন পালন করবেন না। যদি করেন দেশবাসী আপনাকে জাতীয় নেতা হিসেবে গ্রহণ করবে না।
একবার দীর্ঘ আলোচনার সময় মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে বেশ কয়েকবার জননেত্রী বলায় বেগম জিয়া বলেছিলেন, 'এখনো আপনি শেখ হাসিনাকে জননেত্রী বলেন?' বলেছিলাম, বলি। আর আমার এ বলায় কারও আপত্তি থাকলে থাকতেই পারে। তাতে আমার কিছু আসে যায় না। সেই যে চুপ হয়েছেন, ওসব নিয়ে তিনি আর কখনো কোনো কথা বলেননি। একেবারে নেতৃত্বের কোনো গুণ না থাকলে কেউ অত বড় হয় না। যেহেতু খালেদা জিয়া এতটা দুর্গম পথ অতিক্রম করেছেন, সেহেতু কিছু গুণাবলি যে আছে তা মানতেই হবে। দেশের শান্তির অন্বেষণে কতদিন ঘরছাড়া। মাঝে সাজে আমারও মন কাঁদে, কবে চলে যাব, স্ত্রী-পুত্র-কন্যা নিয়ে যতটা পারি সময় কাটাই। কিন্তু যখন কেউ কথা শুনে না, তখন কষ্ট না পেয়ে থাকতে পারি না। অসঙ্গতি বড় বেশি নাড়া দেয়। এবার পহেলা আগস্ট থেকেই জাতীয় শোক পালন শুরু হয়েছে। কী বিচিত্র দুনিয়া! পিতা যেদিন নিহত হয়েছিলেন সেদিন কাঁদার লোক খুঁজে পাওয়া যায়নি। অথচ এবার মাসের শুরুতেই ৪০ দিনব্যাপী শোক পালন। ৪০ দিন কেন, ৮০ দিন করুন। কিন্তু ১৫ তারিখের পর করুন। ১৫ আগস্ট সকাল পর্যন্ত মহান নেতা, জাতির পিতা এপারেই ছিলেন, আমাদের মাঝেই ছিলেন। বুঝি না অতি উৎসাহীদের এসব উৎসাহের কবে ভাটা পড়বে। আগামী সপ্তাহে পরিবার-পরিজন নিয়ে পিতার কবরে ফাতেহা পাঠ করতে টুঙ্গীপাড়া যাব। সেদিন আওয়ামী সংগঠনের নেতা-নেত্রীরা টুঙ্গীপাড়া গিয়েছিলেন। কতক্ষণ ছিলেন জানি না, ক'জন ফাতেহা পাঠ করেছেন তাও জানি না। কিন্তু পত্র-পত্রিকা, টেলিভিশনে দেখলাম বঙ্গবন্ধুর কবরে ফুলমালা দেওয়ার নেতৃত্ব দিচ্ছেন সৈয়দ আশরাফ। তোফায়েল আহমেদ, আমির হোসেন আমুরা তার পেছনে। নিশ্চয়ই সৈয়দ আশরাফ এখন একজন বড় নেতা। কিন্তু তোফায়েল আহমেদের চেয়ে বড় নন। আমির হোসেন আমুর চেয়েও নন। '৬৯-এর গণআন্দোলনের পর তোফায়েল আহমেদ কোনো রাস্তা দিয়ে গেলে বিপ্লবী দেশবাসী সে রাস্তায় চুমু খেত। তখন সৈয়দ আশরাফের কোনো নাম-নিশানাও ছিল না। সত্যিই আল্লাহ জননেত্রীকে অগাধ ক্ষমতা দিয়েছেন। এ ক্ষমতা তিনি সৎভাবে ব্যবহার করবেন তেমনটাই আশা করি। শোকের দিনে তাকে বলি, হাসানুল হক ইনু, মতিয়া চৌধুরী, শাজাহান খানদের ডানে-বামে নিয়ে আমাদের মতো কুলাঙ্গারদের প্রতি চোখ-কান বন্ধ করে অবিচার করবেন না। সেদিন আপনিই বলেছেন, 'একদিনে আমরা সব হারালাম।' আল্লাহকে ভয় করুন, দেশবাসীর প্রতি রুষ্ট হবেন না- শোকের দিনে আপনার কাছে এটাই আমার কামনা।
লেখক : রাজনীতিক।