গৃহকর্মীকে কাজ করিয়ে পারিশ্রমিক প্রদান না করার মামলায় ফেঁসে যাচ্ছেন নিউইয়র্কের সাবেক কন্সাল জেনারেল এবং বর্তমানে মরক্কোর রাষ্ট্রদূত মো. মনিরুল ইসলাম। মনিরুল ইসলামের স্ত্রীর বিরুদ্ধেও গৃহকর্মীকে নির্যাতনের অভিযোগ রয়েছে একই মামলায়।
নিউইয়র্ক সিটির ম্যানহাটানে অবস্থিত ফেডারেল কোর্টের জজ সিডনী স্টেইন ৬ জানুয়ারি মঙ্গলবার মনিরুল ইসলাম এবং তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে মামলাটি অব্যাহত রাখার নির্দেশ প্রদান করেছেন। মো. মনিরুল ইসলাম এবং তার স্ত্রী ফাহিমা তাহসিনা প্রভা আবেদন করেছিলেন ওই অভিযোগ থেকে অব্যাহতির জন্য। যুক্তি হিসেবে তারা উল্লেখ করেছিলেন যে, কূটনীতিক হওয়ায় তারা এ ধরনের মামলায় বিচারের সম্মুখীন হতে পারেন না।
মাননীয় বিচারক উল্লেখ করেছেন যে, তাদের গৃহকর্মী এবং সেই কর্মীর বেতন-ভাতার ব্যাপারটি 'কন্স্যুলার ফাংশন'র পর্যায়ে পড়ে না। উল্লেখ্য, মাসুদ পারভেজ রানা নামক এক বাংলাদেশি ওই মামলা করেছেন গত বছরের ২১ মার্চ। চাঞ্চল্যকর মামলার সংবাদটি মূলধারার মিডিয়াতে প্রকাশিত হয়। তবে মামলার আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরুর আগেই মো. মনিরুল ইসলাম সস্ত্রীক নিউইয়র্ক ত্যাগ করেন এবং মরক্কোতে নয়া দায়িত্ব গ্রহণ করেন বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত হিসেবে। এখন তিনি মরক্কোতেই রয়েছেন।
মামলায় রানা অভিযোগ করেছেন যে, মাসিক ৩ হাজার ডলার বেতনের অঙ্গীকারে তাকে এ-৩ ভিসায় বাংলাদেশ থেকে নিউইয়র্কে আনা হয়। অথচ দেড় বছর পর্যন্ত (গত বছরের মার্চে মামলা দায়ের করা পর্যন্ত) সে অঙ্গীকার পূরণ দূরের কথা, দৈনিক তাকে ১৬ থেকে ২০ ঘন্টা করে কাজ করতে হয়েছে। এভাবে বিনাবেতনে এবং প্রতিদিনই অতিরিক্ত সময় কাজে তাকে বাধ্য করা হয় ভয়-ভীতি প্রদর্শন করে। বাসায় কাজের জন্যে তাকে নিয়োগ করা হলেও মাঝেমধ্যেই কন্স্যুলেট অফিসে গভীর রাত পর্যন্ত চলা বিভিন্ন অনুষ্ঠানের অতিথিদের জন্যও তাকে রান্না-বান্না করতে হয়েছে বলে মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে।
মাননীয় আদালতের সর্বশেষ এ সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন রানার পক্ষে কর্মরত ডেচার্ট ল’ ফার্মের এটর্নী এমিলি শিয়া। তিনি বলেন, এখন সুযোগ সৃষ্টি হলো রানার বকেয়া মজুরি আদায় করার এবং জুলুম-নির্যাতনের ন্যায় বিচার পাবার।
উল্লেখ্য, এই মামলায় বাংলাদেশ কন্স্যুলেট জেনারেলকে অভিযুক্ত করা হয়নি। কন্সাল জেনারেল হিসেবে ব্যক্তি মো. মনিরুল ইসলাম এবং তার স্ত্রীকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। অভিযোগে আরো বলা হয়েছে যে, ম্যানহাটানের বাসভবনে মো. মনিরুল ইসলামের বাসার সমস্ত কাজকর্ম সম্পাদনের দায়িত্ব পালন করতে হয় রানাকে। সাপ্তাহিক ছুটির দিন বলতে কিছু ছিল না রানার এই কর্মজীবনে। মামলায় আরো বলা হয়েছে যে, রানা যাতে বাসা থেকে কোথাও না যেতে পারে সেজন্যে তার পাসপোর্ট ও ভিসা আটক রাখা হয়। ভয় দেখানো হয় যে, বাইরে গেলেই পুলিশ ধরে জেলে দেবে অথবা বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেবে।
মামলা দায়েরের পর গত বছরের মার্চের তৃতীয় সপ্তাহে কন্সাল জেনারেল মো. মনিরুল ইসলাম মিডিয়াকে বলেছিলেন, 'রানাকে ২০১২ সালের সেপ্টেম্বরে ঢাকা থেকে আমাদের সাথে নিউইয়র্কে এনেছি। সে সময় তার ভিসার আবেদনে আমি কোন স্বাক্ষর করিনি। তাই প্রতি মাসে তাকে ৩০০০ ডলার ভাতা প্রদানের যে অভিযোগ করা হয়েছে সেটিও সত্য নয়। তবে রানার বাবা ঢাকায় কচুক্ষেতের ব্যবসায়ী নাসিরুদ্দিন আমার কাছ থেকে ২০ লাখ টাকা নিয়েছেন রানার কাজের বেতন থেকে সমন্বয়ের কথা বলে। এ ব্যাপারে লিখিত দলিল রয়েছে। সুতরাং রানাকে কাজ করিয়ে কোন পারিশ্রমিকই দেইনি-এটি একেবারেই সত্য নয়।'
রানার বাড়ি কুমিল্লায় এবং মো. মনিরুল ইসলামের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়।
মামলার সর্বশেষ পরিস্থিতির আলোকে রাষ্ট্রদূত মনিরুল ইসলামের সাথে মরক্কোতে যোগাযোগের চেষ্টা করেও টেলিফোনে তাকে পাওয়া যায়নি। তবে নিউইয়র্কের মানবাধিকার আইনজীবীরা বলেছেন, এ মামলাটি আপস করা সম্ভব না হলে বাংলাদেশকে বড় ধরনের সমালোচনার সম্মুখীন হতে হবে। কারণ হিসেবে তারা উল্লেখ করেছেন যে, মামলা দায়েরের সংবাদ মিডিয়ায় প্রকাশের পরই তড়িঘড়ি করে মনিরুল ইসলাম মরক্কোতে চলে গেছেন। কূটনীতিক হিসেবে তিনি এ ধরনের আচরণ করতে পারেন না। এখন মামলাটি চালু হলে মার্কিন মিডিয়াতেও এ নিয়ে সমালোচনার ঝড় ওঠার আশংকা রয়েছে বলে আইনজীবীরা উল্লেখ করেন।
বিডি-প্রতিদিন/০৭ জানুয়ারি ২০১৫/আহমেদ