৬ কংগ্রেসম্যানের স্বাক্ষর জালিয়াতির দায় আওয়ামী লীগের ওপর চাপিয়ে স্টেট ডিপার্টমেন্ট এবং ক্যাপিটল হিলে ৪৮ পৃষ্ঠার স্মারকলিপি দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র বিএনপি। ১২ জানুয়ারি সোমবার যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির একাংশের নেতা শরাফত হোসেন বাবু এবং জাসাস কেন্দ্রীয় কমিটির আন্তর্জাতিক সম্পাদক গোলাম ফারুক শাহীনের নেতৃত্বাধীন বিএনপির একটি প্রতিনিধি দল বাংলাদেশে নতুন নির্বাচনের দাবিতে বর্তমান সরকারের ওপর মার্কিন প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনায় উপরোক্ত স্মারকলিপি প্রদান করে।
শরাফত হোসেন বাবু এবং গোলাম ফারুক শাহীন উভয়েই এনআরবি নিউজের কাছে স্বীকার করে বলেন, কংগ্রেসম্যানদের স্বাক্ষর জালিয়াতির ব্যাপারে স্টেট ডিপার্টমেন্ট এবং ক্যাপিটল হিলের কর্মকর্তারা তাদেরকে নানা প্রশ্ন করেন। প্রশ্নের জবাবে বিএনপির পক্ষ থেকে মার্কিন কর্মকর্তাদের জানানো হয়েছে, বিএনপির ভাবমূর্তি বিনষ্টের অভিপ্রায়ে সরকারি দল আওয়ামী লীগের লোকজনেরা ওই অপকর্ম করেছে।
বিএনপির এ স্মারকলিপিতে গত বছরের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনকে তামাশার এক প্রকৃষ্ট উদাহরণ হিসেবে অভিহিত করা হয়। বাংলাদেশের শতকরা ৯০ ভাগ মানুষ ওই নির্বাচনে অংশ নেননি বলেও উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়া, ২০০৮ সালের ডিসেম্বর মাসে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে জয়ী হয়ে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার বাংলাদেশে তার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে ক্রসফায়ারে দিচ্ছেন অথবা গুম করছেন বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়া বিএনপিসহ বিরোধী দলের ৫০ সহস্রাধিক নেতা-কর্মীকে মিথ্যা মামলায় জেলে নেয়ার কথাও উল্লেখ করা হয়েছে। বিনাবিচারে অসংখ্য রাজনৈতিক নেতা-কর্মীকে হত্যার ফিরিস্তি রয়েছে স্মারকলিপিতে। অধিকারসহ কয়েকটি সংগঠনের রিপোর্ট ছাড়াও বেশ ক'টি মিডিয়ার রেফারেন্স দেওয়া হয় স্মারকলিপিতে। মিডিয়াগুলোর অন্যতম হচ্ছে নিউ এজ, আল জাজিরা ইত্যাদি।
শরাফত হোসেন বাবু জানান, লন্ডন থেকে তারেক রহমান তৈরি করে পাঠিয়েছেন ওই স্মারকলিপি। স্টেট ডিপার্টমেন্টে বাংলাদেশ ডেস্কের প্রধান গিলবার্ট মর্টন স্মারকলিপি গ্রহণ করেন। প্রতিনিধি পরিষদে ফরেন এফেয়ার্স কমিটির চেয়ারম্যান কংগ্রেসম্যান এড রয়েসের অফিসে স্মারকলিপি গ্রহণ করেছেন তার ব্যক্তিগত সহকারী। একইভাবে ইউএস সিনেটে ফরেন রিলেশন্স কমিটির চেয়ারম্যান সিনেটর বব কোরকারের কন্সটিটুয়েন্সি সার্ভিস রিপ্রেজেনটেটিভ হেইলি হামফ্রের কাছে বিএনপির স্মারকলিপি হস্তান্তর করছেন বলে এনআরবি নিউজকে জানান।
প্রতিনিধি দলের সদস্য নিউইয়র্ক সিটি বিএনপির একাংশের সভাপতি হাবিবুর রহমান সেলিম রেজা ওয়াশিংটন ডিসি থেকে টেলিফোনে এনআরবি নিউজকে বলেন, 'কংগ্রেসম্যানদের স্বাক্ষর জাল করে বিএনপিরই শুধু বারোটা বাজানো হয়নি, প্রবাসের সকল বাংলাদেশির ইমেজকেই প্রশ্নবিদ্ধ করা হয়েছে। জাহিদ এফ সরকার সাদী এই অপকর্ম করেছে। তাকে যেখানো পাবো সেখানেই অপমান করবো।'
উল্লেখ্য, জাহিদ এফ সরদার সাদী বিএনপির বৈদেশিক বিষয়ক দূত এবং বেগম জিয়ার উপদেষ্টা হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রে কাজ করছিলেন এবং গত কয়েক সপ্তাহে লন্ডন থেকে তারেক রহমানের উপদেষ্টা/বিশেষ সহকারীরা নিউইয়র্কে এলেই এই সাদীর সাথে চলাফেরা করতেন। সাদীর সাথে এই শরাফত হোসেন বাবুও কংগ্রেসম্যান এবং স্টেট ডিপার্টমেন্টের লোকজনের সাথে ফটোসেশন করে তা মিডিয়ায় বিতরণ করেছেন। জাহিদ সরদার সাদী ২০০৯ সাল পর্যন্ত ৯ বছরে বিভিন্ন অপকর্মে জড়িত থাকায় ২৭ বার গ্রেফতার হয়ে প্রতিটি অপকর্মের দোষ স্বীকার করে বিভিন্ন মেয়াদে শাস্তিভোগ করেছেন। ২০০৯ সালের পরও অন্তত চারবার গ্রেফতার হন। এসব তথ্য সংবাদপত্রে ফলাও করে প্রচারিত হওয়ার পরও তারেক রহমানের উপদেষ্টা/সহকারীরা যুক্তরাষ্ট্রে এলে তার সাথেই চলাফেরা করেন। শুধু তাই নয়, ৪ জানুয়ারি নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সদর দফতরের সামনে বিএনপির অপর অংশের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত একটি বিক্ষোভে এই সাদীর সাথে এসেছিলেন বিএনপির ভাইস প্রেসিডেন্ট ও সাবেক শিক্ষামন্ত্রী ওসমান ফারুক। সে ছবিও সংবাদপত্রে প্রকাশিত হয়েছে। তখনও সকলেই সাদীকে তারেকের এবং ‘ম্যাডাম’র একমাত্র বিশ্বস্ত লোক বলে বিবেচনা করেছেন।
বিডি-প্রতিদিন/১৩ জানুয়ারি ২০১৫/আহমেদ