বাংলাদেশি অধ্যুষিত ব্রুকলিনের চার্চ-ম্যাকডোনাল্ড এলাকায় ‘গৃহহারা ও মানসিক বিকারগ্রস্তদের আশ্রয় কেন্দ্র’ খোলার সিদ্ধান্ত অবিলম্বে বাতিল দাবিতে শতশত বাংলাদেশি মানববন্ধন করেছেন। গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় অনুষ্ঠিত এ মানববন্ধনে আশপাশের আমেরিকানরাও স্কুল-কলেজগামী সন্তানসহ অংশ নেন। সকলেরই হাতে ছিল পোস্টার। লেখা ছিল, ‘আমরা আশ্রয়কেন্দ্রের বিপক্ষে নই, তবে এমন একটি নিরাপদ লোকালয়ে তা স্থাপন করা চলবে না।’
নিউইয়র্ক সিটি কাউন্সিলে সম্প্রতি পাশ হওয়া একটি বিলের আওতায় গৃহহারা এবং মানসিক বিকারগ্রস্তদের নয়া আশ্রয় কেন্দ্র খোলার সিদ্ধান্ত হয়েছে। ব্রুকলিনে ম্যাকডোনাল্ড অ্যাভিনিউয়ের উপর অবস্থিত পাবলিক স্কুল-২৩০ এর দুটি ক্যাম্পাসের মধ্যিখানে সেই আশ্রয়কেন্দ্র খোলার সংবাদ জেনেই প্রবাসীরা প্রতিবাদী হয়ে ওঠেন। সামাজিক একটি সমস্যার পরিপ্রেক্ষিতে সিটি প্রশাসনের বিরুদ্ধে এমন বড়ধরনের কোন মানববন্ধন বা সমাবেশ প্রবাসীরা এর আগে কখনো করেননি। শিশু থেকে প্রবীণ সকল বয়সী নারী-পুরুষ রাস্তায় বেড়িয়ে এসেছিলেন সিটির এমন সিদ্ধান্তকে মানবিকতার পরিপন্থি হিসেবে জানানোর জন্যে।
ব্রুকলিনে বাংলাদেশিদের পরিচালিত বৃহত্তম মসজিদ ‘বাংলাদেশ মুসলিম সেন্টার’র প্রেসিডেন্ট আলহাজ্ব আবুল হাশেম এ সময় মিডিয়াকে বলেন, ‘যেখানে আশ্রয়কেন্দ্র স্থাপনের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে তার দু’পাশে দুটি ইলেমেন্টারি স্কুল এবং আবাসিক ভবন। সিটির আশ্রয়কেন্দ্রে যারা বাস করে তাদের অনেকেই নেশাগ্রস্ত, মানসিক বিকারগ্রস্ত এবং আরও নানা অপরাধে লিপ্ত। এদের কারণে এলাকায় মাদক ব্যবসা, যৌনকর্মীদের আনাগোনাসহ নানারকম অপরাধের আবির্ভাব ঘটতে পারে। যা ইলেমন্টোরি স্কুলের শিশু শিক্ষার্থী এবং তাদের অভিভাবকদের জন্যেও হুমকি হিসেবে দেখা দিতে পারে।’
এ মানববন্ধন কর্মসূচির অন্যতম আয়োজক আবুল কাশেম বলেন, ‘এ এলাকার কাউন্সিলম্যান আমাদের কাছে সত্য গোপন করেছেন। সিটি কাউন্সিলে এ সিদ্ধান্ত গ্রহণের আগে এলাকাবাসীকে প্রস্তাবটি যথাযথভাবে অবহিত করা হয়নি। সিটি প্রশাসনও আমাদেরকে আগে জানায়নি। আমরা এমন পরিকল্পনার বিরুদ্ধে লড়ে যাবো। জনজীবন বিপন্ন হয়ে পড়তে পারে এমন কোন পদক্ষেপ সিটিকে নিতে দেব না।’
মানববন্ধনে অংশগ্রহণকারী নির্মাণ ব্যবসায়ী ও সমাজকর্মী আব্দুল কাদের মিয়া বলেন, ‘আমাদের ট্যাক্সে সবকিছু করা হচ্ছে। সুতরাং আমাদের মতামতের বিপক্ষে সিটিকে কিছু করতে দেব না।’
মানববন্ধনের সমন্বয় করেন চট্টগ্রাম সমিতির সভাপতি মো. আকবর আলী, কম্যুনিটি অ্যাক্টিভিস্ট আবুল কাশেম, আবুল বশর, সিএমবিবিএর সাবেক সভাপতি আব্দুর রব চৌধুরী, সন্দ্বীপ এসোসিয়েশনের সেক্রেটারি মহিউদ্দিন হাসান প্রমুখ। আশপাশের মসজিদ থেকে মুসল্লীরাও জড়ো হন সেখানে।
এ সময় এলাকার কাউন্সিলম্যান ব্র্যাড লেন্ডারের মতামত জানার চেষ্টা করা হয়। কিন্তু তিনি টেলিফোন রিসিভ করেননি কিংবা মানববন্ধনকারীদের সঙ্গে যোগাযোগও করেননি। মানববন্ধনে অংশগ্রহণকারীরা সিটি মেয়রের কাছে একটি দরখাস্তে স্বাক্ষর করেন। এটি শীঘ্রই মেয়র বিল ডি ব্লাসিয়োকে প্রদান করা হবে বলে উদ্যোক্তারা জানান।
বিডি-প্রতিদিন/ ০৮ ডিসেম্বর, ২০১৫/ রশিদা