ইমামসহ দুই বাংলাদেশিকে হত্যার মোটিভ উদঘাটন না হওয়ায় প্রবাসী বাংলাদেশীসহ মুসলিম-আমেরিকানদের মধ্যে ভীতির সঞ্চার ঘটেছে। বৃহস্পতিবার সকালে নিউইয়র্ক সিটি কাউন্সিলের সামনে নিহত ইমাম আলাউদ্দিন আকঞ্জি (৫৫) এবং তার সহকারি থারা উদ্দিনের (৬৪) স্বজনসহ জুইশ, খ্রিস্টান এবং মুসলিম কমিউনিটির শীর্ষস্থানীয় নেতৃবৃন্দ এক সংবাদ সম্মেলনে এ উদ্বেগের কথা ব্যক্ত করেন। তারা মসজিদ এবং মুসল্লীগণের যাতায়াত পথে টহল পুলিশের সংখ্যা বৃদ্ধির পাশাপাশি সিসিটিভির পরিমাণও বাড়ানোর আহবান জানান। এসময় তারা ৩৬ ঘন্টার মধ্যে ঘাতককে গ্রেফতারের জন্য নিউইয়র্কের পুলিশ বাহিনীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ধর্মীয় বিদ্বেষমূলকভাবে এই হত্যাকাণ্ড সংঘটিত করা হয়েছে। কিন্তু এখনও অভিযুক্ত অস্কারের বিরুদ্ধে ‘হেইট ক্রাইম’র ধারা যুক্ত করা হয়নি। এটি সত্যি দু:খজনক। মুসলমান বলেই ইমামসহ দু’জনকে পেছন থেকে মাথায় রিভলবার ঠেকিয়ে গুলি করা হয়।
সম্মেলনে ইমাম আকঞ্জির জামাতা মোমিন আহমেদ অশ্রুসিক্ত কন্ঠে বলেন, ‘আমাদের হৃদয় ভেঙ্গে গেছে। তিনি ছিলেন অত্যন্ত শান্তিপ্রিয় মানুষ। আমরা এই হত্যার কারণ এবং ঘাতকের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।’ এ সময় থারা উদ্দিনের শ্যালিকা আফিয়া উদ্দিন বলেন, ‘আমার ৬টি শিশু সন্তানই ভীত-সন্তস্ত হয়ে পড়েছে। বাসার বাইরে যেতে চায় না।’
সংবাদ সম্মেলন থেকে সকল ধর্মীয় জনগোষ্ঠিকে এমন ধর্ম-বিদ্বেষমূলক আচরণের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর আহবান জানানো হয়।
এদিকে বৃহস্পতিবার আরেকটি অনুষ্ঠানে মিডিয়ার মুখোমুখী হলে সিটি মেয়র বিল ডি ব্লাসিয়ো ইমাম হত্যাকাণ্ড প্রসঙ্গে বলেন, ‘রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পের মুসলিম বিদ্বেষমূলক বক্তব্য, যুক্তরাষ্ট্রে মুসলমানদের নিষিদ্ধ করার আহবান জানানোর পরিপ্রেক্ষিতে মুসলিম আমেরিকানদের আক্রমণের মুখে ঠেলে দেয়া হয়েছে। মুসলিম কমিউনিটিতে ভীতির সঞ্চার ঘটেছে-এটি সত্য এবং এজন্যে দায়ী ডোনাল্ড ট্রাম্প।’
উল্লেখ্য, গত ১৩ আগস্ট শনিবার দুপুরে যোহর নামাজ শেষে ওজন পার্কে আল ফোরকান মসজিদ থেকে পায়ে হেঁটে বাসায় ফেরার পথে এক দুর্বৃত্তের গুলিতে নিহত হন ঐ মসজিদের ইমাম মাওলানা আলাউদ্দিন আকঞ্জি এবং তার প্রতিবেশী থারা উদ্দিন। পরদিন রোববার দিবাগত রাতে ঘাতক হিসেবে অস্কার মরেলকে (৩৫) পুলিশ গ্রেফতার করেছে। এ সময় অস্কারের বাসা থেকে পয়েন্ট ৩৮ ক্যালিবারের একটি রিভলবার ও গুলি বর্ষণের সময় পরা একটি শার্টও পুলিশ উদ্ধার করেছে। রিভলবারের ভেতর যে গুলি ছিল, একই ধরনের গুলি পাওয়া যায় ইমামের মাথায়। এর ফলে পুলিশ নিশ্চিত হয় যে, এই অস্কারই ইমামসহ দু’জনকে গুলি করে হত্যা করেছে। হত্যাকাণ্ডের পর আশপাশের সিসিটিভিতেও অস্কারের ছবি দেখা যায়।
বিডি প্রতিদিন/১৯ আগস্ট ২০১৬/হিমেল-০৪