গত বছরের আয়-ব্যয়ের বিবরণী প্রদান তথা ব্যক্তিগত ট্যাক্স রিটার্নের কার্যক্রম শুরু হচ্ছে ২৮ জানুয়ারি সোমবার থেকে। জরিমানা ছাড়া ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত ট্যাক্স রিটার্ন করা যাবে। এবারের ট্যাক্স আইনে (আইআরএস) বেশ কিছু পরিবর্তন এসেছে। স্বল্প আয়ের লোকজনের মত উচ্চ আয়ের লোকজনও লাভবান হবেন।
তবে এবার কড়াকড়ি হয়েছে বিদেশে বিনিয়োগকৃত অর্থের ব্যাপারে। ১০ হাজার ডলারের বেশি বিনিয়োগ (সঞ্চয়পত্র, ফিক্সড ডিপজিট, ওয়েজ আর্নার বন্ড, শেয়ার মার্কেটে বিনিয়োগ, কোম্পানি অথবা ব্যাংকের শেয়ার ক্রয় করা, বাড়ি ভাড়া, ব্যবসা থেকে আয়) থাকলেই তা ট্যাক্সের বিবরণীতে অবশ্যই উল্লেখ করতে হবে।
এ প্রসঙ্গে নিউইয়র্কে খ্যাতনামা দুই সিপিএ (সার্টিফাইড পাবলিক একাউন্ট্যান্ট) রফিকুল ইসলাম এবং ইয়াকুব এ খান পৃথকভাবে ২৬ জানুয়ারি এনআরবি নিউজের এ সংবাদদাতাকে জানান, যুক্তরাষ্ট্রের সিটিজেনশিপ নিয়েছেন কিংবা গ্রিনকার্ড রয়েছে-এমন ব্যক্তিদের যদি বাংলাদেশে বিনিয়োগ, সঞ্চয়, বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান, এপার্টমেন্ট থাকে, তাহলে সে তথ্য যথাযথভাবে যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসনকে অবহিত করতে হবে। সে অর্থের পরিমাণ যদি ১০ হাজার ডলার অথবা তার বেশি হয়, তাহলে এটি বাধ্যতামূলক। প্রতি বছরের ৩০ জুনের মধ্যে এ তথ্য অনলাইনেও নির্দিষ্ট একটি ফরমে দেওয়া যায়।
সিপিএ রফিকুল ইসলাম জানান, এ রীতি চালু হয়েছে ফ্যাটকা (ফরেইন একাউন্ট ট্যাক্স কমপ্লাইয়েন্স এ্যাক্স)’র মাধ্যমে। বাংলাদেশ ব্যাংকের মাধ্যমে প্রবাসীদের ব্যাংক একাউন্টসহ বিস্তারিত তথ্য জানতে পারে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল কর্তৃপক্ষ। বিশেষ করে যারা বিনিয়োগ করেছেন অথবা ব্যাংকে ফিক্সড ডিপজিট করেছেন বা সঞ্চয়পত্র ক্রয় করেছেন, তাদেরকে খুবই সতর্কতার সাথে ট্যাক্স রিটার্নের সময় সবকিছু উল্লেখ করতে হবে। অন্যথায় জেল-জরিমানাসহ নানা ঝামেলার আশঙ্কা রয়েছে। এমনকি সমুদয় অর্থ যুক্তরাষ্ট্র সরকারের পক্ষ থেকে বাজেয়াপ্ত করার এখতিয়ারও দিয়েছে এই বিধি।
সিপিএ ইয়াকুব এ খান জানান, ‘বাংলাদেশে যারা ব্যবসা-বাণিজ্য করছেন, তারাও এ আইনের আওতায়। অর্থাৎ আয়-ব্যয়ের সব তথ্য জানাতে হবে বাধ্যতামূলকভাবে। এটি অমান্য করা চলবে না।’
লাভ বা সুদের পরিমাণও জানাতে হবে। পৈত্রিক সূত্রে প্রাপ্ত স্থাবর সম্পত্তি ফ্যাটকার আওতায় নয়। তবে ওই সম্পত্তির ওপর থেকে আয় হলে যেমন, ভাড়া, সুদ, লভ্যাংশ ইত্যাদি ধরনের আয় যদি থাকে তা ইনকাম ট্যাক্সে অবশ্যই উল্লেখ করতে হবে, যোগ করেন তিনি।
বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, সিটিজেন এবং গ্রিনকার্ডধারীর মধ্যে কমপক্ষে ৫০ হাজার ব্যক্তি নিয়মিতভাবে বাংলাদেশে বাস করছেন। তাদের মধ্যে সরকারি আমলা, শিক্ষক, ব্যবসায়ী, শিল্পী, সাহিত্যিক, সাংবাদিক এবং রাজনীতিকও রয়েছেন।
সিপিএ রফিকুল ইসলাম জানান, ফ্যাটকা নতুন কোনো বিধি নয়, অনেক পুরনো। তবে বাংলাদেশ এই বিধিতে বছর চারেক আগে স্বাক্ষর করায় তা বাংলাদেশি-আমেরিকানদের জন্য তা খড়গে পরিণিত হয়। এ আইন অমান্যকারীর উচ্চ হারে জরিমানার পাশাপাশি কারাদণ্ডের বিধি রয়েছে। একইসাথে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির সিটিজেনশিপ/গ্রিনকার্ড কেড়ে নেওয়ার হুমকিও রয়েছে।
সিপিএ রফিকুল আরও জানান, সাম্প্রতিক সময়ে অনেক ব্যবসায়ী ট্যাক্স ফাঁকি দিয়ে মহাবিপদে পড়েন। এর মধ্যে বাংলাদেশিও রয়েছেন। কেউ কেউ দীর্ঘমেয়াদি কারাবাস করছেন। আবার অনেকে জামিনে মুক্তিলাভ করলেও মোটা অঙ্কের জরিমানার ঝামেলায় দিনাতিপাত করছেন। এসব ব্যক্তিরা ফেডারেল গোয়েন্দাদের সার্বক্ষণিক নজরদারিতে রয়েছেন।
বিডি প্রতিদিন/কালাম