জাতিসংঘের অপারেশনাল সাপোর্ট বিভাগের আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল অতুল খারে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আমি খুবই গৌরববোধ করছি যে, বাংলাদেশের সেনাবাহিনী শান্তি ও নিরাপত্তার জন্যে নিরন্তরভাবে সচেষ্ট রয়েছেন। ৫০ বছরেরও কিছু সময় আগে তারা নিজ দেশের স্বাধীনতার জন্যেও সাহসিকতার স্বাক্ষর রেখেছেন। সেই বাহিনীর সদস্যরা এখন বিশ্বের গোলযোগপূর্ণ অঞ্চলের শান্তি-নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে অবদান রেখে চলছেন। সেই দেশের সশস্ত্র বাহিনীর প্রতিষ্ঠা-দিবসের অনুষ্ঠানে যোগদান করতে পেরে নিজেকে ধন্য মনে করছি। একইসাথে রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ মুহিতের গভীর কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি অনুষ্ঠানে যোগদানের সুযোগ দেয়ার জন্যে।
অতুল খারে বলেন, যুদ্ধ-বিধ্বস্ত জনপদে শান্তি প্রতিষ্ঠাই শুধু নয়, সামাজিক সম্প্রীতি পুনঃপ্রতিষ্ঠার পাশাপাশি গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান চালুর ব্যাপারেও শান্তিরক্ষা মিশনের বাংলাদেশি সৈন্যদের ভূমিকা আজ সর্বজনবিদিত।
মিশনের বঙ্গবন্ধু মিলনায়তনে ২১ নভেম্বর মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ৫৩তম সশস্ত্র বাহিনী দিবস উপলক্ষ্যে আয়োজিত অভ্যর্থনা অনুষ্ঠানে এসেছিলেন জাতিসংঘের পিস অপারেশন বিভাগের আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল জ্যঁপিয়েরে ল্যাক্রুয়া। তিনিও শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশের সৈন্যদের ভূমিকার উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করলেন এ সংবাদদাতার সাথে আলাপকালে।
ল্যাক্রুয়া বললেন, তাদের কর্মনিষ্ঠা ও দায়িত্ব বোধের কারণেই বেশ কিছুকাল যাবত শান্তিরক্ষা মিশনে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক বাংলাদেশি সৈন্যকে রাখা হয়েছে।
সমাবেশে জাতিসংঘের নিরাপত্তা বিভাগের এ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি জেনারেল উনাইসি ভুনিওয়াকা, জাতিসংঘের মিলিটারি এডভাইজার জেনারেল বিরামে ডিওপসহ বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত (স্থায়ী প্রতিনিধি) ও সামরিক উপদেষ্টাগণ (মিলিটারি এডভাইজার)অংশগ্রহণ করেন।
শুরুতে উপস্থিত অতিথিদের স্বাগত জানিয়ে বক্তব্য প্রদান করেন জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি ও রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ আব্দুল মুহিত। রাষ্ট্রদূত মুহিত জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। তিনি মহান মুক্তিযুদ্ধের ত্রিশ লক্ষ শহীদ এবং দুই লক্ষেরও বেশি নির্যাতিত নারীর প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করে বলেন, তাঁদের সংগ্রাম ও আত্মত্যাগের কারণেই আমরা পেয়েছি স্বাধীন, সার্বভৌম বাংলাদেশ। এসময় তিনি ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণার মাধ্যমে শুরু হওয়া মহান মুক্তিযুদ্ধে নবগঠিত সশস্ত্র বাহিনীর গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা, দেশের অভ্যন্তরে প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলা ও নানাবিধ উন্নয়ন কার্যক্রমে সশস্ত্র বাহিনীর অবদান তুলে ধরেন। তিনি আরো বলেন, আমাদের শান্তিরক্ষী বাহিনীর গুরুত্বপূর্ণ সদস্য হিসেবে বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনী বৈশ্বিক শান্তি ও নিরাপত্তা রক্ষায় অসামান্য অবদান রেখে চলেছে। বিশ্বের বিভিন্ন যুদ্ধবিধস্ত দেশের পুনর্গঠনে প্রশংসনীয় অবদান রাখছে। এসকল কার্যক্রমের মাধ্যমে তাঁরা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করছে।
আগত অতিথিদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে স্থায়ী প্রতিনিধি মুহিত বলেন, “প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বে বর্তমান সরকার আমাদের সশস্ত্র বাহিনীর অধিকতর আধুনিকায়নে বিভিন্নমুখী উদ্যোগ হাতে নিয়েছে। এই উদ্যোগসমূহের বাস্তবায়ন সশস্ত্র বাহিনীকে আরো দক্ষ ও শক্তিশালী করে তুলবে। সর্বোপরি, ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি সুখী-সমৃদ্ধ উন্নত দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে আমাদের সশস্ত্র বাহিনী আরো কার্যকর ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে।”
অনুষ্ঠানে দেশে ও বিদেশে সশস্ত্র বাহিনীর বিভিন্ন কার্যক্রম তুলে ধরে আগত অতিথিদের উদ্দেশ্যে একটি তথ্যবহুল ব্রিফিং প্রদান করেন মিশনের ডিফেন্স এ্যাডভাইজার বিগ্রেডিয়ার জেনারেল সাদেকুজ্জামান। বক্তব্য পর্ব শেষে স্থায়ী প্রতিনিধি ও রাষ্ট্রদূত আগত অতিথিদের নিয়ে কেক কাটেন এবং সকলকে নৈশভোজে আমন্ত্রণ জানান। এসময় সশস্ত্র বাহিনী দিবস উপলক্ষ্যে একটি প্রামাণ্য চিত্র প্রদর্শন করা হয়।
অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত অতিথিবর্গ শীর্ষ শান্তিরক্ষী প্রেরণকারী দেশ হিসবে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে বাংলাদেশ যে অবদান রেখে যাচ্ছে তার ভূয়সী প্রশংসা করেন। এসময় তারা সশস্ত্র বাহিনী দিবস উপলক্ষে জাতিসংঘে বাংলাদেশ স্থায়ী মিশন আয়োজিত অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণের জন্য ধন্যবাদ জানান।
বিডি প্রতিদিন/এএম