কোভিড পরিস্থিতির কারণ দেখিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির নির্বাচন থেকে বিরত থাকার ঘোষণা দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিএনপি-জামায়াত সমর্থিত শিক্ষকদের প্যানেল সাদাদল। বৃহস্পতিবার ভার্চুয়ালি আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এই সিদ্ধান্তের কথা জানায় তারা। তবে আগামী ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিতব্য নির্বাচনকে সামনে রেখে নিজেদের প্যানেল চূড়ান্ত ও দাখিল করেছে আওয়ামীপন্থী শিক্ষকদের সংগঠন নীলদল।
এর আগে, গত ৭ ডিসেম্বর শিক্ষক সমিতির কার্যনির্বাহী পরিষদ মনোনীত নির্বাচন পরিচালক অধ্যাপক জাকির হোসেন ভূইয়া নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেন। তফসিল অনুযায়ী, ৩০ ডিসেম্বর সকাল ১০টা থেকে বিকেল আড়াইটা পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্লাবে ভোটগ্রহণ হবে। নির্বাচনের মনোনয়ন ফরম সংগ্রহের শেষ দিন ছিলো ১৫ ডিসেম্বর। আর ১৭ ডিসেম্বর মনোনয়নপত্র জমাদানের শেষ তারিখ। মনোনয়ন পত্র বাছাই, প্রার্থিতা প্রত্যাহার ও প্রার্থীদের চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ ২০ ডিসেম্বরের মধ্যে সম্পন্ন হবে।
তবে করোনা পরিস্থিতি, বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মিত শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ থাকা, অন্যান্য নির্বাচন না হওয়া প্রভৃতি যুক্ত দেখিয়ে নির্বাচনে অংশ নেওয়া থেকে বিরত থাকার ঘোষণা দিয়েছে সাদাদল। ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে সাদাদলের আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. এবিএম ওবায়দুল ইসলাম বলেন, কোভিড-১৯ সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউয়ের আঘাতে প্রতিদিন মৃত্যু ও সংক্রমণের সংখ্যা বাড়ছে। বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারেও এর প্রভাব পরিলক্ষিত হচ্ছে। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আমাদের সম্মানিত সহকর্মীরা তাঁদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে আসলে যে লোক সমাগম হবে, তাতে সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়বে। গত মার্চ মাস থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বাভাবিক একাডেমিক ও প্রশাসনিক কাজ বন্ধ আছে। মেয়াদকাল অনেক আগেই অতিবাহিত হলেও সিনেটে ৩৫ জন শিক্ষক প্রতিনিধি, সিন্ডিকেট, একাডেমিক কাউন্সিল, ফাইনান্স কমিটি এবং অনুষদসমূহের ডিন প্রভৃতি নির্বাচন কোভিড পরিস্থিতিতে আয়োজনের কোনো উদ্যোগ নেয়নি কর্তৃপক্ষ। এমনকি ডাকসুর মেয়াদকাল শেষ হলেও কোভিড পরিস্থিতির কারণে সে নির্বাচনও আয়োজন করা যাচ্ছে না। এমতাবস্থায় শিক্ষক সমিতির নির্বাচন করা কোনোভাবেই যৌক্তিক বলা যায় না।
বিষয়টি নিয়ে নির্বাচন পরিচালক অধ্যাপক জাকির হোসেন ভূইয়া বলেন, ‘আমাকে নির্বাচন পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী যেভাবে করার সেভাবে করবো। শিক্ষক সমিতির দায়িত্বে যারা আছেন, তারা এটা বলতে পারবেন।’ কোনো দল নির্বাচনে অংশ না নিলেও নির্বাচনের বাধ্যবাধকতা আছে কিনা-এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘বিষয়টি দেখতে হবে’।
সাদাদলের নির্বাচনে না যাওয়ার বিষয়ে নীলদলের আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. আব্দুস ছামাদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, তারা নির্বাচন করতে চাইলে করবেন, না চাইলে করবেন না, এটা তাদের অধিকার। এ নিয়ে আমাদের বা অন্য কারো বলার কিছু নেই।
সাদাদলের নির্বাচনে না যাওয়ার কারণগুলোর দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি বলেন, কোভিড পরিস্থিতিতে কোনটা বন্ধ আছে? আমরা ক্লাস পরীক্ষা নিচ্ছি। হল খুলে দিচ্ছি না, কারণ হল খুলে দিলে সামাজিক দুরত্ব নিশ্চিত হবে না।
নির্বাচনে সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করা হবে জানিয়ে তিনি বলেন, এখানে প্রত্যেক শিক্ষক সজাগ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্লাব একটা বিশাল এরিয়া। বুথের সংখ্যা বৃদ্ধি করে ১০-১৫টা করা হবে। সেগুলো আমরা খেলার মাঠে দিয়ে দিবো। সামাজিক দুরত্ব বজায় রাখতে কোনো কিছুর অভাব রাখা হবে না।
এদিকে, নির্বাচনে যাওয়ার বিষয়ে অনড় নীলদল। এরই মধ্যে প্যানেল চূড়ান্ত ও তা জমা দিয়েছে তারা। এ বিষয়ে নীলদলের আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. আব্দুস ছামাদ বলেন, নীলদল দেশের প্রয়োজন, রাষ্ট্রের প্রয়োজন এবং সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা থেকে নির্বাচনে যাবে। নীলদল গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় বিশ্বাস করে। সুতরাং নীলদল নির্বাচনে যাবে এটাই স্বাভাবিক।
এবছর নীলদলের প্যানেলে সভাপতি পদে অধ্যাপক ড. মো. রহমত উল্লাহ ও সাধারণ সম্পাদক পদে অধ্যাপক ড. নিজামুল হক ভুইঁয়া নির্বাচন করছেন। এছাড়াও সহ-সভাপতি পদে অধ্যাপক ড. সাবিতা রেজওয়ানা চৌধুরী, কোষাধ্যক্ষ পদে অধ্যাপক ড. মো. আকরাম হোসেন, যুগ্ম-সম্পাদক পদে অধ্যাপক ড. মো. আব্দুর রহিম প্রার্থী হয়েছেন।
১০টি সদস্য পদে নির্বাচন করছেন অধ্যাপক ড. জিয়া রহমান, অধ্যাপক ড. সাদেকা হালিম, অধ্যাপক ড. এজেএম শফিউল আলম ভুইয়া, অধ্যাপক ড. ইসতিয়াক মঈন সৈয়দ, অধ্যাপক ড. সাইফুল ইসলাম, অধ্যাপক ড. আমজাদ আলী, অধ্যাপক ড. চন্দ্রনাথ পোদ্দার, অধ্যাপক ড. আবু সারা শামসুর রউফ, অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আব্দুল মঈন এবং অধ্যাপক ড. নিসার হোসেন।
বিডি প্রতিদিন/ ওয়াসিফ