রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনে সিলেটের গোবিন্দ পার্কের ঐতিহাসিক ভূমিকা রয়েছে। বন্দরবাজারের আজকের হাসান মার্কেটের নাম ছিল তখন গোবিন্দ পার্ক। সিলেটের সকল আন্দোলন সংগ্রামের কেন্দ্রবিন্দু এখন যেমন কোর্টপয়েন্ট, সেকালে ছিল গোবিন্দ পার্ক।
সিলেটের বিভিন্ন অংশ থেকে উঠে আসা রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনের ঢেউ আছড়ে পড়ত এই গোবিন্দ পার্কে। ওখানেই বাংলা ভাষার পক্ষে সভা-সমাবেশ হতো।
সেই ৪৭ এর শেষ এবং ৪৮ এর শুরুর দিকে প্রায় প্রতিদিন শহরের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মিছিলসহ বিক্ষুব্ধ জনতা গোবিন্দ পার্কে জড়ো হতেন। আসতেন শহরের বাইরে থেকেও। অংশ নিতেন সভা-সমাবেশে। শাসকদের চক্রান্তের বিরুদ্ধে ফুঁসে উঠতো গোবিন্দ পার্ক। আন্দোলন সংক্রান্ত অনেক গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তও নেওয়া হতো সেইসব সভা-সমাবেশ থেকে।
‘৪৭ থেকে ৫২’ দীর্ঘ প্রায় পাঁচ বছর গোবিন্দ পার্কে সভা-সমাবেশসহ অসংখ্য কর্মসূচি আয়োজন করা হলেও কখনোই তা খুব সহজ ছিল না। বাংলার পক্ষে আয়োজিত অনেক কর্মসূচি বানচাল করতে উর্দুপ্রেমীরা হামলাও চালাতো গোবিন্দ পার্কে।
১৯৪৮ সালে তেমনই এক হামলায় মারাত্মক আহত হন তরুণ ছাত্র নেতা মকসুদ আহমদ। সেদিন তাকে রক্তাক্ত করা হয়েছিল। তবে দেশপ্রেমিক জনতার ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টায় উর্দু পক্ষের এদেশীয় দালালরা পিছু হঠতে বাধ্য হয়। ভাষা আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখা সেই গোবিন্দ পার্ক পরবর্তিতে ব্যবসাকেন্দ্র হয়ে যায়।
সিলেটের আপামর জনতার হৃদয়ে ঢেউ তুলা পার্কটিতে কোন স্মৃতি স্থম্ভ গড়ে তুলা হয়নি। দেশ পরিচালনায় একের পর এক ক্ষমতার পালাবদল হলেও এ ব্যপারে কেউ কোন উদ্যোগ নেয়ার প্রয়োজন মনে করেননি।
বিডি প্রতিদিন/৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮/ফারজানা