রেলপথ মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে পরিচ্ছন্ন কর্মী বা সুইপার নিয়োগে ‘জাত হরিজন’ সম্প্রদায় নিয়ে নানাবিধ প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। এতে সুইপার নিয়োগের ক্ষেত্রে বিভিন্ন ভাবে জাত হরিজন দেখানোর জন্য মেয়র, কাউন্সিলর ও স্থানীয় চেয়ারম্যানদের কাজ থেকে নেয়া ‘হরিজন সনদ’ গুলোর মধ্যে অনেকেই ভুয়া বা জাল সনদও দেয়া হচ্ছে। রেলওয়েসহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের নিয়োগে এমন ঘটনায় ব্যাপক আলোচনাও হয়েছিল।
সবমিলে ‘জাত হরিজন’ নির্ধারণের বিষয়ে ২৫ জানুয়ারি জনপ্রশাসন মন্ত্রনালয়ের সিনিয়র সচিব ড. মো. মোজাম্মেল হক খান স্বাক্ষরিত একটি প্রজ্ঞাপন বা চিঠি দিয়েছেন মন্ত্রী পরিষদ সচিব, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব, সিনিয়র সচিব ও সচিব পর্যায়ে।
পরিচ্ছন্ন কর্মী নিয়োগের ক্ষেত্রে ‘জাত হরিজন সনদ’ প্রদানকারী নির্ধারণের বিষয়ে চিঠিকে উল্লেখ আছে, পৌর সভা, সিটি করপোরেশনসহ সরকারি এবং স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠানে ‘পরিচছন্ন কর্মী’ নিয়োগের ক্ষেত্রে হরিজন সম্প্রদায়কে ‘জাত হরিজন সনদ’ প্রদানের জন্য স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান তথা ইউনিয়ন পরিষদের ক্ষেত্রে চেয়ারম্যান, পৌরসভার ক্ষেত্রে মেয়র এবং সিটি করপোরেমনের ক্ষেত্রে কাউন্সিলর উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ হিসেবে বিবেচিত হবে। এতে সকল মন্ত্রণালয় ও বিভাগকে তাদের অধিন সকল পর্যায়ের নিয়োগকারি কর্তৃপক্ষ উক্ত সিন্ধান্ত অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্তা গ্রহণের করেত নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
পূর্বাঞ্চল রেলওয়ের মহাব্যবস্থাপক (জিএম) প্রকৌশলী আবদুল হাই বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, রেলওয়ের পরিচ্ছন্ন কর্মী বা সুইপার নিয়োগের বিষয়ে ‘জাত হরিজন’ সম্প্রদায় নির্ধারণের বিষয়ে কারা সনদ প্রদান করতে পারবেন এমন একটি প্রজ্ঞাপন বা চিঠি পেয়েছি। এতে সরকারিভাবে নিয়োগে ‘জাত হরিজন’ নির্ধারণে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে কারা সনদ দিতে পারবেন। এতে আমাদের নিয়োগের কাজ করতে অনেক সুবিধা হবে। তিনি বলেন, রেলপথ মন্ত্রীর নির্দেশনায় স্বচ্ছ এবং জবাবদিহীতার মধ্যেই রেলের সকল প্রকার নিয়োগ শেষ করার প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। ইতিমধ্যে কয়েকটি পদের নিয়োগ পরীক্ষা শেষও হয়েছে। তাছাড়া পরিচ্ছন্ন কর্মী পদে ৮০ শতাংশ হরিজন সম্প্রদায়কে নিশ্চিত করার নির্দেশনাও রয়েছে। সকল নির্দেশনা মেনেই দ্রুত সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করবেন। তবে এসব বিষয়ে কোন ধরণের অনিয়ম হলেই আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও জানান জিএম।
রেলওয়ে ও নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, রেলের পরিচ্ছন্ন কর্মী নিয়োগ শেষ পর্যায়ে থাকলেও নানাবিধ জটিলতায় এসব পদের নিয়োগ প্রায় বাধার সৃষ্টি হয়ে পড়েছিল। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনায় ৮০ শতাংশ জাত হরিজন (সুইপার) নিয়োগের নির্দেশনা রয়েছে। এ নিয়োগ নিয়ে জাত হরিজন দেখানোর জন্য বিভিন্ন প্রতিষ্টানের সনদ সংযুক্তি করা হয়েছে। পরীক্ষার পরও এসব সনদ সংগ্রহ করে কৌশলে জমা দেয়ারও চেষ্টা ছিল। এতে কেন্দ্রীয় হরিজন ঐক্য পরিষদ, হরিজন ঐক্য পরিষদ চট্টগ্রাম জেলা শাখা, হরিজন মানবাধিকার ফেডারেশন এবং সিটি করপোরেশনসহ বিভিন্ন পৌরসভার সনদগুলো সংগ্রহ করে সংযুক্তি করা হয়েছে। এতে ইস্যুকৃত সনদগুলোর মধ্যে কোনটি ‘গ্রহণযোগ্য’ সে বিষয়ে কোন ধরণের সুস্পষ্ট সরকারি নির্দেশনা না থাকায় হিমশিম খেতে হয়েছিল রেল প্রশাসনের। সর্বশেষ ২৫ জানুয়ারী জাত হরিজন নির্ধারণের বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের চিঠির পর রেল প্রশাসনসহ বিভিন্ন মন্ত্রনালয় একটু নড়েচড়ে উঠেছে। এবার কারা সনদ দিতে পারবেন তাও স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে। রেলওয়েতে বর্তমানে ২’শ ১২টি ‘পরিচ্ছন্ন কর্মী’ নিয়োগের কাজ চলছে।
বিডি প্রতিদিন/এ মজুমদার