চট্টগ্রামে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে বির্তকিত প্রার্থীরাও মনোনয়ন দৌঁড়ে পিছিয়ে নেই। চলছে জোড় লবিং তদবিরও। চট্টগ্রামের আওয়ামী লীগ থেকে দু’বার বহিষ্কার হয়েছিলেন মো. ইদ্রিচ। দলীয় প্রার্থীর বিরোধিতা করে বিদ্রোহী প্রার্থীও হয়েছিলেন। দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের মতো গুরুতর অভিযোগও ছিল। এমন অভিযোগ ওঠে এক চেয়ারম্যাম প্রার্থীর বিরুদ্ধে। এসব নিয়ে চট্টগ্রামসহ দক্ষিণ জেলা-উপজেলার শীর্ষ নেতা-কর্মীদের মধ্যে ব্যাপক আলোচনাও চলছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলার জুঁইদন্ডী ইউনিয়নে বির্তকিত একজনকে চেয়ারম্যান পদে মনোনয়ন দিতে তৎপর আওয়ামী লীগ। ইতোমধ্যে সেই বির্তকিত চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগ ও আনোয়ারা উপজেলা আওয়ামী লীগ মো. ইদ্রিচকে একক প্রার্থী হিসেবে কেন্দ্রে সুপারিশও করেছে। অথচ স্থানীয় সরকার নির্বাচনে বহিষ্কৃত ও বিদ্রোহী প্রার্থীদের নাম প্রস্তাব না করতে উপজেলা ও জেলা আওয়ামী লীগের প্রতি কেন্দ্রের স্পষ্ট নির্দেশনা আছে। এখানে মো. ইদ্রিচকে মনোনয়ন না দিতে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও মনোনয়ন বোর্ডের কাছে দলীয় নেতাদের আবেদনসহ মো. ইদ্রিচের বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি অভিযোগও জমা দেওয়া হয়েছে।
চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল এক নেতা বলেন, যতটুকু জেনেছি আনোয়ারা আওয়ামী লীগ জেলা আওয়ামী লীগের কাছে একজনের নাম পাঠিয়েছে। সেই প্রার্থীর (মোহাম্মদ ইদ্রিচ) কিছু তথ্য গোপন করা হয়েছে। তিনি গতবার আদালতের নির্দেশে স্থগিত হওয়া নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছিলেন। জেলা আওয়ামী লীগও একই ব্যক্তির নাম পাঠালেও তার বিষয়ে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগকে অবহিত করা হয়েছে। এ বিষয়ে জানতে জুঁইদন্ডী ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী মো. ইদ্রিচকে একাধিকবার ফোন দেওয়া হলেও তাকে পাওয়া যায়নি। তবে আনোয়ারা জুঁইদন্ডী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল জলিল আজাদ বিষয়টি কৌশলে এড়িয়ে গিয়ে মন্তব্য করতে রাজি হননি।
দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান বলেন, কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত মোতাবেক কোনও বিদ্রোহী বা বহিস্কৃত নেতা দলের প্রার্থী হতে পারবে না। এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় মনোনয়ন বোর্ড কঠোর অবস্থানে রয়েছে। তবে প্রার্থী বিষয়ে উপজেলা থেকে যাছাই-বাছাই করে জেলা কমিটি তালিকা পাঠানো হয়। সেই মোতাবেক তালিকা আমরা কেন্দ্রীয় কমিটিতে পাঠিয়ে থাকি। তবে বিদ্রোহী বা বহিষ্কৃত হলে কেন্দ্রীয় কমিটি যাছাই-বাছাই করে যে কারও বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেবেন বলে জানান তিনি।
জানা যায়, ২০১৪ সালের ১১ জুলাই দলীয় শৃঙ্খলা বিরোধী কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকায় মো. ইদ্রিচকে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতির পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়ার পাশাপাশি সাময়িক বহিষ্কার করেছিলেন তৎকালীন উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বাহাউদ্দিন খালেক শাহজি। পরবর্তীতে ২০১৬ সালে জুঁইদন্ডী ইউনিয়নে নির্বাচনী তফসিল ঘোষণা করা হলে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন পান আওয়ামী লীগ নেতা মাহফুজুর রহমান। ২০১৬ সালের ৪ জুলাই এ নির্বাচনের তারিখ ছিল। নির্বাচনী সব ধরনের প্রক্রিয়া শেষ করে প্রার্থীরা প্রতীক বরাদ্দ নিয়ে প্রচার-প্রচারণাও শুরু করেছিল। সেই নির্বাচনে দল মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর বিরুদ্ধে নির্বাচনে আনারস প্রতীকে প্রার্থী হয়েছিলেন মো. ইদ্রিচ। সেসময় পঞ্চম ও ষষ্ঠ ধাপের নির্বাচনে বিদ্রোহী হিসেবে ২৫ মে নির্বাচনে অংশ নেওয়া ৪৯জন প্রার্থীকে একযোগে বহিষ্কার করেছিল দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগ। সেই তালিকায় মো. ইদ্রিচের নামও ছিল। কিন্তু নির্বাচনের একদিন আগে আদালত নিষেধাজ্ঞা জারি করলে ওই সময় আর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়নি।
প্রসঙ্গত, গত ১৮ ডিসেম্বর সকল ধরনের আইনি জটিলতা কাটিয়ে আনোয়ারা উপজেলার জুঁইদন্ডী ইউনিয়নের তফসিল ঘোষণা হয়েছে। আগামী ৩১ জানুয়ারি ষষ্ঠ ধাপে এই ইউনিয়নে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
বিডি প্রতিদিন/কালাম