সরকার পতনের একদফা দাবি ও গ্রেফতারকৃত নেতাকর্মীদের মুক্তির দাবিতে বিএনপির ডাকা অবরোধ কর্মসূচিতে দেখা মিলছে না বিএনপি নেতাদের। তবে অবরোধে বিএনপির সিনিয়র নেতারা মাঠে না থাকলেও অবরোধবিরোধী সমাবেশে সরব রয়েছেন আওয়ামী লীগের শীর্ষ স্থানীয় নেতারা। ছাত্রলীগ যুবলীগের পাশাপাশি সক্রিয় রয়েছে অন্য অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনও।
বিপরীতে অবরোধের সমর্থনে ছাত্রদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতাদের ঝটিকা মিছিল দেখা গেলেও দায়সারা ভাব বিএনপির শীর্ষ নেতাদের মাঝে। ফলে চলমান অবরোধ কর্মসূচিতে রাজপথ আওয়ামী লীগের দখলে থাকলেও বিএনপির মাঠে রয়েছে তৃণমূল নেতাকর্মীরা বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
নগর বিএনপির দপ্তরে দায়িত্বপ্রাপ্ত ইদ্রিস আলী জানান, বিএনপি সূত্র জানায়, চতুর্থ দফা অবরোধের শেষ দিনে নগরী ও জেলার বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ মিছিল ও সড়ক অবরোধ করেছে নেতাকর্মীরা। অবরোধকে কেন্দ্র করে মহানগর বিএনপির আরো ১০ জন নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এছাড়াও অবরোধের সমর্থনে মিছিল করেছে বিএনপি নেতাকর্মীরা।
চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী বলেছেন, বিএনপি-জামায়াতের অযৌক্তিক, অবরোধ ও রাজনৈতিক কর্মসূচির সুযোগে এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট পরিকল্পিতভাবে নিত্য দ্রব্যপণ্যের মূল্য বাড়িয়ে দিয়ে মুনাফা লুটার পায়তারা করছে। এই সিন্ডিকেটের সাথে যুক্ত দুষ্ট চক্রকে কঠোরভাবে দমন ও নির্মূল করাটা এখন আমাদের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক দায়বদ্ধতা। এদের বিরুদ্ধে ৭১’র চেতনায় আমরা রাজপথে আছি এবং আগামী নির্বাচন পর্যন্ত রাজপথে থাকবো।
জানা যায়, বিএনপির ঘোষিত হরতাল ও অবরোধ বিরোধী নানা কর্মসূচি নিয়ে মাঠে সরব রয়েছেন আওয়ামী লীগের শীর্ষ স্থানীয় নেতা থেকে তৃণমূল নেতাকর্মীরা। চতুর্থ দিনের শেষ দিন সোমবার নগর আওয়ামী লীগ টিম গঠন করে নগরের ১৯টি পয়েন্টে অবস্থান নিয়েছেন। এছাড়াও এসব কর্মসূচি ঘিরে সক্রিয় রয়েছেন নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মাহতাব উদ্দীন চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক আ.জ.ম নাছির উদ্দীন নগর কমিটির নেতাদের নিয়ে নগরের বিভিন্ন পয়েন্টে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন।
এছাড়াও নগর যুবলীগের সহসভাপতি দেবাশীষ পাল দেবুর নেতৃত্বে নগরের বন্দর, পতেঙ্গা, ইপিজেড এলাকায় নিয়মিত কর্মসূচি পালন করছেন নেতাকর্মীরা। দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান, জেলা যুবলীগের সভাপতি দিদারুল ইসলাম চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক জহুরুল ইসলামের নেতৃত্বে জেলার বিভিন্ন উপজেলায় অবস্থান কর্মসূচি পালন করে আসছে। এছাড়াও উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুস সালামের নেতৃত্বে হাটহাজারী উপজেলাসহ জেলার বিভিন্ন উপজেলায় কর্মসূচি পালন করে আসছে। চট্টগ্রামে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে প্রেসিডিয়াম সদস্য ইঞ্জি. মোশাররফ হোসেন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ, ত্রাণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম, দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়–য়া, অর্থ ও পরিকল্পনা সম্পাদক ওয়াশিকা আয়েশা খান চট্টগ্রামে থাকতে না পারলেও রাজধানীতে দলের ও সরকারের নানা কর্মসূচিতে সক্রিয় রয়েছেন।
অপরদিকে টানা চতুর্থ দফা অবরোধের সমর্থনে এখন পর্যন্ত মাঠে দেখা যায়নি চট্টগ্রামের শীর্ষ নেতাদের। বিশেষ করে চট্টগ্রামে বিএনপির প্রায় ২৪ জনের মতো কেন্দ্রীয় নেতা রয়েছেন। তারমধ্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী কারাগারে রয়েছেন। বাকি নেতাদের মধ্যে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান, মীর নাছির উদ্দীন, গিয়াস উদ্দীন কাদের চৌধুরী, উপদেষ্ঠা গোলাম আকবর খোন্দকার, এস এম ফজলুল হক, সুকোমল বড়ুয়া, সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীম, শ্রম সম্পাদক এএম নাজিম উদ্দীন, স্বাস্থ্য পরিবার সম্পাদক প্রফেসর মহসিন জিল্লুর, মহিলা সম্পাদক নুরে আরা সাফা, স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. ফাওয়াজ হোসেন শুভ, তথ্য ও গবেষণা সহ-সম্পাদক কাদের গণি চৌধুরী, কেন্দ্রীয় সদস্য সরওয়ার জামাল নিজাম, গাজী শাহাজাহন জুয়েল, মোস্তফা কামাল পাশা, এম শামসুল আলম, কামাল উদ্দিন চৌধুরী, বিচারপতি ফয়সল মাহমুদ চৌধুরী, আনোয়ার হোসাইন, সাথী উদয় কুমার বড়ুয়া, সুশীল বড়ুয়া, মীর হেলাল, হুম্মাম কাদের চৌধুরী ও তরিকুল আলম তেনজিংও মাঠে নেই।
যুগ্ম মহাসচিব আসলাম চৌধুরী ২০১৬ সালের মে মাস থেকে জেলে আছেন। এমন পরিস্থিতি নেতাকর্মীরা যে যার অবস্থান মতে মাঠে কর্মসূচি সফল করছেন। ফলে এসব কর্মসূচি নেতাদের চেয়ে কর্মীদের কঠিন পরীক্ষা দিতে হচ্ছে বলে দাবি নেতাকর্মীদের।
বিডি প্রতিদিন/হিমেল