বিএনপি-জামায়াতের ডাকা অবরোধে মহাসড়ক নিরাপদ রাখতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি দিনরাত পাহারা দিচ্ছেন যুবলীগ, ছাত্রলীগের একদল তরুণ। প্রায় প্রতিদিনই নিয়ম করে মহাসড়কের বিভিন্ন অংশ পাহারায় নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন তারা। মিরসরাই সদর থেকে কুমিরা পর্যন্ত এলাকায় সন্ধ্যার পর থেকে রাত পর্যন্ত প্রায়ই মোটরসাইকেল নিয়ে রাস্তায় টহল দিতে দেখা যাচ্ছে তাদের। আর এসবের নেতৃত্ব দিচ্ছেন মিরসরাই ও সীতাকুণ্ডের যুবলীগ ও ছাত্রলীগ নেতারা।
জানা গেছে, মিরসরাইয়ের বারইয়াহাট থেকে চট্টগ্রাম নগরীর সিটি গেট পর্যন্ত মহাসড়কের দূরত্ব ৬৫ কিলোমিটারের মতো। ২০১৪ সালে বিএনপি ও জামায়াতের আন্দোলনের সময় ‘হটস্পট’ ছিল এই এলাকা। বিশেষ করে ছোট কমলদহ থেকে বাড়বকুণ্ড এলাকা পর্যন্ত ছিল আন্দোলনকারীদের মূল টার্গেট। মহাসড়কের এই ১৭ কিলোমিটারে যানবাহন চালকরা সে সময় প্রতি মুহূর্তেই পেট্রল বোমা আতঙ্কে ভুগতেন।
সে সময় প্রতিদিনই যানবাহন পোড়ানো হলেও তা নিয়ন্ত্রণে হিমশিম খাচ্ছিল স্থানীয় প্রশাসন। পরে মিরসরাই ও সীতাকুণ্ডের দুই যুবলীগ নেতা মো. সাইদুল ইসলাম ও আশরাফুল কামাল মিঠুর নেতৃত্বে যুবলীগ-ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের নিয়ে দল গঠন করে মহাসড়ক পাহারা দেওয়া শুরু করেন। তাদের উদ্যোগের ফলে সে সময় যানবাহন পোড়ানোর হার কমে যায়। বিষয়টি নিয়ে তারা ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ঊর্ধ্বতন নেতৃবৃন্দ এবং স্থানীয় প্রশাসনের বাহবা পান।
বর্তমানে চলমান বিএনপি-জামায়াতের আন্দোলনেও একই উদ্যোগ নিয়েছেন এই দুই নেতাসহ মহাসড়কের আশপাশের এলাকার নেতাকর্মীরা। মহাসড়কের পাশে অস্থায়ী ক্যাম্প করে তারা এক স্থানে জড়ো হচ্ছেন। সেখানে নেতাকর্মীদের রাত্রিযাপনের ব্যবস্থা করা হচ্ছে, খাবার রান্না হচ্ছে। এরপর দিন ও রাতের বিভিন্ন সময়ে পালা করে ১৫/২০ জনের নেতাকর্মীদের একেকটি দল মহাসড়কের বিভিন্ন এলাকায় মোটরসাইকেল শোডাউন করে পাহারা দিচ্ছেন। কখনো আবার জড়ো হওয়া সকল নেতাকর্মীও মহাসড়কে শোডাউন দিচ্ছেন।
জানতে চাইলে সীতাকুণ্ড উপজেলা যুবলীগের প্রচার সম্পাদক মো. সাইদুল ইসলাম বলেন, একটি গাড়ি যখন পুড়ে যায়, তখন যার গাড়ি তিনিই কেবল দুঃখটা অনুভব করেন। ২০১৪ সালে বিএনপি জামায়াত অসংখ্য যানবাহন পুড়িয়ে জানমালের ক্ষতি করেছে। প্রথম দিকে এর সমাধান পেতে সময় লাগলেও পরে আমরা মাঠে নামলে তা কমে যায়। এখন আমরা আগে থেকে সতর্ক। এখানে বন্দর থেকে মালবাহী গাড়িগুলো রাতের বেলা সড়ক অতিক্রম করে। তাই প্রশাসনের পাশাপাশি আমরাও সতর্ক আছি।
মিরসরাই উপজেলা যুবলীগের সহসভাপতি আশরাফুল কামাল মিঠু বলেন, দাবি আদায়ের জন্য আন্দোলনের নামে কোনো দলের কর্মী সমর্থকরা যাতে সাধারণ মানুষ, ব্যবসা বাণিজ্যের ক্ষতি করতে না পারে, সে জন্য আমরা সতর্ক আছি। মূল কাজটা প্রশাসন করছে। আমরা দলের নির্দেশমতো নিজেদের দায়িত্বটুকু পালন করছি। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক সারাদেশের অর্থনীতির চালিকাশক্তি। এখানে কোনো নাশকতা করার চেষ্টা করলে কিংবা ক্ষয়ক্ষতি করলে কঠোর জবাব দেওয়া হবে।
সরেজমিন দেখা গেছে, মহাসড়কের ডাকঘর ও বড় দারোগাহাট এলাকায় একাধিক অস্থায়ী ক্যাম্প করে অবস্থান নিয়েছেন স্থানীয় যুবলীগ, ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। দিনের বেলায় এসব ক্যাম্পগুলোতে স্থানীয় আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতৃবৃন্দ, সরকার সমর্থিত ইউপি চেয়ারম্যানসহ অন্যান্যরাও এসে নেতাকর্মীদের খোঁজ খবর নিচ্ছেন। জড়ো হওয়া নেতাকর্মীদের বেশিরভাগ ক্যাম্পেই রাত্রিযাপন করছেন।
এ ছাড়াও আগামী সংসদ নির্বাচনে সীতাকুণ্ড আসন থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশী এক নেতার নেতৃত্বে মহাসড়কের সীতাকুণ্ড অংশের কিছু এলাকায়, মিরসরাই উপজেলা আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগের আরও কয়েকজন নেতার নেতৃত্বেও মিরসরাই অংশে পাহারা দিতে দেখা গেছে।
চট্টগ্রাম উত্তর জেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাকিল হোসেন বলেন, ‘সিনিয়র নেতাদের নির্দেশমতো আমরা মিরসরাই সদর অংশে অবস্থান নিয়েছি। স্থানীয় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা এখানে সার্বক্ষণিক সতর্ক পাহারা দিচ্ছে। একটি গাড়িতেও যাতে কেউ আগুন দিতে না পারে সেটা খেয়াল রাখছি আমরা।’
মিরসরাই উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জাহাঙ্গীর কবির চৌধুরী বলেন, ‘নির্বাচনের আগে পর্যন্ত আমাদের জন্য কঠিন সময়। প্রশাসন এখানে খুব সতর্ক। আন্দোলনের নামে মহাসড়কে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টিকারীদের জবাব দিতে আমরা প্রস্তুত। এই সড়কে অপ্রীতিকর পরিস্থিতি দেশের অর্থনীতির জন্য ক্ষতিকর। প্রশাসনের পাশাপাশি যারা সড়ক পাহারার উদ্যোগ নিয়েছে তাদের আমরা সাধুবাদ জানাই। সবার সম্মিলিত চেষ্টায় এখানে এখনো বড়ো অঘটন হয়নি।’
বিডি প্রতিদিন/এমআই