খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) ভিসির পদত্যাগের এক দফা দাবিতে ধারাবাহিক আন্দোলনে অনড় রয়েছেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। ভিসির পদত্যাগের দাবিতে গতকাল তারা ক্যাম্পাসের বিভিন্ন স্থানে পোস্টারিং এবং বিক্ষোভ মিছিল করেছেন। এদিকে, শিক্ষার্থীদের এই কর্মসূচির প্রতিবাদ জানিয়ে ভিসির পক্ষে মৌন মিছিল, মানববন্ধন করেছেন শিক্ষক কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্তের প্রতি সম্মান জানিয়ে তারা শিক্ষার্থীদের আবাসিক হল ছেড়ে বাড়ি ফিরে যাওয়ার আহ্বান জানান। তবে শিক্ষার্থীরা চাপ প্রয়োগ করে শিক্ষকদের তাদের বিপক্ষে মুখোমুখি করা হচ্ছে বলে মন্তব্য করে ভিসির পদত্যাগ না করা পর্যন্ত আন্দোলন কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। পাল্টাপাল্টি এ কর্মসূচিতে কুয়েট পরিস্থিতি আরও জটিল হচ্ছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
জানা যায়, গত ১৮ ও ১৯ ফেব্রুয়ারি রাজনীতিমুক্ত ক্যাম্পাস ঘোষণার দাবিতে শিক্ষার্থীদের কর্মসূচিতে হামলার ঘটনা ঘটে। এতে জড়িতদের বহিষ্কারসহ ছয় দফা দাবি জানায় শিক্ষার্থীরা। ২৫ ফেব্রুয়ারি পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত একাডেমিক কার্যক্রম ও ছাত্র হল বন্ধ ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ। ১৪ এপ্রিল ঘটনায় জড়িত ৩৭ শিক্ষার্থীকে সাময়িক বহিষ্কার করে কুয়েট সিন্ডিকেট। কিন্তু তাদের নাম ও পরিচয় প্রকাশ না করায় শিক্ষার্থীদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। এ ছাড়া ছাত্র হল খুলে দেওয়ার দাবি জানানো হলেও তাতে সাড়া দেওয়া হয়নি। পরে ছয় দফা দাবি থেকে সরে এসে ভিসির পদত্যাগের এক দফা দাবি জানান শিক্ষার্থীরা।
গতকাল ক্যাম্পাসে সংবাদ সম্মেলনে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা বলেন, ক্যাম্পাসে হামলার ঘটনায় ভিসি শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছে। ফলে তার দায়িত্বে থাকার এখতিয়ার নেই। সংবাদ সম্মেলনে কুয়েটের ২২ শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে আদালতে দায়ের করা মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানানো হয়। ভিসি পদত্যাগ না করা পর্যন্ত তারা মাঠ ছাড়বেন না বলেও জানান। তারা যৌক্তিক দাবির আন্দোলনে সমর্থন দিতে শিক্ষকদের তাদের পাশে দাঁড়ানোরও আহ্বান জানান।
অপরদিকে ক্যাম্পাসের পরিস্থিতি নিয়ে গতকাল দুপুরে প্রশাসনিক ভবনের কনফারেন্স রুমে শিক্ষক-কর্মচারীদের সঙ্গে ভিসি প্রফেস ড. মুহাম্মদ মাছুদ জরুরি বৈঠক করেন। এরপর শিক্ষক-কর্মকর্তারা ক্যাম্পাসে ভিসির পদত্যাগের এক দফা দাবির বিপক্ষে মৌন মিছিল ও মানববন্ধন করেন। কুয়েট শিক্ষক সমিতির সভাপতি প্রফেসর ড. শাহিদুল ইসলাম বলেন, ছাত্র হলে তালা ভেঙে প্রবেশ করা বেআইনি হয়েছে। সিন্ডিকেটে যে ৩৭ শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার করা হয়েছে তাদের নিয়ে ছাত্রশৃঙ্খলা কমিটি আলাদাভাবে কথা বলবেন। তখন একজনও শাস্তির আওতায় নাও আসতে পারে। উল্লেখ্য, ছাত্ররাজনীতি বন্ধের দাবি নিয়ে বিরোধে ১৮ ও ১৯ ফেব্রুয়ারি কুয়েটে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটে। এতে শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হন। গত ১০ এপ্রিল কুয়েটের ২২ শিক্ষার্থীকে আসামি করে স্থানীয় এক বাসিন্দা আদালতে মামলা করেন। এসব কারণে ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীদের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছে।