২০১৮ সালে থেকে রংপুর ও নীলফামারীর সাতটি উপজেলায় পরিচালিত হচ্ছে জয়েন্ট অ্যাকশন ফর নিউট্রিশন আউটকাম বা জানো প্রকল্প। প্রকল্পটিতে অর্থায়ন করছে ইউরোপীয়ান ইউনিয়ন, সহ-অর্থায়নে আছে অস্ট্রিয়ান ডেভোলপমেন্ট কো-অপারেশন এবং যৌথভাবে বাস্তবায়ন করছে কেয়ার বাংলাদেশ, প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ ও ইকো স্যোশাল ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন (ইএসডিও)।
এই প্রকল্পের অধীনে কিশোরীদের স্বাস্থ্য, পুষ্টি বাগান, খাদ্য ও পুষ্টি উন্নয়ন, বাল্য বিবাহ রোধ, নারীর ক্ষমতায়ন, বয়োঃসন্ধিকালীন প্রজনন স্বাস্থ্য ও পরিস্কার-পরিছন্নতার মতো বিষয়ে বিদ্যালয় ও কমিউনিটি পর্যায়ে তথ্য পৌঁছে দেয়ার লক্ষ্যে শুরু হয় ব্যতিক্রমধর্মী এক নাট্যকর্মসূচি যাকে বলা হয় থিয়েটার ফর ডেভেলপমেন্ট বা টিএফডি বা উন্নয়নের জন্য নাটক।
এই কর্মসূচিতে বিদ্যালয় পর্যায়ে ১০ জন শিক্ষার্থী ও স্থানীয় কমিউনিটির পাঁচজন সদস্য এবং কমিউনিটি পর্যায়ে স্থানীয় ১৫ জন সদস্য নিয়ে গঠন করা হয়েছে একেকটি নাটকের দল। বিভিন্ন সচেতনতামূলক বার্তা দিয়ে তৈরি করা নাটক স্কুল ও কমিউনিটি পর্যায়ে উপস্থাপনের মাধ্যমে জনসচেতনতা তৈরির চেষ্টা করছে এই দলগুলো।
রংপুর ও নীলফামারী জেলার সাতটি উপজেলায় এমন ৬৫টি নাটকের দল গড়ে উঠেছে।
এসব নাট্যদলের নাটকগুলো সাধারণত বিদ্যালয় ও কমিউনিটি পর্যায়ে প্রদর্শিত হলেও, বিদ্যালয় থেকে ঝরেড় পড়া শিক্ষার্থী ও করোনাকালীন বিধিনিধের কারণে স্বশরীরে টিএফডি কার্যক্রমের সাথে যোগ করা হয় পিকো প্রজেক্টরের মাধ্যমে নাটক প্রদর্শন। এক্ষেত্রে নাটকের দৃশ্য ধারণ করে পিকো প্রজেক্টরের মাধ্যমে কমিউনিটি পর্যায়ে জানো প্রকল্পের মাঠ পর্যায়ের কর্মীদের সহায়তায় সেগুলো কমিউনিটি পর্যায়ে দেখানো হয়।
পিকো প্রজেক্টর এক ধরণের ছোট প্রজেক্টর যন্ত্র যার মাধ্যমে সহজেই যে কোন জায়গায় দেয়ালে সাদা কাপড় টাঙিয়ে খুব সহজেই ধারণকৃত নাটক বা তথ্যচিত্র প্রদর্শন করা যায়। করোনাকালীন সময় থেকে বিভিন্ন কমিউনিটি ও স্কুল পর্যায়ে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা, পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা, পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ, বয়ঃসন্ধিকালীন পরিবর্তন, প্রজনন স্বাস্থ্য, মাসিক ব্যবস্থাপনা, স্বপ্নদোষ, আবেগ, বাল্যবিবাহ, ঝড়ে পড়া শিক্ষার্থী রোধ করা ইত্যাদি বিষয়ে উন্নয়নমূলক নাটক ও তথ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়।
পিকো প্রজেক্টরের মাধ্যমে প্রচারিত এসব নাটক রংপুর ও নীলফামারী এলাকার কমিউনিটি পর্যায়ে কোন প্রভাব ফেলেছে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে পিকো প্রজেক্টরের মাধ্যমে নিয়মিত নাটক উপভোগ করা রংপুরের কাউনিয়া উপজেলার মোছাঃ আইভি বলেন, “এসব নাটকের ফলে আমরা সুষম খাবারের পাশাপাশি মা ও শিশুদের জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টিকর খাবার সম্পর্কে জানতে পারছি। কিশোর-কিশোরীরা বয়ঃসন্ধিকালীন পরিবর্তন সম্পর্কে জানতে পারায় তাদের সংকোচ ও ভয় দূর হচ্ছে। এই বয়সের সমস্যা ও তার প্রতিকারগুলো সবাই জানতে পারছি। নিজের পরিবর্তনের সাথে সাথে এখান থেকে পাওয়া তথ্যের মাধ্যমে নিজেদের আশেপাশে পরিবর্তনের চেষ্টা করছি”।
পিকো প্রজেক্টরের সাহায্যে প্রচারিত এই নাটকগুলো সমাজের দৃষ্টিভঙ্গী বদলাচ্ছে, জেন্ডার সমতাসহ বিভিন্ন বিষয়ে কিশোর-কিশোরীদের স্বাস্থ্য সচেতনতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। স্থানীয় মোঃ সাইফুল ইসলাম পিকো প্রজেক্টরে সচেতনতামূলক নাটক দেখার পর এখন নিজেই তার কন্যার জন্য স্যানিটারিপ্যাড কিনে নিয়ে আসেন, অথচ বিষয়টিকে তিনি লজ্জার মনে করতেন কিছু সময় আগেও।
কাউনিয়া উপজেলার হারাগাছির ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য মোছাঃ আদুরি মনে করেন, যেসব তথ্য স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে তৃণমূলে পৌঁছে দেয়া কঠিন হতো, পিকো প্রজেক্টরের মাধ্যমে সহজেই তা সম্ভব হচ্ছে, যা কমিউনিটির মানুষের মধ্যে ইতিবাচক পরিবর্তন নিয়ে আসছে। দীর্ঘস্থায়ী উন্নয়নের জন্য এবং ইতিবাচক ধারা বজায় রাখতে এধরণের কর্মসূচি আরো বৃদ্ধি করা প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি।
বিডি-প্রতিদিন/মামুন