কৃষির ব্যাপারে নারীদের মুখ্য ভূমিকা ঐতিহাসিকভাবে স্বীকৃত। মণিপুরি, খাসিয়া, চা-শ্রমিক ও অন্যান্য উপজাতি মহিলারা প্রত্যক্ষভাবে খেতখামারে জড়িত থাকেন। ধান খেত শাকসজি সব মাঠেই তাদের উপস্থিতি থাকে। কিন্তু সরকার থেকে কৃষিতে সাফল্যের জন্য কাউকে যখন পুরস্কৃত করা হয়- তখন শুধু পুরুষ কৃষককেই মূল্যায়ন করা হয়। কোনো মহিলা কৃষককে পুরস্কৃত করার নজির আছে কি না, জানা নেই। আর থাকবেই কেন এখন পর্যন্ত কৃষক বা চাষা শব্দের লিঙ্গ শব্দটি পর্যন্ত নেই।
সমাজ এখন ভুলে গেছে আদিকালে নারীরাই কৃষি খেতের আবিষ্কার করে মানুষকে যাযাবর জীবন যাপন থেকে মুক্ত করেছিল। আর আজ পর্যন্ত প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে খেতখামারে জড়িত থেকে তাদের অবদান অব্যাহত রেখেছে। কৃষকমাত্র জানেন নারীর সাহায্য ছাড়া ধান খেত বা শাকসবজি খেত করা মোটেই সম্ভব নয়। উপরন্তু পুরুষ কৃষকের চেয়ে মহিলা কৃষকের পরিশ্রম অনেক বেশি যদিও পারিশ্রমিক তারা কম পায় বা মূল্যায়ন করা প্রায় হয়ই না।
যেসব মহিলা চাষি পুরুষের সঙ্গে ধান খেতে মাঠে যান তারা শুধু ধান রোপণ করে বা ধান কেটেই দায়িত্বমুক্ত নন, তারা চাষার জন্য খাবার তৈরি করেন, গবাদিপশুর মলমূত্র, হাঁসমুরগির বিষ্টা, বাড়ির নালা-আবর্জনা গর্তে রেখে পচন সারের ব্যবস্থা করেন, যা কৃষির জন্য অত্যন্ত প্রয়োজন। আর যেসব সম্প্রদায়ের মহিলারা পুরুষের সঙ্গে মাঠে গিয়ে ধান, বোরো ফসল রোপণ করেন না বা ধান কাটেন না তাদের অবদানও কম নয়। তারা ভোররাতে উঠে কৃষকের খাবার তৈরি করে দেন। এ ছাড়া সকাল ও দুপুরে চাষার জন্য খাদ্য তৈরি করে মাঠে পাঠিয়ে থাকেন। এ ছাড়া তাদের অনেকেই আবার গবাদিপশুর খাবারও তৈরি করে রাখেন।
যদিও আমাদের গ্রামাঞ্চলের সাধারণ মহিলারা ধান খেতের মাঠে যান না- কিন্তু অন্যভাবে অবদান রাখেন অনেক বেশি। চাষিরা শুধু হালচাষ করে তাদের দায়িত্ব শেষ করে দেন। নারীরা, আলু, পিঁয়াজ, কপি ইত্যাদির বীজ বপন করে তাতে সময়মতো পানি, সার ইত্যাদি দিয়ে অত্যন্ত যত্নসহকারে রবিশস্যের মাঠ ভরপুর করেন। এ ছাড়া বর্ষার সময় লাউ, ঝিঙা, শিম, বরবটি, ঢ্যাঁড়শ প্রভৃতি বাড়ির আঙিনা ও পুকুর পাড়ে রোপণ করে বর্ষায় সঙ্গীর জোগান দিয়ে থাকেন। এতে পুরুষের তেমন অবদান রাখতে হয় না।
লেখক : প্রাবন্ধিক