কাল ১২ বছরে পদার্পণ করছে 'হৃদয়ে মাটি ও মানুষ'। এ অবস্থানে দাঁড়িয়ে শুরুর দিনগুলো মনে পড়ে?
খুব মনে পড়ে। আমি বিটিভিতে ফ্রিল্যান্সার ছিলাম। পুরো চ্যানেল ছিল বিনোদনকেন্দ্রিক। কৃষি এবং কৃষকের অনুষ্ঠান গুরুত্ব দেয়নি কেউ। নাক সিটকাত। কিন্তু আমি চেষ্টা করে গিয়েছি। সফল হয়েছি। অনুষ্ঠান শুরু করেছি। কিন্তু বিভিন্ন গ্রামে গিয়ে বিপাকে পড়তে হতো। কারণ তারা তখন ক্যামেরাকে ভয় পেত। অনেকে মনে করত স্টেনগান। কিন্তু মানুষকে নানাভাবে বুঝিয়ে অনুষ্ঠান করতাম। প্রত্যন্ত গ্রামে কষ্ট করে যেতাম। অনেক পরিশ্রম হয়েছে। কিন্তু সেই ঘামের মূল্য আজকের অবস্থান।
চ্যানেল কর্তৃপক্ষকে রাজি করালেন কীভাবে?
টেলিভিশন চ্যানেল চাইলে প্রতিটি ক্ষেত্রেই ভূমিকা রাখতে পারে। শিক্ষা, ক্রীড়া, কৃষি- যে কোনো ক্ষেত্রে। আমি ভেবেছি, টেলিভিশনে দেখাও যায় এবং কানেও শোনা যায়। কৃষকদের জন্য এটি ফলপ্রসূ হবে। কর্তৃপক্ষকেও সেভাবে বুঝিয়ে রাজি করানো হয়েছে। এরপর আমি অনুষ্ঠান শুরু করি। সত্যিই কাজ হয়েছিল। মানুষ আগে জানতই না মাছ চাষ করা যায়। তারা কেবল বুঝত ধান-পাট চাষ হয়, মাছ কীভাবে চাষ হবে। কিন্তু তাদের শেখানো হয়েছে। গ্রামের প্রতিটি বাড়িতে একটি করে পুকুর থাকে। কিন্তু কাজে লাগে না খুব একটা। এমনই এক পুকুর থেকে শুরু হয়েছিল 'হাকিম আলীর মৎস্য খামার'। অনুষ্ঠানে দেখিয়েছি, হাকিম আলী মাছ চাষ করে নিজেদের চাহিদা পূরণ করছে, পাড়া-পড়শিদের দিচ্ছে এবং মাছ বিক্রি করে প্রচুর রোজগার করছে। এরপরই দেশে মাছ চাষের জোয়ার শুরু হয়। একইভাবে পোলট্রি নিয়ে 'মিসেস জামানের মুরগির খামার' শিরোনামের আরও একটি অনুষ্ঠান করি। এরপর দেশজুড়ে পোলট্রি খামার শুরু হয়। এভাবেই এগিয়েছি আমরা।
বাংলাদেশের কৃষি বিপ্লবের ক্ষেত্রে আপনার অনুষ্ঠানের ভূমিকা রয়েছে। আমরা সুফল কীভাবে পাচ্ছি?
এখন আমরা খাদ্য উৎপাদন করে অবশিষ্ট অংশ বিদেশে রপ্তানি করছি। এর থেকে বড় সুফল আর কী আছে। আগে কৃষকরা এক জমিতে দু-একটি ফসল উৎপাদন করত, এখন তিন-চার রকমের ফসল ফলায়। শুধু ধান-পাটের চাষের মনোভাব থেকে সরিয়ে বিভিন্ন ধরনের ফসল ফলাতে কৃষককে উৎসাহী করা হয়েছে। এখন বাজেট তৈরির আগে কৃষকের বিষয়টিও মাথায় রাখতে হয়। বাংলাদেশের কৃষকরা নিজেদের অধিকার বুঝতে শিখেছে। আরও অনেক উদাহরণ আছে।
স্টুডেন্টদেরও আপনার অনুষ্ঠানের সঙ্গে সম্পৃক্ত করেছেন। কোন ভাবনা থেকে করেছেন?
বড় বড় বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টুডেন্টদের নিয়ে আমি অনুষ্ঠান করেছি। কারণ আজকের তরুণ জানে না কৃষদের শ্রমের মূল্য। তাদের সেই অনুভূতিটি বোঝানোর চেষ্টা করেছি। হয় তো সে বড় ইঞ্জিনিয়ার হবে কিংবা বড় কোনো সরকারি কর্মকর্তা। তখন যেন সে কৃষকের কথা ভাবে। কোনো উদ্যোগ নেওয়ার আগে কৃষকের বিষয়টি মাথায় রাখে। এ ছাড়া এ স্টুডেন্টরা যে খাবারটি মজা করে খাচ্ছে, এটা তার মুখে তুলে দিচ্ছেন কোনো না কোনো কৃষক। এই অনুভূতি তাদের খুব কাজে দেবে।
আর কৃষকের ঈদ আনন্দ?
ঈদের সময় সবাই নানা ধরনের অনুষ্ঠান নির্মাণ করে। কিন্তু গ্রামের মানুষের জন্য কোনো অনুষ্ঠান নেই। বিষয়টি আমাকে কষ্ট দিত। তাই ভাবলাম, কৃষক এবং গ্রামের মানুষদের নিয়ে অনুষ্ঠান নির্মাণের। এখন এ অনুষ্ঠান অনেক জনপ্রিয়। শুধু গ্রামের মানুষই দেখে বিনোদন পাচ্ছেন না, শহরের মানুষও দেখছেন।
কৃষকের বাজেট নিয়েও আপনি কাজ করেছেন।
করছি। করে যাচ্ছি। এ অনুষ্ঠানের কারণে এখন বাজেট করার আগে অর্থমন্ত্রী কৃষকের কথা মাথায় রাখেন- এটাই সফলতা। একজন কৃষক গ্রামের চেয়ারম্যান তো দূরের কথা মেম্বারের সামনে দাঁড়িয়ে সাহস নিয়ে কথা বলতে পারত না। এ অনুষ্ঠানে কৃষক মন্ত্রীদের সামনে দাঁড়িয়ে প্রশ্ন করছেন, অধিকারের কথা বলছেন।
ভবিষ্যৎ ভাবনা কী?
কৃষকের অধিকার সুনিশ্চিত করা। কৃষক ফসল ফলায়, সেই ফসল নানা হাতবদল হয়ে শহরে এসে অনেক দামে বিক্রি হচ্ছে। কিন্তু কৃষক ন্যায্য মূল্য পাচ্ছেন না। এ বিষয়টি নিয়ে কাজ করব, কৃষকদের একটা প্লাটফর্ম তৈরি করব- এমন অনেক ভাবনা আছে।
অনুষ্ঠানটি করে আপনার শান্তি কোথায়?
কৃষকরা আমাকে যেভাবে আপন করে নিয়েছেন। গ্রামে গেলে তারা যেভাবে আমাকে ভালোবাসেন। এর থেকে শান্তি আর কী আছে। নির্ভেজাল ভালোবাসা পাচ্ছি।
শোবিজ প্রতিবেদক