আজ একটি ইচ্ছে পূরণের গল্প বলব। এ ইচ্ছে পূরণের জন্য আমাকে অপেক্ষা করতে হয়েছে দীর্ঘদিন। গল্পটি বলার জন্য অনুপ্রাণিত যারা করেছেন, তাদের একজন Mohammad Shahidul Islam ভাই, আমার বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের বন্ধু এবং সাংবাদিক। টিপস দিতে বলেছেন, গ্র্যান্ড ক্যানিয়ান ভ্রমণের। কিন্তু গ্র্যান্ড ক্যানিয়ানের পাশাপাশি যে আরেকটি বিস্ময়কর অভিজ্ঞতা ও আনন্দ লাভের জন্য আমি দীর্ঘদিন অপেক্ষা করেছিলাম, সে কথা আমি কোনোদিন আমার পরিবারের লোকজনদেরও বলিনি। শুধু যেদিন যাবো, তার আগের দিন বলেছিলাম যে, কাল আমাদের "রুট ওয়ান" ভ্রমণের পরিকল্পনা রয়েছে।
আরিজোনার গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন, নেভাদার আলো ঝলমলে লাস ভেগাস আর ক্যালিফোর্নিয়ার হলিউড ভ্রমণের পরিকল্পনা ছিল আমাদের। কিন্তু রুট ওয়ানের কথা আমি কখনো স্ত্রী সন্তানদের বলিনি। কারণ এই সড়কটি সম্পর্কে তাদের কোনো ধারণা নেই, এবং সে ধারণা লাভের প্রয়োজনীয়তাও তাদের কখনো ছিল না। অথচ ষোল বছর আগে যুক্তরাষ্ট্রে এসে একটি ভিডিও ক্যাসেটে "ড্রাইভ টু রুট ওয়ান" দেখে ইচ্ছে জেগেছিল, একদিন আমি এই সড়ক ধরে গাড়ি চালাবো!
তিনটি স্থান ভ্রমণের জন্য আমরা বেছে নিয়েছিলাম লাস ভেগাস। নিউইয়র্ক থেকে লাস ভেগাস প্রায় ছয় ঘণ্টার উড়ো পথ। পূর্ব থেকে পশ্চিম উপকূল, আটলান্টিক থেকে প্রশান্ত। আর সময়ের ব্যবধানে তিন ঘণ্টা। নিউইয়র্কে যখন রাত ১২টা, লাস ভেগাসে তখন সন্ধ্যা ন'টা। লাস ভেগাসের ম্যাককারেন বিমানবন্দর থেকেই একটি গাড়ি ভাড়া করে নিয়েছি ছয় দিনের জন্য, টয়োটা র্যাভ ফোর। যত খুশি মাইলেজ উঠুক, ভাড়া একই! হোটেলে রাত পার করে পরদিন সকালে আমরা রওয়ানা দিলাম আরিজোনা গ্র্যান্ড ক্যানিয়নের উত্তর অংশের দিকে। পথে হুবার ড্যাম, আর ফায়ার ভ্যালি দেখে আমরা যখন গ্র্যান্ড ক্যানিয়নে পৌঁছলাম, তখন সূর্য পশ্চিম দিগন্তে।
গ্র্যাণ্ড ক্যানিয়নে পায়চারি করে রাতের খাবার সারলাম একটি মেক্সিকান হোটেলে। কাঁকড়ার স্যুপ আর ভাত-সবজির দাম চুকিয়ে তওবা করলাম আর কোনোদিন মেক্সিকান রেস্তোরাঁর নাম নেব না!
আরো প্রায় দেড়শ' মাইল গাড়ি চালিয়ে বিরান গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন ফেলে পৌঁছলাম "ফ্ল্যাগ পোস্টে"। রাত বারোটা নাগাদ হোটেল ম্যানেজার ঘুম থেকে উঠে চোখ মুছতে মুছতে আমাদের জায়গা কর দিল। অবশ্য বিমানের টিকেট থেকে শুরু করে গাড়িসহ ভ্রমণকালীন চারটি হোটেলে রুম ভাড়া প্রায় মাস খানেক আগে থেকেই চূড়ান্ত করে রেখেছিলেন আমার কন্যা ও স্ত্রী মিলে। একমাত্র "রুট ওয়ান" ভ্রমণ ছাড়া পুরো ভ্রমণ প্যাকেজ পরিকল্পনা করে রেখেছিল তারাই।
আমাদের ছয় দিন ভ্রমণের শেষ দিনটি ছিল খুবই তাড়াহুড়ার। সৌভাগ্য যে, হলিউডের "ওয়াক অফ ফেইম" এবং ইউনিভার্সেল স্টুডিও ভ্রমণে স্ত্রী-কন্যার অনাগ্রহ দেখে সেদিনটিই আমি বেছে নিয়েছি "রুট ওয়ান" ভ্রমণের। কয়েক বছর আগে ফ্লোরিডার অত্যাধুনিক ইউনিভার্সেল স্টুডিও দেখে এ যাত্রা তাদের আর আগ্রহ ছিল না।
রুট ওয়ান সম্পর্কে আমি কোনো বর্ণনা দেব না। শুধু এর সম্পর্কে এটুকুই বলি- এটি প্রশান্ত মহাসাগরের কোল ঘেঁষে ক্যালিফোর্নিয়ার উত্তর-দক্ষিণ পাড়ি দেয়া এক হাজার কিলোমিটারের বেশি কিছু দীর্ঘ একটি সড়ক। আমি এর সামান্য কিছু অংশ ভ্রমণ করেছি সময়ের তাড়নায়। গাড়ি থেকে মোবাইল হাতে নিয়ে কোনো ছবিও তুলিনি, পুলিশের টিকেট খাওয়ার ভয়ে। যে কয়টি ছবি তুলে দিলাম, সেগুলো ওয়াকি'র সৌজন্যে। ক্লান্ত হয়ে এক সময়ে প্রশান্ত মহাসাগরে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলাম। অনুভব করেছিলাম- মনের সাধকে গলা টিপে ধরতে চাচ্ছে দেহের সাধ্য। আপনারা যদি কখনো যুক্তরাষ্ট্র ভ্রমণ করেন, গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন আর রুট ওয়ান ভ্রমণ করতে ভুলবেন না। লিখতে গিয়ে অনুভব করলাম, উইন্ডোজ টেন এখনো বাংলা বান্ধব হয়নি!
(লেখকের ফেসবুক থেকে সংগৃহীত)
বিডি-প্রতিদিন/১৩ জুলাই, ২০১৭/মাহবুব