খুব করে ভেবে রেখেছি এবার কোনভাবেই ২৮শে জুলাই ভুলে থাকা যাবে না। রিহানকে সারপ্রাইজ দিতে হবে। কেক কাটতে হবে, জন্মদিনের গান শোনাতে হবে। বাসায় অতিথি এলো দেশ থেকে। আমরা সেইদিকে ব্যস্ত হয়ে রইলাম। মধ্যরাত অবধি গল্পে মশগুল থাকলাম। বেমালুম ভুলে গেলাম তারিখটি!
দু'দিন বাদে একরাতে আচ্মকা রিহান চোখ গোলাকৃতি করে উচ্চস্বরে বলে উঠলো, 'ওহ্ মাই গড ! আম্মু, ইউ মিস্ড মাই বার্থ ডে!' লজ্জিত আমি তাঁকে জড়িয়ে ধরি, আদর করি। বলি, 'বাপ, আমরা তোমায় অনেক ভালোবাসি, তুমি পৃথিবীর সেরা এবং ভালো সন্তান।' রিহান এখন সব বুঝে। খুশি হয়। অতঃপর হ্যাপি বার্থ ডে টু ইউ... গানটি শুনতে শুনতে ঘুমিয়ে পড়ে। অন্ধকারে হালকা নীল আলোয় ঘরময় ঘুরে বেড়ায় ভীষণ রকম ভারি এক দীর্ঘশ্বাস। কেননা, ছয় বছরের ছোট্ট জীবনে কোনদিন তাকে ঘিরে জন্মদিনের কেক কাটা হয়নি। বাড়িতে বৈশাখী পার্টি, ঈদ পার্টিসহ বছর জুড়ে নানান আয়োজন থাকলেও কোন এক অলিখিত কারণে রিহানের জন্মদিনকে ঘিরে কোন আয়োজন হয় না! জুলাই মাসে নিউইয়র্ক শহরের স্কুলগুলোয় গ্রীষ্মকালীন ছুটি থাকায় অন্যদের মতো স্কুলে জন্মদিন পালনের কোন সুযোগ নেই তার।
এই বিদেশ বিভূঁইয়ে 'বন্ধু থেকে পরিবার' হয়ে উঠা প্রিয় মানুষগুলোকে নিয়ে পূর্ব পরিকল্পিত অবকাশ যাপনে বেড়িয়ে পড়ি পরদিন। শহর থেকে দূরে, বহুদূরে সমুদ্রতীরে। আমাদের আটটি গাড়ি একে একে হাইওয়ে ধরে ছুটে চলে। অন্য শতশত গাড়ির ভিড়ে মিশে যায়। গন্তব্যে পৌঁছাই যখন, তখন মধ্য দুপুর। সমুদ্রের উত্তাল ঢেউয়ে গা ভিজিয়ে রিহানের সে-কি আনন্দ! সমুদ্রের গর্জন আর রিহানের উল্লাসধ্বনিতে একাকার হয়ে অনেকটা সময় ভালোলাগায় ডুবে থাকি।
বিকেলে বন্ধুদের সাথে নিয়ে সমুদ্রতীরে রিহান জীবনে প্রথমবারের মতো জন্মদিনের কেক কাটে, যেখানে লেখা ছিল, 'রিহান ইজ সেভেন।' কিছু সময়ের জন্যে সে হয়ে উঠে স্বপ্নের 'বার্থ ডে বয়।'
আমাদের সকলেরই অনেক আকাঙ্ক্ষা থাকে, স্বপ্ন থাকে, চাওয়া থাকে।
কিন্তু পাওয়াগুলো আমাদের নিয়ন্ত্রণে থাকে না অনেকক্ষেত্রেই, তাই না ?
ভালো থাকুন সকলে।
(লেখকের ফেসবুক থেকে সংগৃহীত)
বিডি প্রতিদিন/৩ আগস্ট, ২০১৭/ফারজানা