সোনারপুরের ছেলে অতনু মিস্ত্রি আত্মহত্যা করেছে কারণ এম এ পাশ করে সে এক বেসরকারী কোম্পানিতে হাউজকিপিং এর চাকরি ছাড়া আর কিছু পায়নি। হাউজ কিপিংকে অতনু 'ঘর মোছার চাকরি' বলতো। চাকরির আকাল চলছে পশ্চিমবঙ্গে। ডোমের চাকরিতেও এমএ পাশ পিএইচডি ডিগ্রিধারী ছেলেরা দরখাস্ত করছে।
অতনু মরলো কেন? হাউজ কিপিংয়ের চাকরিতে তার এত ঘৃণা কেন? কিছুই যখন জুটছিল না, যেটা জুটেছিল সেটাকেই তো লুফে নেওয়া উচিত ছিল। একটা চাকরিতে থেকে সেই চাকরির চেয়ে ভালো কোনও চাকরির খোঁজ করতে পারতো। ইউরোপ আমেরিকায় অতনুর চেয়ে ঢের শিক্ষিত ছেলে ঘর মুছছে, টয়লেট পরিস্কার করছে, রেস্তোরাঁয় বাসন মাজছে, রাস্তায় ফুল বিক্রি করছে।
আমার উচ্চশিক্ষিত বোন আমেরিকার শহরে তার সার্টিফিকেট আর পাসপোর্টে জন্মতারিখটি কী কারণে এক না হওয়ায় ছোট কাজ করে জীবন পার করতে বাধ্য হলো। হাউজ কিপিংয়ের কাজকে কি অতনু 'মেয়েদের কাজ' বলে ঘেন্নাটা বেশি করেছে? কাজটা বিদেশে নয়, দেশে, সে-কারণে?
চাকরির আকাল থাকলে ছোট চাকরিই করা উচিত। বেকার থাকার চেয়ে, অন্যের ঘাড়ে বসে খাওয়ার চেয়ে, ছোট চাকরি করা ভালো। মৃত্যুর চেয়ে তো অন্তত ওই চাকরি হাজার গুণে ভালো ছিল। প্রতিবছর বেকারত্বের জন্য ৪৫ হাজার লোক আত্মহত্যা করে ভারতবর্ষে । গরিব দেশ! দুর্নীতির দেশ!
সাহিত্যে পড়াশোনা করে ব্যাংকে চাকরি করতে হচ্ছে, অর্থনীতি পড়ে ফটোগ্রাফার হতে হচ্ছে... জীবনটাই ওলোটপালোট হয়ে যায়। স্বপ্ন পুরণ কী করে হবে! আমাদের বেঁচে থাকাটাই তো অনিশ্চয়তার দিকে পেন্ডুলামের মতো দুলছে!
আমি সব কিছুর বিনিময়ে জীবনের পক্ষে। কোনও কাজকে ছোট কাজ বলে না ভাবলে যে কোনও কাজেই আমরা হাত দিতে পারি। আজ আমার গৃহকর্মীটি আসেনি। আমি নিজেই ঘর মুছলাম, রান্না করলাম, বাসন ধুলাম। আমার কিন্তু একটুও মনে হয়নি এই কাজগুলো করে আমার সম্মান কিছু নষ্ট হয়েছে।
(লেখকের ফেসবুক থেকে সংগৃহীত)
বিডি প্রতিদিন/১০ আগস্ট, ২০১৭/ফারজানা