কেনিয়ার প্রেসিডেনশিয়াল ইলেকশনটা হয়েছিল গত মাসে। সেই নির্বাচনে কেনিয়াথা বিজয়ী হয়েছিলেন। ৫৪ শতাংশ আর ৪৫ শতাংশ ভোটের ব্যবধানে জয় পরাজয় নির্ধারিত হওয়া ফলাফলটি কেনিয়ার সুপ্রিম কোর্ট বাতিল ঘোষণা করেছে। আফ্রিকার ইতিহাসে এই প্রথম দেশের সর্বোচ্চ আদালত কোনো নির্বাচনকে অবৈধ ঘোষণা করে বাতিল করে দিল। আদালত নতুন করে নির্বাচন অনুষ্ঠানেরও নির্দেশ দিয়েছে। আদালত তার রায়ে বলেছেন, নির্বাচন কমিশন সংবিধানের বিধান অনুসারে নির্বাচন অনুষ্ঠান করতে পারেনি।
কোর্টের এই সিদ্ধান্তের চেয়েও আমার মনোযোগ ছিলো গত নির্বাচনে বিজয়ী হওয়া কেনিয়ার শাসক দলের প্রতিক্রিয়ার দিকে। প্রেসিডেন্ট কেনিয়াথা টেলিভিশনে সম্প্রচারিত ভাষণে নিজের প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলেছেন, আদালতের সিদ্ধান্তের সঙ্গে আমি একমত পোষণ করি না, তবে এই রায়কে আমি সম্মান জানাই। তিনি কেন আদালতের রায়ের সাথে দ্বিমত পোষণ করেন তার ব্যাখ্যাও দিয়েছেন টেলিভিশন ভাষণে, লাখো জনতা সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন, তারা তাদের পছন্দসই নেতৃত্ব বাছাই করেছেন। আর ৬ জন লোক বসে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, যে তারা জনগণের রায়ের বিপক্ষে যাবেন।
আদালতের রায়ে ক্ষমতাচূত হলেও কেনিয়াথা সত্যিকারের একজন রাষ্ট্র নায়কের মতোই আচরণ করেছেন। তিনি তার সমর্থকদের বলেছেন, যাই ঘটে থাক না কেন, তোমার যে প্রতিবেশি সে তোমার প্রতিবেশিই থাকবে, সে যে রাজনীতির সমর্থকই হউক না কেন, যে বর্ণ বা গোত্র বা ধর্মের হউক না কেন, তোমার প্রতিবেশি- তোমার প্রতিবেশিই।‘ আহা! দেশকে শান্তিপূর্ণ রাখা, জনগণের ক্ষোভকে প্রশমিত রাখা, শান্তিপূর্ণ পরিবেশ রাখার কি অমিয় বাণী তার।
কেনিয়ার নির্বাচনকে ঘিরে বরাবরই সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। আদালতের রায়ের পর বিরোধী দলের সমর্থকরা রাস্তায় উল্লাস করছে। আর ক্ষমতা হারানো কেনিয়াথা কী না শান্তি রক্ষাকেই সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিচ্ছেন। আদালতের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা নয়, বিচারপতিকে দেশত্যাগের হুমকি নয় বরং শান্তির বানী নিয়ে জনতার সামনে দাঁড়িয়েছেন কেনিয়াথা। আফ্রিকানরাও তা হলে বিশ্বকে সভ্যতা শেখাতে পারে, সভ্যতার উদাহরণ হতে পারে!
(লেখকের ফেসবুক পেইজ থেকে সংগৃহীত)
লেখক: টরন্টোর বাংলা পত্রিকা 'নতুনদেশ' এর প্রধান সম্পাদক
বিডি প্রতিদিন/এ মজুমদার